ইনসাইড আর্টিকেল

সৃষ্টি সুখের উল্লাসে


প্রকাশ: 01/11/2022


Thumbnail

একবার অনলাইনে শাড়ি কেনার সূত্রে আমার পরিচয় হয় আমাতুল বুশরার সাথে। প্রাণবন্ত, উচ্ছল সদ্য গ্রাজুয়েশন শেষ  করা এই তরুণী একাই একটি অনলাইন ভিত্তিক শাড়ির পেজের মালিক। তার শাড়ির পেজটির নাম 'ইশকাপন', রীতিমত জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। একদিন তাকে জিজ্ঞেস করলাম ইশকাপনের যাত্রা কিভাবে শুরু হল সে সম্পর্কে, সে জানালো দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় তার মনে হলো বাবা-মায়ের কাছে নিয়মিত হাতখরছের টাকা চাইতে তার বেশ মনে বাঁধছে, তাই নিজে কিছু করার লক্ষ্যে মাত্র ১০০০ টাকাকে পুঁজি করে ২০১৭ সালে তিনি গড়ে তুললেন ইশকাপন। শুরুতে কাঠের গয়নায় হাতে আঁকা নকশা দিয়ে শুরু করলেও এখন নিজেই নকশা করেন শাড়ি,কুর্তি,জামা । ধীরে ধীরে এর প্রশার বাড়লো, ক্রেতা জনপ্রিয়তা বাড়ল। এখন তার ইশকাপনের পেজটিতে ঢু মারলেই দেখা যায় ৪৩ হাজার অনুসারী এই পেজটিকেঅনুসরণ করছে।

ঢাকার একটি রেস্টুরেন্টের মালিক তারিকুল ইসলাম। জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ বিষয়ে স্নাতক শেষ করে এমবিএ করা এই তরুণ প্রতিষ্ঠা করেছেন "টারকিস ফিয়েস্তা" নামের একটি রেস্টুরেন্ট। তিনি শুধু রেস্টুরেন্টটিই দেন নি, তিনি কর্মসংস্থান জুগিয়েছেন আরও ৯ জন তরুণের। নিজে স্ব-নির্ভর হবেন বলে ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তার রেস্টুরেন্টটি। খাবারের প্রতি ভালোলাগা এবং স্বাস্থ্য সম্মত খাবার পৌছে দিতে তিনি সবসময় বদ্ধপরিকর। 

আমার আরেকজন পরিচিত, ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, উদ্যোক্তা আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ (ত্বহা)।  বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে সদ্য পাশ করা এই তরুণ উদ্যোক্তা গড়ে তুলেছেন একটি আইটি ফার্ম। মজার ব্যাপার হচ্ছা, তিনি ইতিমধ্যে ইন্টারনেটের আধুনিক দুনিয়ার থার্ড ওয়েবে লিপিবদ্ধ করেছেন পদ্মা সেতুর ডিজিটাল স্মারক বা পদ্মা সেতুর এনএফটি।

উপরের গল্পগুলোর দিকে তাকান, প্রত্যেকটা গল্পই একেকজন তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিদের, কিংবা বলতে পারি তরুণ  উদ্যোক্তাদের । উচ্ছল, প্রাণবন্ত এই তরুন- তরুনীরা প্রতিনিধিত্ব করছে দেশের আনাচে কানাচে লুকিয়ে থাকা হাজার হাজার স্বপ্নবাজ উদ্যমী তরুণ প্রজন্মকে। আমাদের তরুণ সমাজকে নিয়ে আমাদের সমাজের আবার কিন্তু আছে ভূরি ভূরি অভিযোগ । কিন্তু আমাদের এই  প্রজন্মইতো নতুন সৃষ্টির জয় গানও গাচ্ছে। বিজ্ঞান, শিল্প, সিনেমা কোথায় নেই তাদের সাফল্যমন্ডিত পদার্পন? এই তো কয়েকবছর আগে বাংলায় কথা বলা রোবট বানালো শাবিপ্রবির ৫ শিক্ষার্থী, আর তরুণ চলচিত্র পরিচালক আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ বানিয়ে ফেললেন "রেহানা মারিয়াম নূরের" মত চলচিত্র। প্রতিটি দশকে, প্রতিটি সমাজে সাফল্যের কেতন তো উড়ায় তরুণ প্রজন্মই। তাদের সাহস, মনোবল ও তারুণ্যের উদ্দ্যিপনাকে পুঁজি করে পৃথিবীতে আসে পরিবর্তন।

বাংলাদেশের প্রতিটি সেক্টরে জয় এবং সাফল্যমন্ডিত পদক এনে দিচ্ছি আমাদের তরুণ সমাজ। বিজ্ঞান, গণিত, প্রযুক্তি, খেলা সবখানেই তাদের সাফল্যে ভরা পদার্পন। শুধু উদ্যোক্তাই নয় চাকরি ক্ষেত্রেও আজকাল তরুণরা নতুন নতুন সম্ভাবনার দাঁড় খুলে দিচ্ছেন,রাখছেন মেধার সাক্ষর। তাদের সৃজনশীল চিন্তায় সৃষ্টি হচ্ছে নতুন ধারণা, নতুন নতুন কর্মসংস্থান। এই বিপুল সংখ্যক তরুণ সমাজকে আমাদের জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে হবে। তাদের সমাজের কল্যাণের চিন্তাধারাকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে। তাদের মেধা ও সৃজনশীলতার যথাযত মূল্যায়নও তাদের দিতে হবে। 

বাংলাদেশের তরুণ সমাজের হাতে এখন বাংলাদেশের ভবিষ্যতের সাফল্যের চাবিকাঠি। তাই আমাদের তরুন সমাজকে গড়ে তুলতে হবে সৃজনশীল, উদ্যমী করে। বাংলাদেশের তরুন সমাজকে দিতে হবে গুণগত শিক্ষা, নজর দিতে হবে কারিগরি দক্ষতার দিকে। বাংলাদেশে এখন অনেক তরুণই শুধুমাত্র চাকরির আশায় বসে থাকেনা। অনেকেই এখন উদ্যোক্তা হওয়ার দিকে ঝুকছেন, গড়ে তুলছেন নতুন নতুন কাজের জায়গা, সুযোগ করে দিচ্ছেন অনেকের কর্মসংস্থানের।  এটি আমাদের খুব আশার আলো দেখায় বৈকি । একটি দেশের তরুণ সমাজের হাত ধরে যদি স্ব-কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়, সেটি যে কোন দেশের জন্য অত্যন্ত মঙ্গলজনক একটি দিক। বিশেষ করে আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য সেটা আরও বেশি ভালো খবর। আমাদের দেশের জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশই হচ্ছে তরুণ প্রজন্ম , এই তরুণ প্রজন্মকে যদি যথাযথ প্রশিক্ষনের মাধ্যমে কাজে লাগানো যায়, দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত  হবে।


যেহেতু আমি লেখার শুরুতে উদ্যোক্তার গল্প দিয়ে শুরু করেছি, তাই আপাতত নাহয় তাদের প্রতিবন্ধকতার কথাই বলি। আমাদের দেশের অনেক তরুণই অভিযোগ করে এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা, বৈষম্যমূলক  নীতি তাদের  স্ব-নির্ভর বা উদ্যোক্তা হতে বাঁধা দেয়। তাদের এই অভিযোগটা  আমাদের শুনতে হবে । তরুন সমাজের উদ্যোক্তা  হওয়ার পেছনে বাঁধা সৃষ্টি  করে যেসকল প্রতিবন্ধকতা, তা দূর করতে হবে। গবেষণায় দেখা যায় সব ধরণের প্রতিবন্ধকাতার মধ্যে  সব থেকে বেশি সমস্যার সৃষ্টি করে যেটি তা হলো ঋন নেয়া এবং  উদ্যোক্তা হতে গিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্যে না পাওয়া। প্রথমত তরুণরা যারা উদ্যোক্তা হতে চান তারা অনেক ক্ষেত্রেই ব্যাংক থেকে প্রয়োজনীয় ঋণ সেবা পান না এবং অসহযোগীতার শিকার হন, ফলে শুরুতেই আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পরায় অনেকে ব্যর্থতা ভেবে নিজেকে গুটিয়ে নেয়। এছাড়া আরেকটি সমস্যা হলো প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়ার ঝামেলা। একজন উদ্যোক্তা হতে গেলে শুরুতেই জানতে হয় কিভাবে তার পেশাটাকে সঠিক ভাবে সাজাবেন কিংবা কিভাবে তিনি তার পেশাটি থেকে লাভ করতে পারবেন। কিন্তু সঠিক তথ্য না পাওয়া এবং কারিগটি জ্ঞান না থাকায় অনেকেই পিছিয়ে যান।

বাংলাদেশে  তরুণ সমাজকে জনশক্তিতে পরিণত করতে উন্নত শিক্ষা, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং দক্ষ কারিগড়ি জ্ঞান আহরনের সুব্যবস্থা করে দিতে হবে।  এছাড়া যে সকল তরুন-তরুণী স্বনির্ভর হতে চান, নিজেই কর্মক্ষেত্র তৈরি করতে চান তাদেরকে দিতে হবে সহজ শর্তে ঋণ। তারা যাতে প্রতিবন্ধকতায় না পরেন সেদিকে প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়া যুব উন্নয়নের লক্ষ্যে যে সকল প্রকল্প প্রস্তাবনা হয়, তার যথাযথ ফলাফল প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া এই তরুণ প্রজন্মকে আগ্রহী করে গড়ে তুলতে হবে নতুন সম্ভাবনা, নতুন সৃষ্টি,  নতুন সৃজনশীলতার প্রতি। তাহলেই আমরা পাবো তরুণ প্রজন্মের হাতে গড়া, সৃষ্টি সুখের উল্লাসে গাঁথা সাফল্যময় একটি সুন্দর বাংলাদেশ।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭