ইনসাইড আর্টিকেল

গণপরিবহনের দুষ্টচক্রে নারীর জীবন


প্রকাশ: 02/11/2022


Thumbnail

নারীরা এখন স্বাবলম্বী। দেশে ক্রমশ বাড়ছে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা। নারীর অগ্রযাত্রায় নারীরা স্বাবলম্বী হয়েছে বটে কিন্তু নানা বাঁধা বিপত্তি যেন পিছু ছাড়েনা তাদের। কর্মজীবী নারীদের কর্মস্থলে পৌঁছানোর বাহনও এখন নিরাপদ নয় তাদের জন্য। চলতি পথে নারীদের মুখোমুখি হতে হয় যৌন হয়রানির মত জঘন্য একটি বিষয়ের । নিরাপদ গণপরিবহন ব্যবস্থা এখন কর্মজীবী নারীর জীবনে আরেকটি ভয়ের নাম যেন গণপরিবহনের দুষ্টচক্রে নারীর জীবন বাঁধা পরে গেছে।

চলতি বছর ৬ আগস্ট  রাতে চলন্ত বাসে স্বামীকে মারধর করে গৃহবধূকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এর আগে বাসে বৃদ্ধকে গালিগালাজ করার প্রতিবাদ করায় একজন নারী উদ্যোক্তাকে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। এছাড়া চলন্ত বাসে ধর্ষণ, লাঞ্ছনা , শারীরিক নির্যাতনের খবরতো অহরহ দেখা যায় সংবাদ মধ্যমে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এসকল অপকর্মের শাস্তি হয় কম, বিচারের আওতায় আসেনা অনেক নির্যাতনের ঘটনা। আর যে সকল আইনের আওতায় আসে, তা যৎসামান্য।

গণপরিবহনে নারীর নিরাপত্তা নিয়ে সরকার কাজ করেছে আগেও, এখনো করছে। নারীর নিরাপত্তার স্বার্থে ১৬ অক্টোবর রাজধানীর ১০০টি বাসে বসানো হয়েছে সিসিটিভি (ক্লোজড সার্কিট) ক্যামেরাও। কিন্তু এসবের পরেও নারীদের কিন্তু হয়রানির শিকার হতে হয়। শুধু এর পেছনে দোষ বাস মালিক কিংবা ড্রাইভার হেলপারের উপর একাই বর্তায় না, বর্তায় আমাদের উপরেও। আমাদের গণপরিবহনে যখন কোন নারী যাত্রী লাঞ্ছনার  শিকার হন, কোন পুরুষ ব্যক্তিটি প্রতিবাদ করেননা কিংবা আওয়াজ উঠান না। 

২০২০ সালে ব্রাকের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়,  দেশে গণপরিবহনে যাতায়াতকালে ৯৪ শতাংশ নারী মৌখিক, শারীরিক বা অন্য নানান মাধ্যমে যৌন হয়রানির শিকার হন। খুব আশ্চর্য হলেও সত্যি সেই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ৪১ থেকে ৬০ বছরের পুরুষরাই নারীকে যৌন হয়রানি বেশি করেন, যার হার ৬৬ শতাংশ। ২০২০ সালের বেসরকারি সংগঠন অ্যাকশন এইডের আরেকটি জরিপে দেখা যায়, বাসে পুরুষ যাত্রীদের মাধ্যমে ৪২ শতাংশ ও গণপরিবহনের সাথে যুক্ত ব্যক্তির মাধ্যমে যৌন হয়রানির শিকার হন ৫৩ শতাংশ নারী যাত্রী। ২০২০ থেকে ২০২২ সালের এই ২ বছরে এই হার আরও বেড়েছে তা বলাই যায়। এছাড়া গত ৮ আগস্ট স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'সেভ দ্য রোড' এর প্রতিবেদনে দেখা যায় ২০১৭ থেকে ২০২২ সালে সড়ক-মহাসড়কে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৩৫৭ জন নারী, এদের মধ্যে হত্যা করা হয়েছে ২৭ জনকে।

গণপরিবহনে নারীর যৌন হয়রানির জন্যে দায়ী  আইনশৃঙ্খলার সুষ্ঠু প্রয়োগের অভাব। এছাড়া গণপরিবহনের সংখ্যা কম থাকায় নারীকে পুরুষদের সাথে ভীড়ের মধ্যে ঠেসাঠেসি করে বাসে উঠতে হয়। এই ভিড়কে কাজে লাগায় যৌননিপীড়ণ করা কাপুরুষেরা। এছাড়া আমাদের গণপরিবহনে যেসকল হেলপার এবং চালক নিয়োগ দেয়া হয় তাদের কোন ডেটাবেজ রাখা হয়না। ফলে এরা মনে করে যৌন নিগ্রহ করলে পার পেয়ে যাবে।  এছাড়া বাসে নারীদের জন্য বরাদ্দ সিটের সংখ্যা সীমিত, আবার অনেক সময় সেই সিটে বসে পরে পুরুষ যাত্রীরা। ফলে নারীদের দাঁড়াতে হয় বাসের ভিড়ে। আর এই ভিড়ে থেকে নারীরা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। 

গণপরিবহন তথা নারীর নিশ্চিন্তে চলাচলের সুযোগ পাওয়া যে কোন নারীর মানবাধিকার। বাসে চলাচল কিংবা রাস্তায় চলাচল, নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। গণপরিবহনে নারীকে যৌন হয়রানির শিকার থেকে রক্ষা করতে হলে আমাদের গণপরিবহনকে নারীবান্ধব করে তুলতে হবে। এছাড়া নারী চালক সৃষ্টি করতে হবে, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাসে নারী বাস চালক নিয়োগ দিতে হবে। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে বাসে যে সিসি টিভি লাগানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেটিকেও যথাযথভাবে ব্যবহার কর‍তে হবে। এছাড়া জরুরি সেবা নম্বরগুলো তৎপর থাকতে হবে যাতে  ভুক্তভোগী গাড়ির নম্বর এবং লোকেশন জানিয়ে সাহায্য পেতে পারে। সর্বোপরি আইনশৃঙ্খলা ররক্ষাকারী বাহিনীকে তৎপর হতে হবে এবং গণপরিবহনকে করতে হবে নারীবান্ধব। তবেই গণপরিবহনে যৌন নির্যাতন বন্ধ হবে।

নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে সারা বিশ্বে। নারীর প্রতি সহিংসতা ও যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গুরুত্বের সঙ্গে দেখে সারা বিশ্ব। বাংলাদেশে নারীরা সর্বক্ষেত্রেই যৌন হয়রানির শিকার হন। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করতে নারীর জন্য যেমন নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ থাকতে হয়, তেমনি নারীবান্ধব থাকতে হবে আমাদের গণপরিবহনও। তাই গণপরিবহনে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭