ইনসাইড গ্রাউন্ড

জয় থেকে হাতছোঁয়া দুরত্বে এসে হৃদয় ভাঙলো বাংলাদেশের


প্রকাশ: 02/11/2022


Thumbnail

ভারতের সাথে ম্যাচ মানে শুধু মাঠের লড়াই নয়। সমান তালে চলতে থাকে স্নায়ু ও উত্তেজনা। আর সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ-ভারতের ম্যাচও পেয়েছে ভিন্ন রূপ। যেখানে বাংলাদেশ শক্তি-সামর্থ্যে পিছিয়ে থাকলেও, দুই লড়াই করে বুক চিতিয়ে। এরকমই আরেকটি জমজমাট ম্যাচের সাক্ষী হলো অ্যাডিলেডের হাজার পঞ্চাশেক দর্শক। তবে আজও ভাগ্য দেবতা সহায় হয়নি বাংলাদেশের। শেষ পর্যন্ত লড়াই করেও বৃষ্টি আইনে ৫ রানের হার নিয়ে মাঠ ছড়তে হয় সাকিব আল হাসানের দলকে।

ভারতের দেয়া ১৮৫ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ভাল শুরু পায় বাংলাদেশ। লিটন দাসের ব্যাটে স্বপ্ন দেখতে থাকে বাংলাদেশ। তবে বিপদ হতে পারতো ম্যাচের শুরুতেই। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে আর্শদ্বীপের একটি আউট সুইংয়ে পরাস্ত হয়ে দিনেশ কার্তিকের হাতে ক্যাচ দেন লিটন। উল্লাসে মেতে উঠে ভারতীয় ক্রিকেটাররা। তবে আম্পায়ার মেরিস ইরাসমাস চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য থার্ড আম্পায়ারের কাছে পাঠান। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় কার্তিকের গ্লাভসে জমা পড়ার আগে বল মাটি স্পর্শ করে। পরের ওভারে আবারো লিটনের ক্যাচ ছাড়েন কার্তিক। এরপরই লিটন ঝলক।

শান্ত খোলস বন্দী থাকলেও, লিটনের সামনে সুবিধা করে উঠতে পারছিলেন না কোন বোলারই। মাত্র ২১ বলে অর্ধশতক তুলে নেন লিটন। যা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চলতি আসরে দ্বিতীয় দ্রুততম অর্ধশতক। তার ব্যাটে ভরে করে পাওয়ার প্লে'র ৬ ওভার শেষে কোন উইকেট না হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ৬০ রান তোলে বাংলাদেশ। লিটনের ঝড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন ভুবনেশ্বর-আর্শদ্বীপরা। তবে এরপর নতুন মোড় পায় ম্যাচটি। দলের সংগ্রহ যখন ৭ ওভারে বিনা উইকেটে ৬৬ তখন বৃষ্টিতে বন্ধ হয়ে যায় খেলা। ৭ ওভার শেষে বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য ছিলো ৪৯ রান। যেখানে ডার্ক ওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে টার্গেটের থেকে ১৭ রান এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।

তবে দ্বিতীয় দফায় খেলা শুরু হলে বিপাকে পড়ে টাইগাররা। বৃষ্টি শেষে খেলা শুরুর পর প্রথম ওভারেই পা পিছলে পড়ে রান আউটে কাঁটা পড়েন লিটন। লোকেশ রাহুলের সরাসরি থ্রোতে সাজঘরে ফেরেন তিনি। তার বিদায়ের পর মোহাম্মাদ শামির শিকারে পরিণত হন শান্ত। ভেজা আউটফিল্ড ও সুইংয়ে সুবিধা করে উঠতে পারছিলো না বাংলাদেশ। উল্টো চাপ সৃষ্টি করে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট তুলে নেয় ভারত। স্কোরবোর্ডে ১০০ রান তুলতেই প্যাভিলিয়নে ফেরেন ৪ ব্যাটসম্যান। একে একে আউট হন আফিফ ও সাকিব।

ক্রিজে এসেই ভুল শট খেলার খেসারত দেন ইয়াসির আলী। ফেরেন মাত্র ১ রানে। এতে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ। জয়ের সম্ভাবনা পরিণত হয় হারের শঙ্কায়। ইয়াসিরের বিদায়ের পর ব্যাট করতে নেমে মোসাদ্দেক ছয় হাঁকিয়ে আশা দেখালেও, ইনিংস বড় করতে পারেন নি তিনিও। তবে সোহান ও তাসকিন শেষ পর্যন্ত আশা জিঁইয়ে রাখেন। ১৫তম তাসকিনের এক ছয় ও এক চারে তখনো নিভু নিভু হয়ে জ্বলছিলো বাংলাদেশের আশার আলো। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিলো ২০ রান। সেখান থেকে ১৪ রান তুলতে পারে নুরুল হাসান সোহান। ৫ রানে হারে বাংলাদেশ।

এর আগে অ্যাডিলেড ওভালে টস জিতে ভারতকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় বাংলাদেশ। ইনিংসের শুরুতে খানিকটা অস্বস্তিতে থাকলে দ্রুতই তা কাটিয়ে উঠে ভারত। তাসকিনের বলে হাসান মাহমুদের হাতে ক্যাচ দিয়েও জীবন পান রোহিত শর্মা। তবে পরের ওভারে ভারতীয় অধিনায়কের উইকেট তুলে নেন হাসান মাহমুদ। তবে খুব বেশিক্ষণ সে মোমেন্টাম ধরে রাখতে পারেনি দল। এরপরই লোকেশ রাহুল ও ভিরাট কোহলির তান্ডবে দিশেহারা হয়ে পড়ে বাংলাদেশের বোলাররা।

দ্বিতীয় উইকেটে দুজনের ৬৭ রানের জুটিতে ম্যাচের চালকের আসনে বসে ভারত। আগের তিন ম্যাচে রান না পাওয়া রাহুল এদিন তান্ডব চালিয়েছেন বাংলাদেশর বোলারদের উপর। ৩১ বলে তুলে নেন অর্ধশতক। এর পরের বলে অবশ্য সাকিবের শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন তিনি। তবে একপ্রান্ত আগলে রানের চাকা সচল রাখেন ভিরাট কোহলি। ক্রিজে এসেই আগ্রাসী ব্যাটিং করেন ফর্মের তুঙ্গে থাকা সূর্যকুমার যাদব। প্রায় ১৯০ স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করতে থাকলে বোলারদের জন্য হুমকি হয়ে উঠেন এই মারকুটে ব্যাটসম্যান। খেলেন ১৬ বলে ৩০ রানের ইনিংস। তবে সূর্যকুমারকে নিজের শিকারে পরিণত করে লাগাম টানার চেষ্টা করে সাকিব আল হাসান। হার্দিক পান্ডিয়াকেও দ্রুত ফেরান হাসান মাহমুদ।

তবে একপ্রান্ত থেকে দলকে টেনে নিয়ে যান ভিরাট কোহলি। ৩৭ বলে তুলে নেন অর্ধশতক, যা আসরে তার তৃতীয় ফিফটি। সেই সাথে মাহেলা জয়াবর্ধনকে পেছনে ফেলে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রানের মালিক হওয়ার রেকর্ড গড়েন কোহলি। ১৭তম ওভারে রান আউটে ফাঁদে পড়ে বিদায় নেন দিনেশ কার্তিক। কোহলির দুর্দান্ত ইনিংসে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে রানের পাহাড় গড়ে ভারত। বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য দাড়ায় ১৮৫ রানের। ৬৪ রানে অপরাজিত থাকে কোহলি।

ম্যাচে বাংলাদেশের বোলাররা ছিলেন বিবর্ণ ও মলিন। রানের লাগাম টানা তো দূরের কথা, কে কার থেকে বাজে বল করবেন সেই প্রতিযোগিতায় মেতেছিলেন তারা। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন তাসকিন আহমেদ। শুরুর স্পেলে টানা ৪ ওভার বল করে দেন মাত্র ১৫ রান। তবে কোন উইকেট পাননি তিনি। সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নেন হাসান মাহমুদ। তবে এজন্য তাকে খরচ করতে হয় ৪৭ রান। আর বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচ৬ খেলতে নেমে ম্যাচে সবচেয়ে খরুচে বোলারের তকমা নিজের করে নেন শরিফুল ইসলাম। ৪ ওভারে ৫৭ রান দিয়ে থাকেন উইকেটশূন্য।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭