ইনসাইড ইকোনমি

রপ্তানি আয়ে স্বজনপ্রীতির ধাক্কা!


প্রকাশ: 03/11/2022


Thumbnail

বাংলাদেশের অর্থনীতিই দাঁড়িয়ে আছে দুই খাতের ওপর ভিত্তি করে। এর একটি হলো রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় এবং অন্যটি রপ্তানি আয়। কিন্তু দুই সূচকই এখন নিম্নগামী। গত আট মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স এসেছে অক্টোবর মাসে। গত মাসের প্রথম ২৭ দিনে দেশে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এসেছে মাত্র ১৩৬ কোটি মা‌র্কিন ডলার। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১০৩ টাকা ধ‌রে) এর পরিমাণ ১৪ হাজার ৮৮ কোটি টাকা। রেমিট্যান্স কম আসার মূল কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, বিদেশে যেসব প্রবাসী থাকেন, তাদের অনেকেই করোনার কারণে দেশে এসে আর যেতে পারেননি।

অন্যদিকে গত বছরের অক্টোবরের তুলনায় চলতি বছরের অক্টোবরে রপ্তানি আয় ৭.৮৫ শতাংশ কমেছে। চলতি বছরের অক্টোবরে ৪৩৫ কোটি ৬৬ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলারের পণ্য অন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি হয়েছে। যা ২০২১ সালের অক্টোবরে ছিল ৪৭২ কোটি ৭৫ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। সরকারে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ১২ দশমিক ৮৭ শতাংশ রপ্তানি আয় কমেছে ২০২২ সালের অক্টোবরে। এই মাসে রপ্তানি আয় খাতে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার। সেখানে রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৪৩৫ কোটি ৬৬ লাখ ২০ হাজার ইউএস ডলারের। অর্থাৎ ৬৪ কোটি ৩৩ লাখ ৮০ হাজার ডলার কম হয়েছে। যা শতাংশের হিসাবে প্রায় ১৩ শতাংশ। আর এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে ইউক্রেন-রাশিয়ার সংকট। আপাতদৃষ্টিতে এ সমস্ত যুক্তিকে সঠিক হলেও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সুশাসনের বড় অভাব রয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা। অন্যান্য খাতের মতো অর্থনীতিতে স্বজনপ্রীতি জেঁকে বসেছে বলে মনে করছেন তারা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রপ্তানি আয়ে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব দায়ী তো বটেই। কিন্তু এর চেয়েও বড় দায়ী অর্থনীতিতে আমাদের স্বজনপ্রীতি। সরকার রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনার ক্ষেত্রে তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি। শুধু তৈরি পোশাক নিয়েই সরকার ব্যস্ত। যত সুবিধা গার্মেন্ট মালিকদের, যত প্রণোদনা গার্মেন্টে। বহুমুখী রপ্তানির কথা বলা হলেও এর কোনো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। পোশাকখাতের বাইরে আর কোনো খাতই তেমন গুরুত্ব পায়নি। অথচ, আমাদের বহু খাত রয়েছে, যা দিয়ে বিশ্ববাজারে প্রবেশ করা সম্ভব।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ধাক্কায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি অস্বাভাবিক বেড়েছে। এ কারণে তারা পোশাক কেনা কমিয়ে দিয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের রপ্তানি আয় কমেছে। কারণ আামদের তৈরি পোশাকের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপকে ঘিরেই। এখন খাদ্যের পেছনেই অনেক বেশি খরচ করতে হচ্ছে তাদের। যে খাতে আমাদের রপ্তানি নগণ্য। অথচ বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ। কৃষিশিল্পে সেই অর্থে বিনিয়োগ করেনি সরকার। এগুলো ব্যক্তিপর্যায়ে উন্নয়ন ঘটেছে। খাদ্যের ওপর যে চ্যালেঞ্জ, তা কৃষিই সামাল দিচ্ছে। এ খাতে জিডিপি কম হতে পারে, কিন্তু এখানে ৫০ শতাংশ মানুষ নির্ভর করে। আমরা যদি আমাদের খাদ্য শিল্পকে রপ্তানি প্রক্রিয়া সংযুক্ত করতে পারতাম তাহলে এই সংকটময় সময়ে রপ্তানি আয়ের ধারা প্রবাহ ঠিক থাকতো। পরিস্থিতি সামাল দেয়া সহজতর হতো। এমন বাস্তবায়তায় দেশের রপ্তানি বহুমুখী করার পরামর্শ দিচ্ছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা। পাশাপাশি অর্থনীতিতে স্বজনপ্রীতিকে দূর করতে গুরুত্বারোপ করছেন তারা।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭