ড. হাছান মাহমুদ, একাধারে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী লীগের একজন ভাগ্যবান নেতা মন্ত্রিত্ব এবং কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃত্ব দুটিই পেয়েছেন তার মধ্যে ড. হাছান মাহমুদ অন্যতম। আওয়ামী লীগ সভাপতির অত্যন্ত বিশ্বস্ত, আস্থাভাজন ব্যক্তি হিসেবে তিনি পরিচিত। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হবার পর আস্তে আস্তে তিনি আওয়ামী লীগের মুখপাত্রে পরিণত হয়েছেন। বিএনপিসহ বিরোধী দলের বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনার জবাব দেওয়া, সরকারের বিভিন্ন অবস্থান ব্যাখ্যা করা এবং সরকারের কোনো মন্ত্রীদের ভুল-ভ্রান্তির ব্যাপারে সরকারের অবস্থান সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হওয়ার কারণে প্রচার-প্রচারণাতেও তিনি অনেক এগিয়ে আছেন। আওয়ামী লীগে এখন যে কয়েকজন নেতাকে সব সময় সরব এবং সোচ্চার দেখা যায় তাদের মধ্যে নিঃসন্দেহে ড. হাছান মাহমুদ অন্যতম। যেহেতু তিনি আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সেহেতু আগামী কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তার নামও আলোচিত হচ্ছে। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, যদি শেষ পর্যন্ত ড. হাছান মাহমুদ সাধারণ সম্পাদক হন তাহলে অবাক হবার কিছু নেই। কারণ, গত কয়েক বছরে এটি প্রমাণিত হয়েছে যে ড. হাছান মাহমুদ একজন ক্ষমতাবান মন্ত্রী। অন্যান্য মন্ত্রীদের মতো তিনি সচিবদের ক্রীড়নক নন এবং সচিবদের কথায় সবকিছু করার ব্যক্তিও নন।
বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, এর আগে তথ্যসচিব খাজা মিয়ার সরে যাওয়া, মকবুল হোসেনের আসা এবং মকবুল হোসেনের বাধ্যতামূলক অবসর, নতুন সচিব দেওয়ার পর তা আবার পরিবর্তন ইত্যাদি সবই হয়েছে ড. হাছান মাহমুদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর ভিত্তি করে। সরাসরি তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন এবং প্রধানমন্ত্রীর একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তি হিসেবে তিনি পরিচিত। আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনকে ঘিরে ড. হাছান মাহমুদ অত্যন্ত সরব রয়েছেন। প্রতিদিনই বিএনপিসহ বিরোধী দলের বিভিন্ন বক্তব্য সমালোচনা করছেন নিষ্ঠুরভাবে। অনেক ক্ষেত্রে এসব সমালোচনায় তিনি দলের সাধারণ সম্পাদকের চেয়েও ভাল করছেন বলে জানা গেছে। তাছাড়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে দলের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যের সঙ্গে ভিন্নমতের বক্তব্য দিয়ে তিনি শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়েছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, চট্টগ্রামে বিএনপির জনসভা নিয়ে ড. হাছান মাহমুদ বলেছিলেন যে, এই জনসভায় লোক হয়নি, মঞ্চ করা হয়েছে অনেক আগে এবং অনেকটা স্থানজুড়ে। যে কারণে সেখানে জনসমাগম বেশি হয়নি। কিন্তু তাঁর এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত হননি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি পাল্টা বক্তব্য দিয়ে বলেছেন যে, পলোগ্রাউন্ড মাঠে জনসমাগম হয়নি বলে যে বক্তব্য তা সঠিক নয়। কিন্তু দুদিন পরে ওবায়দুল কাদের তার অবস্থান পরিবর্তন করেন এবং তিনি বলেন যে পলোগ্রাউন্ড মাঠে বিএনপির জনসভায় আশানুরূপ লোক হয়নি।
আবার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী যখন দিনের বেলা বিদ্যুৎ বন্ধ রাখার ঘোষণা দিলেন তখন সরকারের মুখপাত্র হিসেবে হাছান মাহমুদের এ বক্তব্য খণ্ডন করে বললেন যে, এটি তার ব্যক্তিগত বক্তব্য, এটি সরকারের কোনো বক্তব্য নয়। একইভাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন যখন 'ভারতকে বলেছি শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে হবে' এই বক্তব্য নিয়ে যখন তীব্র সমালোচনা হইচই শুরু হলো তখন ড. হাছান মাহমুদ বললেন, এটি তার ব্যক্তিগত মতামত এবং তিনি আওয়ামী লীগের কোনো নেতা নন। এভাবে বিভিন্ন ইস্যুতে সরকার এবং দলের মুখপাত্রের হিসবে পরিণত হওয়া হাছান মাহমুদের নাম আলোচনায় আছে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে। শেষ পর্যন্ত তিনি যদি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন তাহলে অবাক হবার কিছু নাই। আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এই পদের জন্য তিনি একজন ডার্ক হর্স প্রার্থী।