ইনসাইড পলিটিক্স

বেগম জিয়াকে জেলে নেওয়ার হুমকি কেন দিলেন প্রধানমন্ত্রী?


প্রকাশ: 04/11/2022


Thumbnail

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল জেল হত্যা দিবসের ভাষণে বেগম খালেদা জিয়া সম্বন্ধে সুস্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বিএনপি যদি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে ঠিক আছে। কিন্তু যদি বাড়াবাড়ি করে, হুমকি দেয়, একটা লোকের ওপর হাত তোলে তাহলে তাদেরকে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। তিনি এটাও বলেন যে, বিএনপি যদি বাড়াবাড়ি করে তাহলে বেগম খালেদা জিয়াকে আবার জেলে পাঠানো হবে। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে এটিও বলেছেন যে, বেগম খালেদা জিয়া বয়স্ক মানুষ তার  ভাই, বোন, বোনের জামাই তার কাছে এসেছিল এবং তাদের অনুরোধে মানবিক কারণে বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাহী আদেশে প্রধানমন্ত্রী জামিন দিয়েছেন। আর যদি বিএনপি বাড়াবাড়ি করে তাহলে তাকে আবার জেলে পাঠিয়ে দেয়া হবে-প্রধানমন্ত্রীর এরকম সত্য এবং সরাসরি উচ্চারণ রাজনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। প্রধানমন্ত্রী কেন এ সময় বিএনপিকে বেগম খালেদা জিয়ার বিষয়ে এরকম হুমকি দিলেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, বিএনপিকে একটা সতর্ক বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী। সতর্ক বার্তার মূল তাৎপর্য হলো যে, বিএনপির ট্রাম্প কার্ড আসলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আছে। বিএনপি যদি বাড়াবাড়ি করে তাহলে পরে বেগম খালেদা জিয়ার পরিণতি কি হতে পারে সে সম্পর্কেও প্রধানমন্ত্রী একটি আভাস দিলেন। এটি একটি রাজনৈতিক কৌশল। এই রাজনৈতিক কৌশলের মাধ্যমে বিএনপিকে তিনি চাপে রাখার নীতি গ্রহণ করলেন। 

প্রধানমন্ত্রী খুব ভালো করেই জানেন যে, তারেক জিয়া এখন বিএনপির মূল নেতা এবং তারেক জিয়াই বিএনপিকে চালাচ্ছে। কিন্তু বিএনপিতে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা হলেন বেগম খালেদা জিয়া। কাজেই খালেদা জিয়াকে যখন জেলে নেওয়ার ভাবনার কথা বলা হলো তখন তা বিএনপির তৃণমূলের মধ্যে এক ধরনের প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে। তাদেরকে হতোদ্যম করবে, উদ্বিগ্ন করবে- এটাই সম্ভবত প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক কৌশল। প্রধানমন্ত্রী চেয়েছিলেন যে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করতে যেখানে  বিরোধীদল বাড়াবাড়ি করার ক্ষেত্রে দশবার চিন্তা ভাবনা করে। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের অন্য একটি তাৎপর্য আছে। বেগম খালেদা জিয়া দু বছর জেল খেটেছেন। তিনি আর জেলে যেতে চান না এটা স্পষ্ট। তার আত্মীয়-স্বজন পরিজনকে তিনি বারবার বলেছেন, যেকোনো মূল্যের বিনিময়ে তিনি বাইরে থাকতে চান। বেগম খালেদা জিয়ার সবচেয়ে বেশি ইচ্ছা বিদেশে যাওয়া। কিন্তু নানা হিসাব-নিকাশের কারণে সরকার তাকে বিদেশে যেতে দিতে আজি নয়। আর এ কারণে বেগম খালেদা জিয়া ফিরোজাতেই অবস্থান করছেন। বেগম জিয়ার পরিবারের সদস্যরা খুব ভালো মতোই জানেন যে, কারাগারে থাকার চেয়ে ফিরোজায় থাকা ঢের ভালো। 

কিছু দিন ধরেই বেগম খালেদা জিয়ার পরিবার সরকারের নীতিনির্ধারক মহলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন এবং বেগম খালেদা জিয়া যেন কারাগারের বাইরে থাকে সামনের দিনগুলোতে এবং তাকে যেন উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার সুযোগ করে দেয়া হয় সেজন্য চেষ্টা তদবির করছেন। এরকম বাস্তবতায় প্রধানমন্ত্রী হাটে হাড়ি ভেঙে দিলেন। প্রধানমন্ত্রী বুঝিয়ে দিলেন যে, বিএনপির প্রধান নেতা তার বাসভবনে আসছেন প্রধানমন্ত্রী অনুকম্পায়। কাজেই বিএনপিকে যে সব কিছু সতর্কভাবে করতে হবে এবং বিএনপি যেটিই করুক না কেন খালেদা জিয়ার অবস্থানের কথা চিন্তা করেই করতে হবে। সেই বার্তাটি প্রধানমন্ত্রী দিয়ে দিলেন। এই বার্তার ফলে বেগম জিয়ার পরিবারের সদস্যরা একটু সতর্ক হবেন। তারাও বুঝবেন যে, বিএনপি যদি বাড়াবাড়ি করে তাহলে বেগম খালেদা জিয়ার পরিণতি আবার খারাপ হবে। সেই খারাপ হওয়ার ঝুঁকি বেগম খালেদা জিয়ার পরিবার কখনোই নিবেন না। এই বার্তাটি তিনি জানান। আর তাই বিএনপির উচ্ছ্বসিত আন্দোলনে প্রধানমন্ত্রী একটু জল ঢাললেন মাত্র। সামনে তার হাতে হয়তো আরও ট্রাম্প কার্ড আছে। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭