গতকাল ছিল সোমবার। ওই দিন প্রধানমন্ত্রী ১০০টি সেতু উদ্বোধন করেছেন। সেই সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সেখানে তিনি বক্তব্য রাখেন। এই অনুষ্ঠান উদ্বোধন করে তিনি ছুটে যান টাঙ্গাইলে। সেখানে আওয়ামী লীগের সাত বছর পর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন এবং বিএনপির সমালোচনায় মুখর হন। এভাবেই ওবায়দুল কাদের এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এক বছর আগেও যিনি ঘর থেকে বের হতেন না, রীতিমত ঘরবন্দী হয়েছিলেন এবং লিখিত বক্তব্য ছাড়া কোন কিছুই দিতেন না সেই ওবায়দুল কাদের এখন ছুটে বেড়াচ্ছেন এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। কদিন আগে কুমিল্লায় গিয়েছিলেন সম্মেলন উদ্বোধন করতে। সেই কুমিল্লার সম্মেলন উদ্বোধন করে ঢাকায় এসে তিনি শান্তি সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। ওবায়দুল কাদের এখন সরব, এক মুহূর্তে তার অবসরের সময় নেই। আওয়ামী লীগের কাউন্সিল যতই ঘনিয়ে আসছে ততই ওবায়দুল কাদের দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন সর্বত্র।
অনেকেই মনে করছেন যে, আওয়ামী লীগ সভাপতি দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এবং হ্যাট্রিক তৃতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক হওয়ার জন্যই মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন ওবায়দুল কাদের। এখন অনেকটাই তিনি লাইমলাইটে এসেছেন এবং আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করার প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন তিনি। ওবায়দুল কাদেরের গত এক সপ্তাহের ব্যস্ততা দেখে অনেকেরই ধারণা হচ্ছে যে, তিনি সাধারণ সম্পাদক হবার জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন। তাঁর এই ছুটোছুটি, দৌড়ঝাঁপ ইত্যাদি তাঁর অসুস্থতাকে আড়াল করেছে। অনেকেই মাস ছয়েক আগেও বলছিলেন, ওবায়দুল কাদের শারীরিকভাবে অসুস্থ। সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের মত অবস্থা তার নেই। তিনি ঘরে বসেই শুধুমাত্র প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠ করেন। সেই সমস্ত সমালোচনাগুলোর জবাব দিচ্ছেন যেন ওবায়দুল কাদের।
অন্যদিকে ওবায়দুল কাদেরের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী জাহাঙ্গীর কবির নানক। জাহাঙ্গীর কবির নানক সবসময় রাজনীতিতে সক্রিয় এবং সরব ছিলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতির অত্যন্ত আস্থাভাজন ব্যক্তি হিসেবে তিনি এতদিন সংগঠনের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো দেখাশুনা করতেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক জটিল সমীকরণের সমাধানও করতেন। কিছুদিন আগেই আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশ ফরিদপুরের জেলা পরিষদ নির্বাচনের কাজে গিয়েছিলেন। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তিনি ছিলেন প্রধান সমন্বয়কারী। সিলেটের উপনির্বাচনেও তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট সমাধানের ক্ষেত্রেও শেখ হাসিনা তার ওপর আস্থা রেখেছিলেন। নীরবে-নিভৃতে কাজ করা জাহাঙ্গীর কবির নানকের অবস্থান অত্যন্ত সংহত কর্মীদের মধ্যে। কর্মীরা মনে করছেন যে, রাজনীতিতে এখন যে সংকটকাল চলছে সেই সংকটকালে একজন দক্ষ সংগঠক দরকার যেই সংগঠক কর্মীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবেন এবং সংকট সমাধানের জন্য সবকিছু উজাড় করে দিবেন। সেরকম একজন ব্যক্তি হিসেবে জাহাঙ্গীর কবির নানককে বিবেচনা করা হচ্ছে।
অনেকেই মনে করছেন যে, আওয়ামী লীগে এবারের সাধারণ সম্পাদকের লড়াইটা হবে সরাসরি ওবায়দুল কাদের বনাম জাহাঙ্গীর কবির নানকের লড়াই। এই লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত কে বিজয়ী হবেন, সেটাই দেখার বিষয়। তবে কাউন্সিল যত এগিয়ে আসছে ততই দুইজনের লড়াইটা ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে। তবে স্পষ্টত দুজনের কৌশল দুই রকমের। ওবায়দুল কাদের যেমন দেখাতে চাইছেন যে, তার কোনো বিকল্প নেই এবং তৃতীয়বারের মত সাধারণ সম্পাদক হওয়ার জন্য তিনি যোগ্য। তেমনি জাহাঙ্গীর কবির নানক শান্ত-সংহত হয়ে বুঝাতে চাচ্ছেন যে, শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত নিবেন সেই সিদ্ধান্তই তাঁর জন্য শিরোধার্য। শেষ পর্যন্ত কে সাধারণ সম্পাদক হয় নাকি এই দুইজনের বাইরে কেউ হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।