আগামী ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। এবারের কাউন্সিল অধিবেশনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নতুন কমিটি গঠন করবে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে নানারকম আলাপ-আলোচনা এবং উত্তাপ-উত্তেজনা চলছে। আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনকে ঘিরে নতুন ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। কাউন্সিলে এবার দল এবং সরকার আলাদা করার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হবে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সারা জীবনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরকার এবং দল আলাদা করার প্রক্রিয়া গ্রহণ করেছিলেন। এ কারণেই তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ রেখে মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করেছিলেন। আবার ১৯৭৪ সালে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করার জন্য তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি পদও ছেড়ে দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর এই নীতি অনুসরণ করছেন প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আর এ লক্ষ্যে তিনি সরকার এবং দল আলাদা করার একটি প্রক্রিয়া গ্রহণ করেছেন ২০০৯ সাল থেকে। এই প্রক্রিয়া ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে।
আওয়ামী লীগে এখন যারা মন্ত্রিত্বে এবং দলের নেতৃত্ব একসাথে পালন করছেন এরকম সংখ্যা হাতেগোনা কয়েকজন। আওয়ামী লীগ সভাপতি ছাড়া দুটি জায়গাতেই আছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক এবং শিক্ষামন্ত্রী ডাক্তার দীপু মনি এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। সামনের দিনগুলোতে অর্থাৎ আগামী কাউন্সিলে আওয়ামী লীগ পুরোপুরি দল এবং সরকার আলাদা করতে পারে বলে এটি একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ছাড়া অন্য কেউই দলের একাধিক পদে থাকতে পারবেন না এমন একটি ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের কাছ থেকে। এর ফলে আওয়ামী লীগ প্রথমবারের মতো একজন পূর্ণকালীন সাধারণ সম্পাদক পাচ্ছেন। যিনি শুধুমাত্র দলের নেতৃত্বে থাকবেন। তিনি কোনো মন্ত্রিত্বে থাকবেন না। এজন্য যদি কেউ সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেন তাকে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হবে বলেও বিভিন্ন মহল আভাস দিচ্ছেন। এই সিদ্ধান্তটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলছে, শুধুমাত্র দলের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক এ দু'জন মন্ত্রী থাকবেন। আর কেউই দলের নেতৃত্ব পেতে গেলে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হবে। এই বিবেচনা থেকেই যারা যুগ্মসাধারণ সম্পাদক সম্পাদক মন্ত্রিত্বে আছেন, যারা প্রেসিডিয়ামের সদস্য মন্ত্রী আছেন তাদেরকে যেকোনো একটি বেছে নিতে হবে বলে বিভিন্ন সূত্র জানাচ্ছে। আওয়ামী লীগের কাউন্সিলকে ঘিরে অনেকেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের জন্য নানা রকম চেষ্টা করছেন নিজেদের গ্রহণ যোগ্যতা প্রমাণের চেষ্টা করছেন। তাদেরকে সুস্পষ্টভাবে বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, যদি দলের নেতৃত্বে থাকতে চান তাহলে তাদেরকে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হবে। এরকম মন্ত্রিত্ব ছাড়তে অনেকেই আগ্রহী বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এদের মধ্যে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম দলের নেতৃত্বের ব্যাপারে আগ্রহী। এরকম আগ্রহী সংখ্যা আরও বেশি। শেষ পর্যন্ত সরকার এবং দল যদি আলাদা হয় তাহলে পরে আওয়ামী লীগের অনেকেই আছেন যারা মন্ত্রিত্বের চেয়ে দলের নেতৃত্বে বেশি আগ্রহী। আবার কেউ কেউ আছেন যে মন্ত্রিত্বই রাখতে চান। আগামী কাউন্সিলে বোঝা যাবে যে দল এবং মন্ত্রীদের মধ্যে কারা কোনটা বেছে নিতে পারেন।