ইনসাইড বাংলাদেশ

বাংলাদেশ নিয়ে ভারত নীরব কেন?


প্রকাশ: 08/11/2022


Thumbnail

বাংলাদেশ নিয়ে ভারত হঠাৎ করেই নীরবতা অবলম্বন করছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে যখন উত্তাপ, বাংলাদেশ নিয়ে যখন পশ্চিমা দেশগুলো নানারকম কথাবার্তা বলছে সেই সময়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে পাশ্ববর্তী বন্ধুরাষ্ট্র ভারত এক ধরনের মৌনব্রত অবলম্বন করছেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত নতুন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত প্রণয় কুমার ভার্মা বাংলাদেশে এসেছেন বেশ কিছুদিন ধরে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তিনি সরব হন নাই। তার কার্যক্রমও খুব একটা দৃশ্যমান নয়। বরং তিনি নিজেকে এখন পর্যন্ত গুটিয়ে রেখেছেন। ঠিক বিপরীত চিত্র ছিল এর আগে যখন ভারতের হাইকমিশনার বাংলাদেশে এসেছিলেন। বিক্রম দোরাইস্বামী বাংলাদেশে আসার পরই অত্যন্ত সরব ছিলেন। তাকে ব্যস্ত দেখা যাচ্ছে। তিনি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে বিভিন্ন রকম কথাবার্তা বলেছেন, মন্ত্রীদের সাথে তাকে নিয়মিত বৈঠকে দেখা গেছে। বিভিন্ন সামাজিক কূটনীতিক অনুষ্ঠানেও তার উপস্থিতি চোখে পড়েছে। সে দিক দিয়ে সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী অবস্থানে রয়েছেন প্রণয় কুমার ভার্মা। তিনি খুব একটা দৃশ্যমান নন। মন্ত্রীদের সঙ্গেও তার বৈঠকের খবর পাওয়া যাচ্ছে না। কেন তিনি এক ধরনের নীরবতা পালন করছেন? 

কূটনৈতিক মহল মনে  করেন যে, একটি দেশের রাষ্ট্রদূত যে দেশে যাচ্ছেন সেদেশে কি ধরনের কার্যক্রম করবেন সেটি সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে ওই দেশের পররাষ্ট্র নীতি এবং কৌশলের ওপর। প্রণয় কুমার ভার্মা যে বাংলাদেশে এসে এক ধরনের গুটিয়ে থাকা নীতি গ্রহণ করেছেন এটা ভারতের কূটনীতিক কৌশলেরই একটি অংশ। কূটনৈতিকভাবেই ভারত এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, তাদের রাষ্ট্রদূত খুব একটা পাদপ্রদীপে আসবেন না। এরকম অবস্থান ভারত কেন নিলো। এর বিশ্লেষণে কূটনীতিকরা নানারকম মত দিচ্ছেন। কেউ কেউ মনে করছেন যে, ভারত এখন বাংলাদেশের প্রকৃত অবস্থা যাচাই বাছাই করতে চাচ্ছে। বিভিন্ন পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশ নিয়ে যে ধরনের অবস্থান গুলো ব্যাখ্যা করছে সেই অবস্থানগুলো যাচাই বাছাই করছে। কৌশলগত অবস্থান চূড়ান্ত করেছে। এ কারণেই রাষ্ট্রদূত অনেকটা নীরব। আবার কেউ কেউ মনে করছে বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতের আগে যে আগ্রহ ছিল সেই আগ্রহের জায়গাটায় একটা ঘাটতি এসেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে যে অস্বস্তি এবং টানাপোড়েন গুলো আছে সেই প্রেক্ষিতে ভারত পুরো বিষয়টা বুঝতে চাইছে বাংলাদেশের পরিস্থিতি কি। 

তৃতীয়ত, কোনো কোনো কূটনৈতিক মহল মনে করছে যে, বাংলাদেশের গোঠা রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বৈশ্বিক পরিস্থিতি ভারত এখন যাচাই-বাছাই করে দেখছে। এজন্য চটজলদি যদি কোনো বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে রাষ্ট্রদূত এবং ভারতীয় দূতাবাস দূরে থাকছে। আবার কেউ কেউ মনে করছে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এখন দুই দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নির্ধারিত হচ্ছে। কাজেই রাষ্ট্রদূত এই বিষয়টি নিয়ে এখনই কোনো অবস্থান গ্রহণ করতে বা প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি না। আবার কেউ কেউ মনে করছে, ভারত বাংলাদেশের ব্যাপারে কৌশলগত অবস্থান কী হবে তা চূড়ান্ত করেনি। এ কারণে বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারত নীরবতা অবলম্বন করছে। কিন্তু ভারত সব সময় বাংলাদেশের ব্যাপারে একটি প্রভাবশালী দেশ এবং ভারত বাংলাদেশের রাজনীতি, নির্বাচন ইত্যাদি বিষয়ে সুস্পষ্ট ভাবে একটা ভূমিকা রাখে। এবং ভারতের ভূমিকার ওপর পশ্চিমা দেশগুলো অনেকখানি নির্ভরশীল। এরকম একটি বাস্তবতায় ভারতের এই নীরবতা কূটনীতিক অঙ্গনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন যে, একেকজন কূটনীতিকের একেক রকম বৈশিষ্ট্য থাকে। বিক্রম দোরাইস্বামী খুব সক্রিয় ছিলেন। তিনি কূটনীতিকসহ সবকিছুতে যোগদান করতেন এবং অনেক বেশি সক্রিয় ছিলেন। সে দিক থেকে প্রণয় কুমার ভার্মা অনেকটাই নীরবে কাজ করতে পছন্দ করেন। এই দুইজনের বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্যের কারণে ভারতের নীরবতা দৃশ্যমান হচ্ছে। কিন্তু আসলে ভারত নিরাপদ নয়। বাংলাদেশকে ঘিরে ভারতের যে কর্মকাণ্ড সেটির একই ধারা অব্যাহত রয়েছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭