প্রকাশ: 09/11/2022
বরগুনার তালতলীর আশার চরে শুরু হয়েছে শুঁটকি তৈরির কাজ। শীত শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই দেশের বিভিন্ন স্থানে মতো এ উপজেলায় প্রায় ১০ হাজার নারী পুরুষ শুঁটকি তৈরির জন্য ছোট ছোট ঘর বানাচ্ছে। জেলে পল্লীগুলোতে বাড়তে শুরু করে শুঁটকি ব্যবসায়ী, মালিক ও শ্রমিকের আনাগোনা।
উপজেলার আশারচর, সোনাকাটা, জয়ালভাঙ্গা চরের, শুঁটকি পল্লীতে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ৫ মাস ধরে চলে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ। এই সময় গুলোতে সরব থাকে শুঁটকি পল্লীর ক্রেতা, বিক্রেতা ও শ্রমিকরা।
প্রতিটি শুঁটকি পল্লী হতে প্রতি সপ্তাহে ১০০ থেকে ১৫০ মণ মাছ রপ্তানি হচ্ছে। নদী থেকে কাঁচা মাছ শুঁটকি পল্লীতে নিয়ে আসার পর নারী শ্রমিকেরা তা পরিষ্কার করে। এরপর মাছগুলো পরিস্কার পানিতে ধুয়ে বানায় (মাচা) শুকানো হয়। তিন-চার দিনের রোদে মাছগুলো শুকিয়ে শক্ত হয়। প্রস্তুত থাকে ক্রেতা পাইকারি ব্যবসায়ীরা। এই চরের শুঁটকি চট্টগ্রাম, সৈয়দপুর, খুলনা ও জামালপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান হচ্ছে।এখানকার শুঁটকিতে কোনো প্রকার কীটনাশক বা অতিরিক্ত লবণ দেওয়া হয়না বলে এই এলাকার শুঁটকির চাহিদা একটু বেশিই।
বর্তমানে প্রতি কেজি ছুরি মাছের শুঁটকি ৭’শ থেকে ৮’শ টাকা, রূপচান্দা ১ হাজার থেকে দেড় হাজার, মাইট্যা ৮০০ থেকে এক হাজার, লইট্যা ৬’শ থেকে ৭’শ,চিংড়ি ৭’শ থেকে ৯’শ টাকা এবং অন্যান্য ছোট মাছের শুঁটকি ৩০০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শনিবার (৫ নভেম্বর) আশারচর, শুঁটকি পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ৬ শতাধিক জেলে ও মালিক শুঁটকি উৎপাদন করার লক্ষে ছোট ছোট ৩২টি ঘর তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে। কেউ কেউ ঘর উঠিয়ে শুঁটকি তৈরিতে মাছ রোদে শুকাচ্ছে। একের পর এক মাছ ধরা ট্রলার সমুদ্র থেকে আসছে। প্রায় ২৫ প্রজাতির মাছের শুঁটকি তৈরি করা হয় এখানে। এর মধ্যে রূপচাঁদা, ছুরি, কোরাল, সুরমা, লইট্টা, পোপা অন্যতম। এছাড়াও চিংড়ি, ছুড়ি, ভোল, মেদসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের রয়েছে চাহিদা। যে সব জেলেদের ঘর উঠানো হয়েছে তারা মাছ গুলো বাঁশের মাচায় ও মাধুরে করে রোদে শুকাতে শুরু করেছে।
এদিকে বর্ষার কয়েকমাস ছাড়া বছরের বাকি সময়ে মোটামুটি হলেও সবচেয়ে বেশি শুঁটকি তৈরি হয় শীতে। আর এ শুঁটকি পল্লীতে কাজ করে জীবিকা চালে হাজারো শ্রমিক। এছাড়াও এখানকার শুঁটকি মাছের গুড়ি সারাদেশে পোল্ট্রি ফার্ম ও ফিস ফিডের জন্য সরবরাহ হয়ে থাকে। এদিকে দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতিসহ ডিজেলের দাম বেশি থাকায় চিন্তায় পড়ছে এখানকার ব্যবসায়ীদের মাঝে। কিন্তু এ ব্যবসায় বেশি লাভ থাকলেও এ বছর হয়তো লাভ বেশি একটা হবে না বলে জানান জেলেরা।
স্থানীয় একাধিক জেলে ও ব্যবয়ারী বলেন, প্রাধান সড়ক থেকে শুটকি পল্লী পযন্ত এক কিলোমিটার রাস্তাটা খুবই খারাপ। এই রাস্তাটা দিলে আমরা শুটকি ট্রাকে লোড দিতে পারবো। এতে পরিবহন খরচ কম হবে। এছাড়াও টয়লেট ও বিশুদ্ধ পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। টিউবওয়েল ও টয়লেট নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাই। ব্যবসার আরো বলেন আমরা প্রতিবছর এখান থেকে অনেক টাকা রাজস্ব দেই সরকারকে।
শুঁটকি ব্যবসায়ী মো. রুপচাঁন হাওলাদার জানান,শুঁটকি তৈরির করার আগেই এখান থেকে সরকারিভাবে এসব শুঁটকি বিদেশে রফতানির উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক। কারণ দেশ থেকে সরকারিভাবে শুঁটকি রফতানির কোনো ব্যবস্থা নাই। তিনি আরও বলেন ছোট বেলা থেকেই এই ব্যবসার সাথে জড়িত অন্য পেশায় যাইতে পারে না তাই বাজারে সকল কিছুর দাম বেশি থাকায় এ বছর ব্যবসা কেমন হবে এ নিয়ে চিন্তায় আছি।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাহবুবুল আলম বলেন, সরকারিভাবে শুঁটকি রফতানির জন্য মৎস্য অধিদফতরে সুপারিশ পাঠানো হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম সাদিক তানভীর বলেন, এডিপি বা অন্য কোন প্রকল্প থেকে রাস্তাটি দেওয়ার জন্য চেষ্টা করা হবে। এছাড়া বিশুদ্ধ পানির জন্য টিউবওয়েল ও টয়লেটের ব্যবস্থা করা হবে।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭