ইনসাইড আর্টিকেল

নুর হোসেনের গণতন্ত্র কি মুক্তি পেয়েছে?


প্রকাশ: 10/11/2022


Thumbnail

১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ বন্দুকের নল ঠেকিয়ে সামরিক বাহিনীর সহায়তায় ক্ষমতায় বসেছিলেন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। এরপর ১৯৮৬ সালের ৭ মে এক প্রহসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ব্যাপক ভোট ডাকাতির মাধ্যমে এরশাদের জাতীয় পার্টি ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩ আসনে জয় পায়। এরপর বিরোধীদলীয় জোটগুলো একযোগে আন্দোলনের ডাক দেয়। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দেশে তৈরি হয় টানটান উত্তেজনা। এরশাদ কঠোর অবস্থান নিয়েও মানুষকে ঘরে রাখতে পারেননি। পুলিশ-বিডিআর নামিয়ে, যানবাহন চলাচল বন্ধ করিয়েও সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতি ঠেকানো যায়নি। স্বৈরশাসক এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে বুকে-পিঠে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’, ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ স্লোগান লিখে মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন নূর হোসেন। বিক্ষুব্ধ মানুষের সমাবেশ-মিছিল বন্ধ করতে গুলি বর্ষণ করতেও দ্বিধা করেনি এরশাদের লেলিয়ে দেওয়া সশস্ত্র পোশাকি বাহিনী। মিছিলটি গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে পৌঁছালে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। নূর হোসেনের রক্তে রঞ্জিত হয় রাজপথ।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনারও নজরে পড়েছিলেন নূর হোসেন। একটি হুড খোলা গাড়িতে করে সমাবেশে উপস্থিত হয়েছিলেন তিনি। গাড়িতে চড়ে জনতার মধ্য দিয়ে চলার সময় তার চোখ গিয়েছিল নূর হোসেনের গায়ে ওই লেখা স্লোগানের দিকে। অজানা আশঙ্কায় কেঁপে উঠেছিল তার মন। নূর হোসেনকে কাছে ডেকে তাকে সতর্ক করেছিলেন। ‘ওরা টোকাই কেন’ বইতে শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘মনে পড়ে আমি তাকে বলেছিলাম, জামাটা গায়ে দাও, একি সর্বনাশ করছ, ওরা যে তোমাকে গুলি করে মারবে।’ নূর হোসেন মাথাটা এগিয়ে দিল আমার কাছে। বলল, ‘জান দিয়া দিমু আপা, আপনে শুধু মাথায় হাত বুলাইয়্যা দেন।’ শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘আমার হাত ধরে বেশ কিছুক্ষণ নূর হোসেন গাড়ির পাশে হাঁটল। তারপর কখন যেন জনতার স্রোতে হারিয়ে গেল।’

নূর হোসেনের দেশের মানুষকে প্রবলভাবে আলোড়িত করেছিল। তাঁর রক্ত বৃথা যায়নি। নূর হোসেন হয়ে ওঠেন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আন্দোলনের প্রতীক। অবশেষে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতন ঘটে। নূর হোসেনের দাবি ছিল ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’। স্বৈরাচারের তো নিপাত হয়েছে, কিন্তু গণতন্ত্র কি সত্যি মুক্তি পেয়েছে?

গণতন্ত্রের মুক্তির আকাঙ্ক্ষা থেকেই নূর হোসেন তাঁর জীবন দিয়েছিলেন। কিন্তু নূর হোসেন যে গণতন্ত্র চেয়েছিলেন, সেই গণতন্ত্র কি অর্জিত হয়েছে? দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সেই গণতন্ত্র এখনো পুরোপুরি শঙ্কামুক্ত নয়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় লড়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সেই গণতন্ত্র নিয়ে এখনও নানা রকম ষড়যন্ত্র চলছে। স্বাধীনতাবিরোধী নানামুখী অপশক্তি দেশের গণতন্ত্রকে উপড়ে ফেলতে দেশে-বিদেশে বসে ষড়যন্ত্র করে চলেছে। বিভিন্ন সময় তারা ক্ষমতায় থেকে এবং ক্ষমতার বাহিরে থেকেও সারা দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে, সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দিয়েছে। আর এভাবে গণতন্ত্রকে হত্যার এক ষড়যন্ত্র করে চলছে উগ্রবাদী ধর্মান্ধ মৌলবাদীরা। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে বারবার চক্রান্ত হয়েছে এবং সেই চক্রান্ত এখনও অব্যাহত আছে, যা শুরু হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্যদিয়ে। তাই নূর হোসেনের আত্মদানের প্রায় ৪০ বছর পর প্রশ্ন ওঠেছে, নুর হোসেনের গণতন্ত্র কি মুক্তি পেয়েছে?

নূর হোসেনের ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’, ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ যে আকাঙ্ক্ষা, সেই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য এবং গণতন্ত্র রক্ষার জন্য আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব রয়েছে। তখন গণতন্ত্রের শত্রু ছিল চিহ্নিত স্বৈরাচার। কিন্তু এখন গণতন্ত্রের মধ্যে অনেক ঘাপটি মারা শত্রু আছে, যারা দেশ থেকে গণতন্ত্রকে ধূলিসাৎ করতে সদা তৎপর থাকে, যারা নির্বাচন বানচাল করতে চায়, যারা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে একটি নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে, যারা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে বিদেশে নানা অপপ্রচার চালায়, যারা আবারো সামরিক শক্তিকে ক্ষমতায় বসাতে চায়, যারা সুশীল সমাজের নামে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে চায়, যারা জনগণের রায়ে নয় বন্দুকের নলে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে চায়।

বাংলাদেশে যখনই গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হয় তখনই সামনে আসে ১৯৭৫ সালে ১০ নভেম্বরের চিত্র, ভেসে ওঠে নূর হোসেনের ছবি। নূর হোসেন বুকে-পিঠে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’, ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ লিখে যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন, যে আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করেছিলেন সেই আকাঙ্ক্ষা দেশের সমস্ত গণতান্ত্রিক মানুষের। তাই দেশের মানুষ সবসময় চায় গণতন্ত্রের মুক্তি।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭