ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

মধ্যবর্তী নির্বাচনে এগিয়ে ট্রাম্প; কি আছে বাইডেনের ভবিষ্যতে?


প্রকাশ: 10/11/2022


Thumbnail

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ভোট গ্রহণের পালা শেষ হয়েছে। এখন চলছে গণনা। সব শেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, কংগ্রেসের দুই কক্ষেই এগিয়ে রয়েছে ট্রাম্পের রিপাবলিকান দল। হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভে রিপাবলিকান দল পেয়েছে ২০৭ আসন ও বাইডেনের দল ডেমোক্রেট পেয়েছে ১৮৮। অন্যদিকে সিনেটে রিপাবলিকানরা পেয়েছে ৪৯ আসন ও ডেমোক্রেটরা পেয়েছে ৪৮ আসন। খবর সিএনএনের।

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করবেন ৫৩৫ জন আইন প্রণেতা, যারা কংগ্রেস সদস্য হিসেবে পরিচিত। কংগ্রেসের দুটি কক্ষ- সেনেট এবং হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস। আইন তৈরির জন্য কংগ্রেসের এই দুটি কক্ষ এক সঙ্গে কাজ করে।

সেনেট হচ্ছে কংগ্রেসের ১০০ সদস্যের উচ্চ কক্ষ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্য, তাদের আকার যাই হোক, দুজন করে সেনেট সদস্য নির্বাচিত করে। সেনেটররা নির্বাচিত হন ছয় বছর মেয়াদের জন্য। প্রতি দু'বছর পর পর সেনেটের এক তৃতীয়াংশ আসনের জন্য নির্বাচন হয়।

হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস বা প্রতিনিধি পরিষদে (যাকে সংক্ষেপে হাউজ বলে ডাকা হয়) সদস্য আছেন ৪৩৫ জন। প্রত্যেক সদস্য তাদের অঙ্গরাজ্যের একটি নির্দিষ্ট ডিস্ট্রিক্ট বা জেলার প্রতিনিধিত্ব করেন। তারা দু'বছর মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হন। কাজেই দু'বছর পর পর হাউজের সবগুলো আসনের জন্যই নির্বাচন হয়। 

এবারের নির্বাচন কেন গুরুত্বপূর্ণ?

বর্তমানে কংগ্রেসের সব সদস্য হয় ডেমোক্রেটিক পার্টি বা রিপাবলিকান পার্টি থেকে আসা। ডেমোক্রেটরা এখন কংগ্রেসের দুটি কক্ষেরই নিয়ন্ত্রণে, তবে তাদের এই সংখ্যাগরিষ্ঠতা খুবই অল্প ভোটে।

সে কারণে এ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পক্ষে কাজ করতে তেমন কোন অসুবিধা হয়নি।

কিন্তু মধ্যবর্তী নির্বাচনে যদি রিপাবলিকান পার্টি কংগ্রেসের কোন একটি কক্ষে বা উভয় কক্ষেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে যায়, তখন তারা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের যে কোন পরিকল্পনা বানচাল করে দিতে পারবেন।

নভেম্বরে যে নির্বাচন হবে, সেখানে রিপাবলিকানরা হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হলে তাদের পাঁচটি অতিরিক্ত আসন জিততে হবে।

সেনেটে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আরও তীব্র। বর্তমানে ১০০ সদস্যের সেনেটে দুই দলেরই ৫০ জন করে সদস্য।

কিন্তু ডেমোক্রেটরা সেনেট নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, কারণ কোন ইস্যুতে পক্ষে-বিপক্ষে সমান সমান ভোট পড়লে তখন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস হারজিত নির্ধারণের জন্য তার ভোট প্রয়োগ করতে পারেন।

মূলত এবারে মধ্যবর্তী নির্বাচনে দুই দলের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে। পার্লামেন্টের প্রতিনিধি ছাড়াও এদিন বেশ কয়েকটি রাজ্যে গভর্নরেরও নির্বাচন হয়েছে। ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, পেনসিলভেনিয়া, অ্যারিজোনার মতো রাজ্যগুলোতে ভোটগ্রহণ শেষ হয়ে গেছে।

বুথ ফেরত জরিপ অনুযায়ী, এবারের ভোটে মূলত দুইটি বিষয় সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। এক, মূল্যস্ফীতি ও দুই, গর্ভপাত। ভোটের জরিপ বলছে, রিপাবলিকানদের দিকে মানুষের ঝোঁক বেশি। ফলে মার্কিন কংগ্রেসে ডেমোক্রেটদের একাধিপত্য এবার কমতে পারে।

বেশ কিছু রাজ্যে ভোটের হার উল্লেখযোগ্য। বলা হচ্ছে, ডেমোক্রেটরা খুব শান্তিতে নেই। এবারের ভোটে তাদের ফলাফল ভালো হবে না বলে আগেই অনেকে ধরে নিয়েছেন। হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভ এবং সিনেট দুই কক্ষেই এবার রিপাবলিকানদের একাধিপত্য হবে বলে মনে করছেন অনেকে। বুথ ফেরত সমীক্ষাও সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। যদি তাই হয়, তাহলে আগামী কয়েকবছর প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পক্ষে কাজ করা আরও কঠিন হয়ে পড়বে।

এতদিন কংগ্রেসে বিরাট সমর্থন পেয়েছেন বাইডেন। উচ্চকক্ষ সেনেটে গিয়ে তাকে বার বার হোঁটচ খেতে হয়েছে। কংগ্রেসে রিপাবলিকানের সংখ্যা বেড়ে গেলে নিম্নকক্ষেও বাইডেনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হবে।

তবে এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ভোটার সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষ করে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের তুলনায় এই সংখ্যা দ্বিগুণ। তবে এই ভোটার সংখ্যা পূর্বের প্রজন্মের তুলনায় আবার কম।

প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জন্য এসবের মানে কী দাঁড়াবে

কংগ্রেসে এখনই যে কোন বিল পাশ করাতে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সব ডেমোক্রেট আইন প্রণেতার সমর্থন দরকার হয়। অনেক সময় সেটাও যথেষ্ট হয় না।

রক্ষণশীল ডেমোক্রেটরা এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব ঠেকিয়ে দিয়েছে। এর একটি ছিল প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ট্রিলিয়ন ডলারের 'বিল্ড ব্যাক বেটার' প্রকল্প, যেটিতে নানা রকম সামাজিক কর্মসূচী এবং জলবায়ুর পরিবর্তন প্রতিরোধে কার্যক্রম গ্রহণের কথা ছিল।

মধ্যবর্তী নির্বাচনে যদি ডেমোক্রেটরা বিপুল পরাজয়ের মুখে পড়ে, তখন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পক্ষে নতুন আইন পাশ করানো আরও কঠিন হয়ে পড়বে।

কয়েকজন রিপাবলিকান এরই মধ্যে বাইডেন প্রশাসনের কাজ-কর্ম গভীরভাবে তদন্ত করে দেখার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে।

এর মানে হচ্ছে, আফগানিস্তান থেকে তড়িঘড়ি করে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য প্রত্যাহার নিয়ে যে বিপর্যয় তৈরি হয়েছিল, সেই ঘটনা থেকে শুরু করে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেনের নানা কথিত কেলেঙ্কারি নিয়েও তদন্ত শুরু হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল ভবনে ৬ই জানুয়ারি যে হামলা হয়েছিল, তারপর থেকে দুই দলের মধ্যে সম্পর্কের নাটকীয় অবনতি ঘটে।

জনস্বাস্থ্য বিষয়ক নানা ব্যবস্থা, মাস্ক পরার বিধি- এসব নিয়ে ডেমোক্রেট এবং রিপাবলিকানদের মধ্যে বিভেদ আরও বেড়েছে।

ওয়াশিংটনে ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ যদি ডেমোক্রেট এবং রিপাবলিকানদের মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে যায়, তখন সেখানে আরও শত্রুতা এবং নাটকীয়তা তৈরি হতে পারে।

তাহলে এরপর কী ঘটবে?

মধ্যবর্তী নির্বাচন যখন শেষ হয়ে যাবে, তখন সবার নজর ঘুরে যাবে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দিকে।

এটা হয়তো ২০২০ সালের লড়াইয়ের পুনরাবৃত্তি হতে পারে, কারণ প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প- দুজনেই বলছেন তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ভাবছেন। ২০২৪ সালে কি আবারও ট্রাম্প এবং বাইডেনের মধ্যেই লড়াই হবে? যদিও নতুন কিছু প্রার্থীও এবার মাঠে নামবেন বলে আশা করা হচ্ছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭