ইনসাইড আর্টিকেল

বিজ্ঞাপন ও নারীর পন্যরূপী উপস্থাপন


প্রকাশ: 11/11/2022


Thumbnail

সভ্যতার প্রথম থেকেই জেন্ডার বৈষম্য সমাজের চিরচেনা একটি রূপ। প্রাথমিক ভাবে নারী-পুরুষের ভিন্ন শারীরিক গঠন এর কারণ হলেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে নারীবিদ্বেষী মনোভাবের অতিমারির কারণে নারীকে পুরুষের পরিষেবিকা হিসেবে উপস্থাপন করা হয় বেশিরিভাগ জায়গায়। এমনকি নারীকে তার  শারীরিক গঠনের দিক থেকে আলাদা করার বিষয়টি ভিজ্যুয়াল মিডিয়া তেও বেশ লক্ষনীয়।  

কর্পোরেট মিডিয়ার এই প্রতিযোগিতাপূর্ণ সময়ে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিজ্ঞাপন এর বাজার। আধুনিকতার এই  যুগে যেখানে দূর হওয়ার কথা জেন্ডার বৈষম্য, সেখানে আজ ও  নারীদেরকে উপস্থাপন করা হচ্ছে পণ্যের মত। ইলেকট্রনিক মিডিয়া হোক কিংবা প্রিন্ট মিডিয়া, দুই দলই নারীর সমতা নিয়ে বুলি আওড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত; কিন্তু আবার তারাই নারীকে নেতিবাচকভাবে বিজ্ঞাপনে উপস্থাপন করছে। যার ফলাফল বর্তমানে সমাজে নারীর রূপান্তর ঘটেছে মুনাফাদায়ী পণ্যে। 

প্রায় তিন দশক ধরে জেন্ডার বৈষম্য নিয়ে যে তাত্ত্বিক, চিন্তাবিদ ও নারীবাদীরা কাজ করেছেন, তারা বলে থাকেন নারীর সক্ষমতা গড়ে তোলা এবং নীতিনির্ধারণে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার কাজটি গুরুত্বের সঙ্গে এগিয়ে নিতে হবে। এ বিষয়গুলো যখন কম-বেশি সবদিকে এগিয়ে চলছে, তখনই কর্পোরেট মিডিয়ায় নারীকে বৈষম্যের নতুন মোড়কে বাজারজাত করতে অনেকটুকুই সফল হয়েছে। প্রতিটি সেকেন্ডে, প্রতিটি আয়োজনে নারীকে বিক্রি করছে তারা মুনাফার বাজারে! সাবান, তেল কিংবা রঙ ফর্সাকারী ক্রিম - এসবের বিজ্ঞাপনে নারীকে এমনভাবে দেখানো হয়, যেন নারীকেই হতে হবে রূপে-গুণে অপরূপা। কেন পুরুষ নয়? কেন পুরুষকে অপরূপ হতে হবে না? যে অল্প কিছু সুগন্ধীর কিংবা ক্রিমের বিজ্ঞাপনে পুরুষদের মডেল বানানো হচ্ছে সেখানেও দেখা যাচ্ছে নারীদের আবেদনময়ী ও খোলামেলা উপস্থাপন। বাংলাদেশের বিলবোর্ডগুলোতেও দেখা যায় মেয়েদের আধিপত্য। লবণ থেকে শুরু করে ঘরের রান্না, ডিটারজেন্ট কিংবা গুড়া মসলার বিজ্ঞাপন অথবা সাজগোজের সামগ্রী সবকিছুতেই নারী মডেলের আধিক্য। কিন্তু রডের বিজ্ঞাপন, সিমেন্টের বিজ্ঞাপন কিংবা টুথ পেস্টের বিজ্ঞাপনে ডাক্তারের ভূমিকায়  দেখা যায় না কোনো মেয়েকে; সেখানে দেখা যায় পুরুষ মডেলের ছবি। এগুলো থেকে সমাজের মানুষের কাছে কী বার্তা পৌঁছায়? মেয়েদের জগৎ শুধু ঘরেই সীমাবদ্ধ আর পুরুষের জগৎ  স্থাপত্যশিল্প কিংবা ডাক্তারি পেশার মত সৃজনশীল, মননশীল কাজে! কিন্তু কেন এই বৈষম্য? বিশেষজ্ঞ কিংবা প্রকৌশলী নারী থাকলে কি পণ্য বিক্রি হবে না? নাকি বাংলাদেশে কোনো নারী বিশেষজ্ঞ বা প্রকৌশলী নেই? পাশ্চাত্য অপসংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কালে কালে নারীকে এইভাবে উপস্থাপন করছে এ দেশের গণমাধ্যমগুলো। সেই সাথে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করছে পুরুষ আধিপত্য। 

ফলে আমরা প্রতিনিয়তই বিজ্ঞাপনে দেখছি, 'অর্ধাঙ্গের' মন জয় করার জন্য নারীরা সয়াবিন তেল দিয়ে রান্না করছে। আবার, নারিকেল তেল দিয়ে দীর্ঘ কালো চুল নিয়ে 'অর্ধাঙ্গের' সামনে যাচ্ছে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে। অর্থাৎ প্রতিবারই আমাদেরকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে – নারী, এগুলো কেবল তোমার কাজ। ওয়াশিং পাউডার, হারপিক কিংবা সাবানের বিজ্ঞাপনের মধ্যে কাপড় ধোয়া, টয়লেট পরিষ্কার করা - সবখানে নারীকেই উপস্থাপন করা হচ্ছে। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে স্রোতের বিপরীতে বইতে দেখা যাচ্ছে কিছু কর্পোরেট বিজ্ঞাপনকে, যেমন- জুই এর নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের বিজ্ঞাপন কিংবা রাঁধুনি গুড়া মসলার বিজ্ঞাপনে পুরুষের ভিন্নধর্মী উপস্থাপন যেখানে পুরুষকে রান্না করতে দেখা গিয়েছে। যদিও ভিন্নধর্মী এইসকল কাজের পরিমাণ কিঞ্চিৎ ই চোখে পড়ে। নারীর জন্ম কেবল ঘরের কাজ করার জন্য নয়; মননশীলতা কিংবা সৃজনশীলতার মধ্যেও নারীকে ফুটিয়ে তুলতে হবে প্রত্যেকটি মিডিয়াতে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭