এডিটর’স মাইন্ড

রাষ্ট্রপতি হবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ড. মসিউর?


প্রকাশ: 11/11/2022


Thumbnail

আইএমএফের প্রতিনিধিদল দুই সপ্তাহ সফর করে গেলেন বাংলাদেশে। এই প্রতিনিধিদল ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকে ঋণ মঞ্জুরের ব্যাপারে সম্মতিও প্রদান করেছে। আগামী ৪২ মাসে বাংলাদেশ ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার পেতে যাচ্ছে। এই পুরো প্রক্রিয়ার সময় অর্থমন্ত্রীকে যেমন আড়ালে দেখা গেছে, তেমনি আড়ালে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। অর্থমন্ত্রীর আড়ালে থাকার কারণ ভিন্ন। তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকার কারণে ঋণ প্রাপ্তি সংক্রান্ত বৈঠকগুলোতে সবকিছু করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। শেষ দিন যখন আনুষ্ঠানিকভাবে ঋণ প্রাপ্তির ঘোষণা দেয়া হয় সেদিন অর্থমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলেন এবং সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রেখেছেন। কিন্তু এই পুরো প্রক্রিয়ার সময় ড. মসিউর রহমানকে দেখা যায়নি। প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা বর্তমানে দৃশ্যমান নন। দুই একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে তাকে দেখা যাচ্ছে কিন্তু তার বাইরে তিনি বিভিন্ন অর্থনৈতিক সংকট, ডলার সঙ্কট, জ্বালানি সংকট ইত্যাদি বিষয় নিয়ে খুব একটা কথাবার্তা বলছেন না। তার এই নীরবতা নিয়ে নানারকম প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু একাধিক সূত্র বলছে যে, ড. মসিউর রহমান আগামী রাষ্ট্রপতি এবং রাষ্ট্রপতি হওয়ার জন্য তিনি প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত নতুন রাষ্ট্রপতি কে হবে, সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ভাবে কিছু বলা হয়নি।

বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে আগামী এপ্রিলে। সংবিধান অনুযায়ী আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। যেহেতু সংসদ সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন, সেহেতু আওয়ামী লীগ যাকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনোনীত করবেন তিনি রাষ্ট্রপতি হবেন সেটি মোটামুটি নিশ্চিত। রাষ্ট্রপতি হিসেবে একাধিক ব্যক্তির নাম আলোচনায় রয়েছে তবে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে যে, এই সমস্ত আলোচনায় ড. মসিউর রহমানই এগিয়ে আছেন। কোনো বড় ধরনের ঘটনা না ঘটলে ড. মসিউর রহমানই আগামী রাষ্ট্রপতি হতে পারেন বলে একাধিক সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে নিশ্চিত করেছে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী এবং তিনি কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন সে সম্পর্কে এখন পর্যন্ত কোনো চূড়ান্ত আভাস পাওয়া যায়নি। তবে কিছু কিছু ঘটনায় ড. মসিউর রহমানের রাষ্ট্রপতি হবার সংকেত পাওয়া যাচ্ছে বলেই বিশ্লেষকরা মনে করেন। যেমনটি সাম্প্রতিক সময়ে তিনি সবকিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। যেহেতু রাষ্ট্রপতি একটি সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদ এবং নিরপেক্ষ একটি প্রতিষ্ঠান। সে কারণেই ড. মসিউর রহমান সবকিছু থেকে নিজেকে আড়াল করেছেন বলে জানা যাচ্ছে।

বিভিন্ন মহল মনে করছেন যে, হয়তো প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই তিনি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। অন্য সময় ড. মসিউর রহমানকে এই সমস্ত সংকটকালীন সময়ে অত্যন্ত সপ্রতিভ এবং সক্রিয় দেখা গেছে। যেমন- পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন নিয়ে যখন সমস্যা হয়েছিল সেই সময়ে ড. মসিউর রহমান সরব ছিলেন। পদ্মা সেতুতে ঋণ সহায়তা নিয়ে বিশ্বব্যাংক, এডিবি এবং জাইকার চুক্তির ক্ষেত্রেও ড. মসিউর রহমান ভূমিকা পালন করেছিলেন। ২০০৯ সাল থেকে মসিউর রহমান প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে টানা দায়িত্ব পালন করছেন। আর সে কারণেই যেকোনো অর্থনৈতিক বিষয়ে তার মতামত এবং উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এবার তিনি নিজেকে সবকিছু থেকে গুটিয়ে রেখেছেন। কেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে অনেকেই মনে করছেন যে, তিনি হয়তো রাষ্ট্রপতি হবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ড. মসিউর রহমান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে কাজ করার বিরল সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করেন তখন তিনি গুরুত্বপূর্ণ সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এলে ড. মসিউর রহমান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেখান থেকে এখন পর্যন্ত তিনি অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে ড. মসিউর রহমান ছাড়াও আরও বেশকিছু নাম রয়েছে। তবে মসিউর রহমানই রাষ্ট্রপতির দৌড়ে এখন পর্যন্ত এগিয়ে রয়েছেন বলে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র মনে করছেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭