ইনসাইড ইকোনমি

আইএমএফের ঋণ যেভাবে সংকট সমাধানের পথ খুলে দিলো


প্রকাশ: 12/11/2022


Thumbnail

বাংলাদেশ আইএমএফের কাছ থেকে ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা পাচ্ছে। এই ঋণ সহায়তা কেবল ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার প্রাপ্তি নয়, বরং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক গতি পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন। এই ঋণ প্রাপ্তির ফলে বাংলাদেশের সঙ্কট মোচনের ক্ষেত্রে একটি দুয়ার খুলে গেলো বলেও অর্থনীতিবিদদের ধারণা। কিভাবে আইএমএফের ঋণ বাংলাদেশের সঙ্কট সমাধানের পথ খুলে দিলো, সে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অর্থনীতিবিদরা বলছেন যে, বিদেশী দাতা সংস্থাগুলো থেকে ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সবচেয়ে শক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আইএমএফ। আইএমএফ একটি ঋণ দেওয়ার আগে সে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা যাচাই-বাছাই করে এবং ঋণ ফেরত প্রাপ্তির সম্ভাবনা নিরীক্ষা করে। তারপরে তারা ঋণ দেয়। এবারও আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে দুই সপ্তাহব্যাপী বাংলাদেশ সফর করেছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থাসহ বিভিন্ন নীতি-কৌশল পর্যবেক্ষণ করেছে, কিছু কিছু সুপারিশ প্রস্তাব করেছে, তারপরই ঋণ মঞ্জুর করেছে। প্রথম কিস্তির ঋণ যেটি আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশ পাবে সেটি দেয়া হচ্ছে শর্তহীনভাবে। তারপর কিছু কিছু সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর ঋণ প্রদান নির্ভর করবে।

তবে আইএমএফের ঋণ প্রাপ্তির অন্যদিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ। এই ঋণ প্রাপ্তির মাধ্যমে বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি, আইডিবিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অর্থসংস্থার ঋণ প্রাপ্তি সহজতর হয়। বিশ্ব ব্যাংক সাধারণত দেখে যে, আইএমএফ ঋণ দিচ্ছে কিনা এবং ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে তারা কি মূল্যায়ন করেছে। আইএমএফের এই মূল্যায়নটিকে মাপকাঠি করে বিশ্ব ব্যাংক ঋণ প্রদান করে। আজ বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে আসছেন, সাথে সাথে দায়িত্ব গ্রহণ করছেন বাংলাদেশে বিশ্ব ব্যাংকের নতুন আবাসিক প্রধান। আইএমএফের ঋণ প্রাপ্তির ফলে বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট বিশেষ করে ডলার সংকট মোকাবেলায় সরকার বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা নিতে পারবে। বিশ্ব ব্যাংকের আর্থিক সহায়তা এবং আইএমএফের আর্থিক সহায়তা বাংলাদেশকে অর্থনীতিতে রিজার্ভের যে বেশি সেই সমস্যা উত্তরণের ক্ষেত্রে একটি বড় ইতিবাচক ফলাফল দিবে বলেই মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিশ্ব ব্যাংক ছাড়াও এডিবি এবং প্রয়োজনে আইডিবি (ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক) থেকেও বাংলাদেশের ঋণ প্রাপ্তির সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

অর্থনৈতিক ঋণ সহায়তায় আরেকটি ইতিবাচক দিক রয়েছে। তা হলো- বিভিন্ন পরামর্শ এবং সংস্কার। অনেক সময় সরকার তার কর্মকাণ্ডের মধ্যে কোন কোন জায়গায় ক্ষত রয়েছে, কোন কোন জায়গায় সমস্যা রয়েছে সেটি সম্পর্কে সঠিকভাবে অবহিত হতে পারে না। কিন্তু আইএমএফের এই ঋণ প্রাপ্তির ফলে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে এক ধরনের পরামর্শ বাংলাদেশ পাবে, যে পরামর্শ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক অবদান রাখবে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। আইএমএফের ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আরেকটি বড় ইতিবাচক দিক রয়েছে। সেটি হলো সরকারকে কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, নীতি এবং আইনের পরিবর্তন করতে হবে। যেটি অত্যন্ত জরুরী, যেটি সরকার হয়তো করতো না কিন্তু আইএমএফের ঋণ প্রাপ্তির শর্ত হিসেবে তাকে এই কাজটি করতে হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে আইএমএফের ঋণ প্রাপ্তির কারণে বাংলাদেশ বিদেশে যে অর্থ পাচার হয়েছে সেই পাচারকৃত অর্থগুলো উদ্ধারের ক্ষেত্রে একটি বড় ধরনের ইতিবাচক সহায়তা পাবে। যে সহায়তায় বিদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য ব্যাপক কাজে লাগবে। ফলে আইএমএফের ঋণ কেবল কিছু অর্থ প্রাপ্তি নয়। বরং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে একটি বড় ধরনের অবদান রাখতে পারে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭