ইনসাইড বাংলাদেশ

চীনকে এড়িয়ে চলছে বাংলাদেশ


প্রকাশ: 12/11/2022


Thumbnail

সাম্প্রতিক সময় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকট, আইএমএফের কাছ থেকে লোন প্রাপ্তি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন ইত্যাদি নানা প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ চীনকে এড়িয়ে চলছে। চীনের বহু আর্থিক প্রস্তাব বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে হয় এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে, না হলে নাকচ করে দেয়া হচ্ছে। তার সর্বশেষ উদাহরণ হলো তিস্তার পাশে জলাধার নির্মাণ যাতে শুষ্ক মৌসুমে পানি সংরক্ষণ করা যেতে পারে। এই জলাধার নির্মাণের প্রস্তাব নিয়ে চীন বাংলাদেশের সঙ্গে কয়েক দফা আলাপ-আলোচনা করে কোনো ইতিবাচক ফলাফল পায়নি। বাংলাদেশ কৌশলগত কারণেই চীনকে এখন এড়িয়ে চলছে বলে একাধিক কূটনীতিক সূত্র জানিয়েছে। এর কারণ অর্থনৈতিক এবং কূটনীতিক, দুটি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে।

বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের অর্থনৈতিক সম্পর্ক গত এক দশকে নতুন মাত্রায় উপনীত হয় এবং বাংলাদেশে সবগুলো মেগা প্রকল্পেই চীন অংশীদার হয়ে ওঠে। চীনের সাথে অর্থনৈতিক এই ঘনিষ্ঠতা ভারত এবং পশ্চিমা দেশগুলোর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনেকেই মনে করেন যে, চীন বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়ে বাংলাদেশের ওপর একটি প্রভাব বিস্তার করেছে এবং পশ্চিমা দেশগুলোর বিরুদ্ধে বাংলাদেশকে কূটনৈতিকভাবে অবস্থান করতে মদদ দিয়েছে। আর এ কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর নানারকম বিধিনিষেধ আরোপ করছে বলেও কূটনৈতিক মহল মনে করে। আর বাংলাদেশ এই বিষয়টি ভালোভাবেই উপলব্ধি করেছে। এই উপলব্ধির কারণ থেকেই বাংলাদেশ আস্তে আস্তে চীনের সঙ্গে এক ধরনের নীরব দূরত্ব তৈরি করছে। যদিও প্রকাশ্যে এই দূরত্ব স্পষ্ট নয়। তবে নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সাবধানতা অবলম্বন করছে এবং চীনের অঢেল লোভনীয় প্রস্তাব এখন অপেক্ষার টেবিলে আছে বা বাংলাদেশ এখনই গ্রহণ করতে রাজি হচ্ছে না। তবে বিভিন্ন মহল বলছে, রাজনৈতিক কারণের চেয়ে অর্থনৈতিক কারণ এক্ষেত্রে বড়।

বাংলাদেশ এখন একটি সাময়িক অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে। আর এই অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশের দরকার পশ্চিমা দেশগুলোর সহযোগিতা এবং বিশ্বে পোশাক শিল্পে এবং প্রবাসী আয়ের বাজারকে ধরে রাখা। এটি করার জন্য বাংলাদেশ নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের ওপর যে অর্থনৈতিক চাপ সেই চাপের কারণে বাংলাদেশ এখন দীর্ঘমেয়াদী এবং অপেক্ষাকৃত সহজ শর্তে ঋণের দিকে ঝুঁকছে। চীনের ঋণ গুলোর সুদের হার অতিরিক্ত বেশি। সাম্প্রতিক সময়ে একটি অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ অর্জন করেছে। তা হলো চীনের কাছ থেকে বেশি করে ঋণ গ্রহণ করেছে যে দেশগুলো সেই দেশগুলোই বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞতা থেকেই বাংলাদেশ এখন চীনের কাছ থেকে লোভনীয় এবং চটজলদি লোনের পথ এড়িয়ে চলছে। কারণ, বাংলাদেশ মনে করছে যে উচ্চহারে সুদ নিলে সেই সুদের দায় ভবিষ্যতে মেটাতে হবে। আর এ কারণেই বর্তমানে যে প্রকল্পগুলো রয়েছে সে প্রকল্প নিয়েই সরকার এগুতে চায়। অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে একটা স্থিতিশীলতা আনা পর্যন্ত চীনের সঙ্গে নতুন কোনো প্রকল্প বাংলাদেশ করবে না, এমন আভাস পাওয়া গেছে। যদিও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি।

তৃতীয় কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক। নানা কারণেই বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চীনের সাথে অতিরিক্ত অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও অস্বস্তি তৈরি করেছে বলে কোনো কোনো বিশ্লেষক মনে করেন। আর এই প্রেক্ষাপটে নির্বাচনের আগে আগে চীনের সঙ্গে খানিকটা দূরত্ব তৈরি করতে চাচ্ছে বাংলাদেশ যেন ভারত আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশের ব্যাপারে একটি সহনীয় এবং উদারনৈতিক অবস্থান থেকে কাজ করে। এ তিন কারণেই মূলত চীনের সঙ্গে এক ধরনের দূরত্ব তৈরি করছে বাংলাদেশ স্ব-প্রণোদিত হয়ে। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ ধরনের দূরত্বের কথা অস্বীকার করা হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চীন বাংলাদেশের অন্যতম অর্থনৈতিক অংশীদার এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহযোগী রাষ্ট্র। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক রয়েছে এবং থাকবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭