ইনসাইড বাংলাদেশ

চট্টগ্রামে যেভাবে পাসপোর্ট হাতিয়ে নিচ্ছে রোহিঙ্গারা


প্রকাশ: 13/11/2022


Thumbnail

চট্টগ্রামের পাসপোর্ট অফিস যেন রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণে। অসাধু কর্মকর্তা ও কতিপয় জনপ্রতিনিধিদের ছত্রছায়ায় পাসপোর্ট পাচ্ছেন রোহিঙ্গারা। এর পেছনে রয়েছে এক শ্রেণির অসাধু দালাল চক্র। এ অনৈতিক কাজের মূল কূশীলব  জনপ্রতিনিধি ও নির্বাচন অফিসের কিছু কর্মী বলে জানিয়েছেন সচেতন মহল। তাদের  যোগসাজসেই রোহিঙ্গারা হয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশি, পাসপোর্টে নিয়ে  উড়াল দিচ্ছেন  বিশ্বের নানা দেশে। এতে দেশের ভাবমূর্তি ও নিরাপত্তা চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস সূত্র জানায়, গত কয়েক বছরে এমন বহু অভিযোগ উঠেছে। এমন কাজে জড়িত রোহিঙ্গা, দালাল ও নির্বাচন অফিসের কর্মীসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।

নির্বাচন অফিসের কর্মীদের সহায়তায় রোহিঙ্গারা জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পেয়ে পাসপোর্টের আবেদন করছেন, এমন বিষয়টি প্রথম উঠে আসে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর সাবেক (চাকরীচ্যুত) উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিনের তদন্তে।

শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস থেকে ১৭২টি আবেদন ফরম এনেছিলাম। যাদেরকে রোহিঙ্গা বলে সন্দেহ করা হয়েছিল। একইভাবে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকেও ৫০/৬০টি আবেদন ফরম এনেছিলাম। এসব আবেদনকারীরা রোহিঙ্গা বলে সন্দেহ করা হয়েছিল। ঢাকা, বান্দরবান, ফেনীসহ বিভিন্ন স্থান থেকে রোহিঙ্গা সন্দেহে অসংখ্য আবেদন জব্দ করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন অফিসের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহায়তায় রোহিঙ্গারা প্রথমে এনআইডি পায়। এরপর এনআইডি ব্যবহার করে তারা পাসপোর্টের জন্য আবেদন করছে। রোহিঙ্গাদের পাসপোর্টের এসব আবেদনের প্রাথমিক অনুসন্ধান শুরু করেছিলাম। তবে শেষ করতে পারিনি। এখন ওইসব তদন্ত ডিপ ফ্রিজে। তারা রোহিঙ্গা হলেও অনেক প্রভাবশালী। এসব অনিয়মের সঙ্গে আপস না করায় আমাকে চাকরি হারাতে হয়েছে।

এদিকে চট্টগ্রাম পাসপোর্ট অফিস সূত্র জানায়, পাসপোর্ট আবেদনে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অথবা স্মার্ট কার্ডের ফটোকপি, পরিচয়পত্রের মূলকপি অধিদফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রদর্শন করতে হবে। অপরদিকে ১৮ বছরের কম বয়সীদের জন্য জন্ম-নিবন্ধন সার্টিফিকেট, বাবা-মায়ের ছবি ও এনআইডির ফটোকপি জমা দিতে হয়। পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কর্তৃক নাগরিকত্বের সনদও লাগে। টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গারা এসব কিছু ম্যানেজ করেই তারা পাসপোর্টের জন্য আবেদন করছে।

পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা জানান, পাসপোর্টের আবেদনে আঙুলের ছাপ নেওয়ার একটি প্রক্রিয়া যুক্ত রয়েছে। ওই প্রক্রিয়ায় আঙুলের ছাপ দেওয়ার পর আবেদনকারী ব্যক্তি যদি রোহিঙ্গা হয় এবং তার ডাটা রোহিঙ্গাদের তথ্য ভাণ্ডারে থেকে থাকে তাহলে ধরা পড়বে।

এমন ঘটনায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস গত কয়েক বছরে এক দালালসহ ১০ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। তারা চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা পরিচয়ে পাসপোর্টের আবেদন করেন। গ্রেফতারদের মধ্যে রয়েছেন হাটহাজারী উপজেলার পশ্চিম ধলই এনায়েতপুর এলাকার সুমাইয়া আক্তার, সীতাকুণ্ডের জঙ্গল লতিফপুরের জাফরাবাদ এলাকার মো. ফয়সাল, ফটিকছড়ির আব্দুল্লাহপুর ফতেপুরের শফিউল হাইর, হাটহাজারীর ফতেয়াবাদ ফরহাদাবাদ এলাকার জেসমিন আক্তার, হাটহাজারী কাটিরহাট সোনাগাজী তালুকদারের বাড়ির ফাতেমা ইয়াসমিন, রাঙ্গুনিয়া উত্তর পদুয়া এলাকার পূর্ব খুরুশিয়ার সিরাজ খাতুন, সন্দ্বীপ বাউরিয়া মোহা. ইসলামের বাড়ির মারজিয়া আক্তার, সন্দ্বীপ হরিশপুর এলাকার মোহাম্মদ আরমান, সীতাকুণ্ডের সলিমপুর জাফরাবাদ এলাকার জোবাইদা খানম ও বাকলিয়া চকবাজার কে বি আমান আলী সড়কের দিল মোহাম্মদ। এসব রোহিঙ্গারা টেকনাফের বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে থাকার কথা থাকলেও চট্টগ্রামের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে।

শুধু তাই নয়, চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভূয়া বাপ মায়ের তথ্য পরিবেশন করে প্রথমে জন্ম নিবন্ধন পরে ভোটার আইডি, এর পর পাসপোর্ট তারপর যাচ্ছে সোজা বিদেশ।এভাবে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও ক্যাম্পের বাইরে রোহিঙ্গারা দালালের মাধ্যমে বনে যাচ্ছেন বাংলাদেশী নাগরিক। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন জাতীয় সংগ্রাম কমিটির মহাসচিব এম গফুর উদ্দীন চৌধুরী বলেন, এ পর্যন্ত যে সব রোহিঙ্গা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তাদের চিহ্নিত করে বাদ দেয়ার সময় এসেছে। কারণ অনেকে জাতীয় পরিচয় পত্রের অপব্যবহার করে জায়গা জমি,হোটেল,ব্যবসা বানিজ্য  এপার্টমেন্ট, দোকান ও বসতবাড়ি ক্রয় করে বিলাসবহুল জীবন যাপন করছেন। যে সব রোহিঙ্গা অবৈধ পন্থায় গাড়ি বাড়ির মালিক হয়েছেন তাদের সকল প্রকার সম্পত্তি রাষ্ট্রের মালিকানায় নেয়া হোক


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭