ইনসাইড গ্রাউন্ড

খলনায়ক থেকে নায়ক


প্রকাশ: 14/11/2022


Thumbnail

২০১০ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের তৃতীয় আসর বসেছিলো ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে। সাগরের নীল জলরাশি আর অনন্য সুন্দর ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে সেবার উৎসব করেছিল ইংল্যান্ড। কারণ সেবারই যে প্রথমবার নিজেদের নামের পাশে 'বিশ্বচ্যাম্পিয়ন' শব্দটা লিখতে পেরেছিলো কলিংউডের নেতৃত্বাধীন ইংল্যান্ড দল। আর সে দলে ছিলেন কেভিন পিটারসেন, গ্রায়েম সোয়ান, এউইন মরগানের মতো ক্রিকেটাররা।

ছয় বছর বাদে আবারো সে রকম উৎসবের উপলক্ষ্য পেয়েছিলো ইংল্যান্ড। উপমহাদেশে অনুষ্ঠিতব্য সে বিশ্বকাপের ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হয়েছিল ইংল্যান্ড দল। ২০১০ বিশ্বকাপ জেতা দলের মরগান তখন ইংলিশদের অধিনায়ক। ফাইনালে ক্যারিবিয়ানদের কোণঠাসা করে শিরোপা জয়ের পথেই ছিলো ইংল্যান্ড। গেইল, ব্রাভো, রাসেলদের ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচে টিকে ছিলেন মারলন স্যামুয়েলসের কারণে। সতীর্থরা যখন আসা যাওয়ার মিছিলে, তখনো একপ্রান্তে ক্রিজ আঁকড়ে দাড়িয়ে ছিলেন স্যামুয়েলস। তবুও ম্যাচের পাল্লা ছিলো ইংল্যান্ডের দিকে। শেষ ওভার জয়ের জন্য ক্যারিবিয়ানদের দরকার ছিলো ২৪ রানের। তখন দৃশ্যপটে আসেন কার্লোস ব্রাথওয়েট। টানা চার বলে ৪টি ছক্কা মেরে শিরোপা এনে দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। শেষ ওভারে ইংল্যান্ড অধিনায়ক বল তুলে দিয়েছিলেন বেন স্টোকসের হাতে। ম্যাচ শেষে স্টোকসের চেহারাই বলে দিচ্ছিলো নিজের এবং দলের হতাশার কথা। 

সে ম্যাচের পর অনেকটাই মুষড়ে পড়েন স্টোকস। ভুগতে থাকেন মানসিক জটিলতায়। এতটাই মুষড়ে পড়েছিলেন যে, তা কাটাতে অনির্দিষ্টকালের বিরতিতেও চলে যান এই অলরাউন্ডার। তবে স্টোকস আবারো ফিরে আসেন ক্রিকেটের মাঠে। নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে থাকেন নিয়মিতভাবে। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপ, সেবার স্বাগতিক দল ইংল্যান্ড। টুর্নামেন্টজুড়ে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলে স্টোকস জানান দেন তিনি ফুরিয়ে যাননি। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনালে তার অতিমানবীয় লড়াই ইংল্যান্ডকে এনে দেয় তাদের ইতিহাসের প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্বপ্ন ডুবিয়েছিলেন যে স্টোকস, তিনিই ইংল্যান্ডকে এনে দিলেন আরেকটি বিশ্বকাপ। খলনায়ক থেকে নায়ক হয়ে উঠলেন স্টোকস।

২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল। মেলবোর্নে শিরোপা নির্ধারণী লড়াইয়ে মুখোমুখি ইংল্যান্ড ও পাকিস্তান। সেখানেও ইতিহাসের জুজু তাড়া করে ফিরছে ইংল্যান্ডকে। এ মাঠে, এই পাকিস্তানের কাছেই যে ১৯৯২ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে হেরেছিল ইংলিশরা। স্কোরবোর্ডে পাকিস্তানের সংগ্রহটা খুব বেশি না থাকলে বোলারদের দারুণ লড়াইয়ে ৩০ বছর আগের দৃশ্যপট ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন দেখছিলো পাকিস্তান।

এখানেও সে বাঁধটা সাধলেন বেন স্টোকস। হারিস রউফ-নাসিমদের আটোসাটো বোলিংয়ে ভালই চাপে পড়ে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। তবে ইংলিশদের জন্য আর্শীবাদ হয়ে আসে শাহিন আফ্রিদির চোট। ব্যক্তিগত তৃতীয় ওভারে একটি বল করেই মাঠ ছেড়ে চলে যেতে হয় আফ্রিদিকে। আর সে সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ইংল্যান্ডকে চালকের আসনে নিয়ে আসেন বেন স্টোকস। ইফতিখারের করা ৫ বল থেকে তুলে নেন ১৩ রান। যার ফলে চাপ সরিয়ে জয়ের পথে এগোতে থাকে ইংল্যান্ড। ৭ বল হাতে রেখে দ্বিতীয় শিরোপা জেতে ইংল্যান্ড। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে প্রথম অর্ধশতক তুলে নেয়া স্টোকসের ব্যাট থেকেই আসে উইনিং রান।

যেন পাপ মোচন করলেন স্টোকস। ছয় বছর আগের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করলেন ছয় বছর পর আরেকটি বিশ্বকাপের ফাইনালে। এবার হার নয়, অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়লেন বীরের বেশে। হয়ে গেলেন ইংলিশ ক্রিকেট ইতিহাসের সেরাদের একজন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭