ইনসাইড গ্রাউন্ড

যেভাবে পথচলা শুরু বিশ্বকাপ ফুটবলের


প্রকাশ: 15/11/2022


Thumbnail

বর্তমান সময়ে ফুটবল বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা শিখরে থাকলেও, আঠারো শতকের চিত্রটা ছিল পুরোপুরি ভিন্ন। সে সময় মূলত ব্রিটিশরা ফুটবলে কর্তৃত্ব দেখাতো। শৌর্যের প্রতীক হিসেবে ফুটবল খেলতেন তারা। ব্রিটিশদের বাইরে ইউরোপের গুটিকয়েক দেশ ফুটবলের সাথে নিজেদের পরিচিত ঘটালেও, ব্রিটিশরাই ছিলেন খেলাটির হর্তা-কর্তা। ১৮৭২ সালে গ্লাসগোতে ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম স্বীকৃত ফুটবল ম্যাচ।

তবে সময়ের সাথে সাথে বদলে যায় চিত্র। ফুটবলের সাথে সংযোগ ঘটে নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের। ইউরোপের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে সে রেশ। জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে ফুটবল। আর সে সমস্ত প্রেক্ষাপট থেকে উনিশ শতকের শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠা পায় ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব অ্যাসোসিয়েশন ফুটবল- ফিফার। ১৯০৪ সালের ২১ মে প্যারিসে যাত্রা শুরু করে সংস্থাটি। ফ্রান্স, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, স্পেন ও সুইডেন ছিলো ফিফার প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। জার্মানিও টেলিগ্রাম মারফত সেদিনই ফিফায় যোগ দেয়।

সে সময় ফুটবলের বৈশ্বিক আসর ছিলো অলিম্পিক। তবে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ফিফার স্বপ্ন ছিলো স্বতন্ত্র প্রতিযোগিতা আয়োজনের। যার পূর্ণতা আসে দুই ফরাসি সংগঠক জুলে রিমে ও তার সেক্রেটারি হেনরি দেলাউনের হাত ধরে। ১৯৩২ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক থেকে ফুটবল বাদ পড়লে স্বতন্ত্রভাবে বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা আয়োজনের ঘোষণা দেন তৎকালীন ফিফা সভাপতি জুলে রিমে। সংবিধানের শত বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে সে বিশ্বকাপের আয়োজক হতে আগ্রহ দেখায় লাতিন আমেরিকার দেশ উরুগুয়ে। সে প্রস্তাবের পর উরুগুয়েকে প্রথম বিশ্বকাপের আয়োজক ঘোষণা করে ফিফা।

তবে ফিফার এই সিদ্ধান্তে খুশি হয়নি ইউরোপের দলগুলো। সুদূর আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে উরুগুয়েতে খেলতে যাওয়ার অসুবিধার সাথে আর্থিক বিষয়টিও ছিলো তাদের ভাবনার দিক। তবে উরুগুয়ে ভ্রমণ খরচ দিয়ে সাহায্য করতে রাজি হলে বিশ্বকাপের দুই মাস আগে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে বেলজিয়াম, ফ্রান্স, রোমানিয়া এবং যুগোস্লাভিয়া।


দক্ষিণ আমেরিকার ৭টি, ইউরোপে ৪টি আর উত্তর আমেরিকা ২টি দল অংশ নেয় ১৯৩০ বিশ্বকাপে। ১৩ দেশের অংশগ্রহণে আত্নপ্রকাশ হয় ফুটবলের সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতার। ৪টি গ্রুপে ভাগ করা হয় দলগুলোকে। গ্রুপ ‘১’ এ ছিলো সর্বোচ্চ চারটি দল। আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স চিলি ও মেক্সিকো। গ্রুপ ‘২’ ব্রাজিলের সাথে ছিল যুগোস্লাভিয়া এবং বলিভিয়া। স্বাগতিক উরুগুয়ে, পেরু ও রোমানিয়া ছিলো গ্রুপ ‘৩। আর তিন মহাদেশের তিন দল- যুক্তরাষ্ট্র, বেলজিয়াম ও প্যারাগুয়েকে গড়া হয় গ্রুপ ‘৪’। আগের অলিম্পিক আসরগুলোতে নৈপূন্য দেখানোয় প্রথম বিশ্বকাপে ফেভারিটও ছিল উরুগুয়ে।

১৩ জুলাই এস্তাদিও পাকিতোসে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হয় ফ্রান্স এবং মেক্সিকো। সে ম্যাচে প্রথমবার বল জালে জড়িয়ে ইতিহাসের পাতায় নাম ওঠান ফ্রান্সের লুসিয়েন লরেন্ত। হন বিশ্বকাপের প্রথম গোলদাতা। সে ম্যাচে ৪-১ গোলে জেতে ফরাসিরা। সেদিনই আরেক ম্যাচে বেলজিয়ামকে ৩-০ গোলে হারায় যুক্তরাষ্ট্র। পরদিন ব্রাজিলকে ২-১ গোলে যুগোস্লাভিয়া এবং পেরুকে ৩-১ গোলে হারায় রোমানিয়া। ১৬ জুলাই আর্জেন্টিনার কাছে ১-০ গোলে হারে ফ্রান্স। আর মেক্সিকোর বিপক্ষে ৩-০ গোলে জেতে চিলি।

গ্রুপ ‘২’ এর দ্বিতীয় ম্যাচে বলিভিয়াকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে প্রথম দল হিসেবে নকআউট পর্বে যায় যুগোস্লাভিয়া। আর প্যারাগুয়েকে ৩-০ গোলে হারিয়ে পরের রাউন্ডের টিকিট পায় যুক্তরাষ্ট্র। ১৮ জুলাই একমাত্র ম্যাচে পেরুর বিপক্ষে ১-০ গোলের কষ্টার্জিত জয় পায় উরুগুয়ে। পরদিন চিলির কাছে ১-০ গোলে হেরে যায় ফ্রান্স। আর আর্জেন্টিনার কাছে ৬-৩ গোলে বিধ্বস্ত হয় মেক্সিকো। 

বলিভিয়াকে ৪-০ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপে প্রথম জয় পায় ব্রাজিল। প্যারাগুয়ে বেলজিয়ামকে হারায় ১-০ গোলে। উরুগুয়ের কাছে ৪-০ গোলে হারে রোমানিয়া। আর গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ৩-১ গোলে আর্জেন্টিনার কাছে হারে চিলি। 

সরাসরি সেমিফাইনালের খেলার টিকিট পায় উরুগুয়ে, আর্জেন্টিনা, যুক্তরাষ্ট্র ও যুগোস্লাভিয়া। সেখানে আর্জেন্টিনার কাছে ৬-১ গোলে উড়ে যায় সে সময়ের অন্যতম ফেভারিট যুক্তরাষ্ট্র। আর একই ব্যবধানে যুগোস্লাভিয়াকে হারিয়ে ফাইনালে উঠে উরুগুয়ে।

বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রথম ফাইনালে মুখোমুখি দুই প্রতিবেশী দেশ। যার উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে মাঠের বাইরেও। সীমান্তে নামে মানুষের ঢল। সে চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয় দুই দেশের সীমান্ত রক্ষীদের। অবশেষে ৩০ জুলাই আসে সে মাহেন্দ্রক্ষণ। মন্টেভিডিও'র  এস্তাদিও সেন্তনারিও স্টেডিয়ামে ফাইনাল দেখতে উপস্থিত হন প্রায় ৯৩ হাজার দর্শক।

তবে দুই দল মাঠে এলে কোন বল দিয়ে খেলা হবে তা দিয়ে শুরু হয় বিপত্তি। পরে সিদ্ধান্ত হয় ম্যাচের প্রথমার্ধের খেলা হবে আর্জেন্টিনার বলে আর দ্বিতীয়ার্ধে স্বাগতিকদের বল দিয়ে। আর্জেন্টিনার বল থেকে আকারে সামান্য বড় ছিলো উরুগুয়ের বলটি। নানা উত্তেজনার মাঝেই চলতে থাকে দুই দলের খেলা। জমজমাট লড়াই শেষে ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে ৪-২ গোলে হারিয়ে প্রথমবার বিশ্বকাপ শিরোপা উঁচিয়ে ধরে উরুগুয়ে। বিশ্ব পায় ফুটবলের প্রথম চ্যাম্পিয়ন দলকে।

১৯৩০ বিশ্বকাপে ১৮ ম্যাচে গোল হয় ৭০টি। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৮ গোল করে টুর্নামেন্ট সেরা হন আর্জেন্টিনার গুইলার্মো স্তাবিলে। জেতেন গোল্ডেন শু। যুক্তরাষ্ট্রের বার্ট প্যাটেনড জিতে নেন ব্রোঞ্জ শু। আর সিলভার শুর'র মালিক হন উরুগুয়ের প্রেদো সিআ।

পরদিন মন্টেভিডিওতে উৎসব হলেও,  শোক বিহ্বল বিধ্বস্ত এক শহরের রূপ পায় উরুগুয়ে নদীর অপর পাড়ের বুয়েনস এইরেস।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭