প্রকাশ: 15/11/2022
গত শতকে স্নায়ুযুদ্ধের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের
নির্বাচিত প্রত্যেক প্রেসিডেন্টই নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্রগুলো নিয়ে একটি পর্যালোচনা
প্রকাশ করেছেন। যেই পর্যালোচনাইয় থকাতো যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তায় পারমাণবিক অস্ত্রগুলোর
ভূমিকা কী হবে তা নিয়ে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও সম্প্রতি ওই পর্যালোচনা করেছেন।
তবে বারের পর্যালোচনা একটি অশনিসংকেত দিচ্ছে। পারমাণবিক পরাশক্তি হিসেবে এত দিন সোভিয়েত
ইউনিয়ন তথা একালের রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেই প্রতিযোগিতা চলছিল। তবে এবার তাতে
যোগ দিতে যাচ্ছে আরও একটি দেশ।
তালিকায় নাম লেখাতে যাওয়া নতুন দেশটি
হলো চীন। দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং গতকাল সোমবার বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। শুধু
রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনই নয়, বিশ্বের মোট নয়টি দেশের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে।
তবে এ অস্ত্র নিয়ে ব্যাপক উচ্চাকাঙ্ক্ষার দিক থেকে অপর দেশগুলোর মধ্যে চীন সবার ওপরে
রয়েছে। বাইডেনের ওই পর্যালোচনা অনুযায়ী, ‘২০৩০ সাল নাগাদ ইতিহাসে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র
কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দুটি বড় পারমাণবিক পরাশক্তির মুখোমুখি হবে। এর ফলে নতুনভাবে
চাপে পড়বে বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা।’
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া—দুই দেশ মোট
১ হাজার ৫৫০টি পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করে রেখেছে। এটা করা হয়েছে ২০১০ সালের ‘নিউ
স্টার্ট’ চুক্তির আওতায়। অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে কার্যকর থাকা চুক্তিগুলোর মধ্যে
সবশেষে করা হয়েছে নিউ স্টার্ট চুক্তিটি। এর মেয়াদ ২০২৬ সাল পর্যন্ত। বহু বছর ধরেই চীন
তাদের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা কয়েক শর মধ্যে সীমিত রেখেছে। তবে এখন মনে হচ্ছে, দেশটি
চলতি দশকের শেষ নাগাদ এ অস্ত্রের সংখ্যা অন্তত ১ হাজার করতে চাইছে। পাশাপাশি রাশিয়া
ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো জল, স্থল ও আকাশ থেকে এসব অস্ত্র ছুড়তে সক্ষম—এমন ক্ষেপণাস্ত্র
তৈরি করছে তারা। এদিকে তিনটি দেশই নতুন ধরনের অস্ত্র তৈরির প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এর
মধ্যে রয়েছে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ও সাইবার অস্ত্র। আর যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার হাতে
স্বল্পপাল্লার ও কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। এ ধরনের পারমাণবিক অস্ত্রগুলো কখনোই
কোনো চুক্তির আওতায় ছিল না।
স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালে বেশির ভাগ সময়
কিছুটা স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে বেশ কয়েকটি অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র
ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন। তবে বর্তমান সময়ে এসে পারমাণবিক পরাশক্তি হিসেবে একটি নয়,
দুটি প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। সমস্যাটা হলো, তারা হয়তো নতুন অস্ত্র
নিয়ন্ত্রণ চুক্তি করতে ততটা আগ্রহ দেখাবে না। বাইডেনের পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, সংকট
সমাধানে রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করার অতীত অভিজ্ঞতা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। তবে এ দিক দিয়ে
চীনের সঙ্গে ওয়াশিংটনের অগ্রগতি খুবই কম। পারমাণবিক শক্তি নিয়ে আলোচনায় বসার আহ্বান
বরাবরই নাকচ করে আসছে বেইজিং। পর্যালোচনায় আরও বলা হয়েছে, ‘চীন ব্যাপক আকারে সামরিক
শক্তি প্রদর্শন করছে। একই সঙ্গে স্বচ্ছতা না রেখে, দেশটি যে পরিসরে ও গতিতে পারমাণবিক
অস্ত্রের সংখ্যা বাড়াচ্ছে, তাতে কিছু প্রশ্ন থেকে যায়। সেগুলো হলো চীনের উদ্দেশ্য কী,
তাদের পারমাণবিক কৌশল ও মতাদর্শ কী এবং বিশ্বে কৌশলগত স্থিতিশীলতা নিয়ে তারা কতটুকু
সচেতন।’
সামনের বছরগুলো যে খারাপ যাবে, তার
আভাস দিচ্ছে এ প্রশ্নগুলো। অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তির অভাব, রাশিয়া ও চীনের পারমাণবিক
অস্ত্রের তথ্য যাচাই করার সুযোগ না থাকা এবং সংকট সমাধানের পথগুলো বন্ধ থাকলে যুক্তরাষ্ট্র
একটি ত্রিমুখী পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়তে পারে, যেখানে রাশিয়া ও চীনের
পারমাণবিক অস্ত্রগুলো সম্পর্কে কম ধারণা থাকবে ওয়াশিংটনের। লাগামছাড়া এ প্রতিযোগিতার
ফলে ভুল–বোঝাবুঝি তৈরি হতে পারে। ইউক্রেনে পারমাণবিক হামলার যে হুমকি রুশ প্রেসিডেন্ট
ভ্লাদিমির পুতিন দিয়েছেন, তা কেবল একটি শুরু। এ হুমকির পরিণতি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের
প্রতিযোগিতা পর্যন্ত গড়াতে পারে। গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
জানিয়েছে, নিউ স্টার্ট চুক্তির আওতায় পারমাণবিক অস্ত্রসংক্রান্ত পরিদর্শন আবার শুরু
করার বিষয়ে শিগগিরই আলোচনা শুরু করবে ওয়াশিংটন ও মস্কো। এটি আশার আলো দেখানোর মতো একটি
পদক্ষেপ। তবে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের মধ্যে ত্রিমুখী
আলোচনা এখনো অনেক দূরে। এর জন্য দরকার এ তিন দেশের নেতাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছা, যা এ
মুহূর্তে তাঁদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে না।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭