কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার সদর ইউনিয়নের পূর্ব গ্ৰামের যুগিরকান্দা হাঁটির প্রবীণ মুরুব্বী মোঃ তাহের আলী'র দ্বিতীয় সন্তান শারীরিক প্রতিবন্ধী ৩৬ বছর বয়সী মোঃ আছমত আলী। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা বাধা হতে পারেনি তাঁর কর্মজীবনে। জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে বেড়ে ওঠা মোঃ আছমত আলী দরিদ্র পরিবারের সন্তান। প্রতিবন্ধী মোঃ আছমত আলী নিজ পায়ের ওপর ভর দিয়ে দাঁড়ানোর শক্তি ও সামর্থ্য নেই। তবুও সে থেমে নেই। জীবন যুদ্ধের লড়াইয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে সকল বাধা-বিপত্তিকে পেছনে ফেলে বেছে নিয়েছে কর্মজীবন। এছাড়াও শারীরিক প্রতিবন্ধী মোঃ আছমত আলী অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে ইটনা বড় বাজারের রাস্তার পাশে গড়ে তুলেছে প্রতিবন্ধী ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপ। সেখানে দরজা, জানালা, গ্ৰিল, কেচি গেইট, নৌকা রিফারিং এবং বিভিন্ন গাড়ির চাকা মেরামত করেন মোঃ আছমত আলী।
শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও পেটের দায়ে ওয়ার্কশপ এ কাজ করে সংসার চালান এই অদম্য যুবক। বিগত ২৩-২৪ বছর ধরে তিনি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে যাচ্ছেন। শারীরিক প্রতিবন্ধী মোঃ আছমত আলী'র উপার্জনেই চলছে তার পরিবার। তাঁর পরিবারের বাবা-মা, বউ-সন্তান সহ সদস্য সংখ্যা ১০ জন । এই কাজ করে যা আয় করেন তা দিয়েই কোনোমতে তাদের পরিবার চলে তারপরও সে গর্ববোধ করেন, কারন কারো কাছে হাত পাততে হয় না।
মোঃ আছমত আলী জানান, আমি জন্মের পর থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী, দুটি পা অচল, ছোট বেলা থেকেই কাজের প্রতি মনোযোগী। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে কোথায় কাজের সুযোগ হয়নি তাই বাধ্য হয়ে ওয়ার্কসপের কাজ বেছে নিই। প্রতিদিন সকালে কাজে আসি, আর বিকেলে বাড়ি যায়। প্রতিবন্ধী ভাতা ও কাজের আয়ের টাকায় খুবই কষ্টে চলে আমাদের সংসার। রাস্তার পাশে ফুটপাতে একটু যায়গায় বসে কাজ করি। নিজের একটা দোকান থাকলে কাজের নিরাপত্তা পেতাম। কিন্তু সাধ্য থাকলেও সামর্থ্য নেই বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন পরিশ্রমী এই মানুষটি।
তিনি আরো জানান, আমার মতো প্রতিবন্ধীরা সমাজের চোখে অবহেলিত হিসেবে বিবেচিত। আমি সমাজের চোখে বোঝা হয়ে বাঁচতে চাই না, নিজের কর্মপ্রচেষ্টার মাধ্যমে একজন আত্মনির্ভরশীল মানুষ হিসেবে বাঁচতে চাই এই সোনার বাংলাদেশে। তবে এলাকার বিত্তবান কিংবা সরকারি কোনো সহায়তা পেলে তিনি নিজে ব্যবসা করার ইচ্ছা রয়েছে বলে জানান। ফুটপাতে বসার কারনে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়েছিল তারপর ইটনা থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ কামরুল ইসলাম মোল্লা স্যার কে অবগত করলে তিনি বলেন এখানে বসে কাজ করার জন্য, তারপর থেকে কেউ কিছু বলে না।
ইটনা বড় বাজার বণিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি সোহরাব উদ্দিন ঠাকুর বলেন, আছমত আলী প্রতিবন্ধী হলেও সে সমাজের বোঝা নয়। সে নিজে কর্ম করে সংসার চালায়। প্রতিদিন তাঁর কর্মস্থলে যথাসময়ে আসতে দেখা যায়। এ কর্ম মাধ্যমে তাদের পরিবার চলে। সে একজন ভালো ছেলে।
ইটনা থানার অফিসার ইনচার্জ কামরুল ইসলাম মোল্লা বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধী মোঃ আছমত আলী রাস্তার ফুটপাতে বসার কারনে অনেক মানুষই বিরক্ত করতো, আমি বিষয়টি শোনার পর নিজে গিয়ে নির্দেশ দিয়ে আসছি সে এখানে বসেই কাজ করবে। এই কাজের আয় রোজগারে তার পরিবার চলে। তিনি আরও বলেন, আমাদের উচিত এইসব শারীরিক প্রতিবন্ধী অসহায় মানুষ কে অবহেলা না করে সহযোগিতা করা। নিজের সদিচ্ছা থাকলে মানুষ অনেক কিছুই করতে পারে তার দৃষ্টান্ত দুটি পা অচল প্রতিবন্ধী মোঃ আছমত আলী।