ইনসাইড গ্রাউন্ড

বিশ্বযুদ্ধের তাপে যে বিশ্বকাপ


প্রকাশ: 16/11/2022


Thumbnail

ইউরোপের রাজনীতির মাঠ তখন উত্তাল। চারদিকে বাজছে যুদ্ধের দামামা। যার প্রভাব পড়েছিলো পুরো ইউরোপের অর্থনীতি ও সমাজ ব্যবস্থায়। সেই অস্থিরতার মধ্যেই অনুষ্ঠিত হয় ফুটবল বিশ্বকাপের তৃতীয় আসর। জার্মানির বার্লিনে ১৯৩৬ সালের কংগ্রেসে ফিফা বিশ্বকাপের আয়োজক হিসেবে ঘোষণা করা হয় ফ্রান্সের নাম।

একদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চোখ রাঙানি, আরেকদিকে ইউরোপে টানা দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ আসর। যা মোটেও ভালভাবে নেয়নি লাতিন আমেরিকার দেশগুলো। এমনকি সে বিশ্বকাপের আয়োজনে অনেকটাই এগিয়ে ছিল আর্জেন্টিনা। ফলে ফ্রান্সকে আয়োজকের দ্বায়িত্ব দেয়ায় এমনিতেই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে লাতিনরা। তার পরিমাণ যে এতটাই বিশ্বকাপে অংশ নেয়নি প্রথম বিশ্বকাপের দুই ফাইনালিষ্ট উরুগুয়ে ও আর্জেন্টিনা।

যার হাত বিশ্বকাপের যাত্রা শুরু, সেই জুলে রিমের দেশে বিশ্বকাপ ঘিরে চলতে থাকে উৎসবের আমেজ। ১৬ দলের অংশগ্রহণে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও, ইউরোপে এরইমধ্যে নেমে আসে যুদ্ধের কড়াল থাবা। জার্মানি দখল করে নেয় অস্ট্রিয়া। রোপণ হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীজ। সে বিশ্বকাপে তাই আর খেলা হয়ে উঠেনি শৈল্পিক ফুটবলের বিপ্লব ঘটানো অস্ট্রিয়া। যদিও সে দলের সেরা তারকাদের অনেকেই সে বিশ্বকাপে জার্মানির হয়ে অংশ নেয়। তবে নাৎসিদের হয়ে খেলতে রাজি হননি অস্ট্রিয়ার সবেচেয়ে তারকা ফুটবলার ম্যাথিয়াস শিন্ডলার। এর কিছুদিন পর রহস্যজনক মৃত্যু হয় তার।

১৫টি দলের অংশগ্রহণে শুরু হয় বিশ্বকাপ। যেখানে ইউরোপের দল ১২টি। লাতিন আমেরিকার একমাত্র দল হিসেবে অংশ নেয় ব্রাজিল। আর প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলার স্বাদ পায় উত্তর আমেরিকার কিউবা এবং এশিয়ার থেকে ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া। যা বর্তমানে ইন্দোনেশিয়া।  

এবারের আসরেও দলগুলো খেলে নকআউট পদ্ধতিতে। অস্ট্রিয়া অংশ না নেয়ায় 'ওয়াকওভার' নিয়ে সরাসরি কোয়ার্টার-ফাইনালে চলে যায় সুইডেন। প্রথম পর্বের খেলায় বেলজিয়ামকে ৩-১ গোলে ফ্রান্স, ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়াকে ৬-০ গোলে হারায় হাঙ্গেরি। তিনটি ম্যাচে ফল নির্ধারণ হয় অতিরিক্ত সময়ের খেলায়। যেখানে নরওয়ের বিপক্ষে ইতালি, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জয় পায় চেকোস্লোভাকিয়া। তবে সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ ম্যাচটি হয় ব্রাজিল ও পোল্যান্ডের মধ্যে। তুমুল লড়াই শেষে সে খেলায় ৬-৫ ব্যবধানে জয় পায় ব্রাজিল। প্রথম ফুটবলার হিসেবে ম্যাচে ৪ গোল করার ইতিহাস গড়েন পোল্যান্ডের এরনস্ত উইল্মোভস্কি।

সুইজারল্যান্ডকে ২-০ ব্যবধানে হারায় হাঙ্গেরি। ইতালির কাছে ৩-১ গোলে হেরে যায় স্বাগতিক ফ্রান্স। আর কিউবা ৮-০ গোলে উড়িয়ে দেয় সুইডেন। সে ম্যাচেই প্রথমবার ডাবল হ্যাটট্রিকের দেখা পায় বিশ্বকাপ। সুইডেনের হ্যারি অ্যান্ডারসন এবং গুস্তাভ ওয়েতারসান তিনবার করে বল প্রতিপক্ষের জালে জড়ান। তবে ব্রাজিল-চেকোস্লোভাকিয়ার ম্যাচটি ১-১ গোলে সমতায় থাকলে, ম্যাচটি গড়ায় রি-প্লে'তে। পরে সেখানে ব্রাজিল জেতে ২-১ গোলে।

সেমিফাইনালে হাঙ্গেরির সামনে দাড়াতেই পারেনি সরাসরি শেষ চারে আসা সুইডেন। ৫-১ গোলে জিতে প্রথমবার বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে হাঙ্গেরি। আরেক ম্যাচে লড়াই চালিয়েও ইতালির কাছে ২-১ গোলে হেরে যায় ব্রাজিল। টানা দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে ইতালি। বাদ পড়লেও টুর্নামেন্টজুড়ে দারুণ খেলে প্রশংসা কুড়ান ব্রাজিলের লিওনিদাস ডি সিলভা।

১৯ জুন ১৯৩৮ প্যারিসের অলিম্পিক স্টেডিয়াম শিরোপার লড়াইয়ে মুখোমুখি হয় ইতালি ও হাঙ্গেরি। গ্যালারিতে উপস্থিত ছিলেন প্রায় ৪৫ হাজার দর্শক। ম্যাচের ৬ মিনিটে ইতালিকে এগিয়ে দেন জিনো কোলাউসসি। দুই মিনিট পড়েই হাঙ্গেরিকে সমতায় ফেরায় পাল তিতকোস। তবে ১৬ মিনিটে সিলভিও পিওলার গোলে লিড নেয় ইতালি। ৩৫ মিনিটে কোলাউসসি দ্বিতীয় গোল করলে বড় লিড নিয়ে বিরতিতে যায় আগেরবারের চ্যাম্পিয়নরা। ৭০ মিনিটে জিওর্জি সারোসির গোলে হাঙ্গেরি খেলায় ফেরার চেষ্টা করে। উল্টো ৮২ মিনিটে পিওলার গোলে চ্যাম্পিয়ন হয় ইতালি।

টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ শিরোপা জেতে ভিত্তরিও পোজোর দল। বিশ্বকাপের তৃতীয় আসরে রীতিমত গোলবন্যা হয়। ১৮ ম্যাচে গোল হয় ৮৪টি। ৭ গোল করে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা এবং টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কার জিতে নেন ব্রাজিলের লিওনিদাস ডি সিলভা।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭