কালার ইনসাইড

ভাইরাল হয়েই ফায়দা লুটে


প্রকাশ: 17/11/2022


Thumbnail

‘ভাইরাল’ শব্দটির সাথে সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে আমরা সবাই পরিচিত। কিছু দিন পর পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রাখলেই দেখা যায় কেউ না কেউ কোন না কোন ভাবে ভাইরাল হয়ে রাতারাতি তারকা বনে যায়। অনেক ক্ষেত্রেই তার যোগ্যতা কিংবা অবস্থান প্রাধান্য পায় না ভাইরাল হওয়ার ক্ষেত্রে।  

বর্তমান সময়ে আমাদের মাঝে যেনো ভাইরাল হওয়ার ভূত চেপে বসেছে। এবার আসা যাক মূল বিষয়ে। ভাইরাল হলেই যেনো একটি মানুষের ভাগ্য বদলে যেতে শুরু করে। যার বড় উদাহরণ হিরো আলম। বগুড়ার ছেলে হিরো আলম ডিস ব্যবসা থেকে নিজের বাননো মিউজিক ভিডিও দিয়ে বেশ আলোচনায় চলে আসেন। এরপর আর কে ঠেকায় তাঁকে। রাতারাতি যেন তারকা হয়ে উঠেন তিনি। অনেকেই তাঁকে নিয়ে অনেক কিছু বানিয়ে নিজেরাও ভাইরাল হয়। পরবর্তীতে হিরো আলম ভাইরাল হওয়াকে পুঁজি করে নিজেও সিনেমা, গান করা শুরু করেন। যে গুলোর মান সম্পর্কে সবারই জানা। শুধু তাই নয় এই ব্যক্তি করেছেন জাতীয় নির্বাচনও। যা দিয়ে তিনি আরও আলোচনায় উঠে আসে। মানহীন সিনেমা আর গান যাই হউক না কেনো সে তার কাজ করে যাচ্ছে নিজের মত করেই। যে সব কিছু দেখে বুঝেও আমারা অবুঝ। 

এবার আসি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইউটিউবসহ ইন্টারনেট দুনিয়ায় এই মুহূর্তে ভাইরাল যুবক শ্যামল চন্দ্র বর্মণের দিকে। বাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার নিভৃত মনমথ গ্রামে। কথায় কথায় তিনি ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করেন। ‘সি ইউ নট ফর মাইন্ড’ ও ‘হ্যাভ অ্যা রিল্যাক্স’ ব্যাপক আলোচিত হয়।

তিনি মানুষের সঙ্গে কথা বলেন হেসে হেসে। উচ্চারণভঙ্গি স্পষ্ট। কথায়ই তার স্বভাবজাত সরলতা মিশে থাকে। এক কথায় সহজ সরল প্রকৃতির শ্যামল চন্দ্র। গত বছর তার এমনই একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। যেখানে প্রশ্নকর্তার জবাবে নিজের সম্পর্কে বলেন শ্যামল। কথোপকথনের একপর্যায়ে শ্যামল বলেন, ‘সি ইউ নট ফর মাইন্ড ও ‘হ্যাভ অ্যা রিল্যাক্স’। এই বাক্য দুইটি এখন ফেসবুক দুনিয়ার বাসিন্দাদের চেনা শব্দ, যেমন চেনা শ্যামল চন্দ্র নিজেও।

তাঁকে ভাইরাল করার জন্য তিনি রাশেদুল ইসলাম রাশেদ নামের স্থানীয় এক সংবাদকর্মীর কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ভাইরাল ভিডিওটি ২০২০ সালের ঈদুল ফিতরের আগের। স্বাভাবিকভাবেই নিজের কথা বলেছিলাম। কিন্তু এভাবে ভাইরাল হবে বুঝতে পারিনি। শ্যামল চন্দ্র বর্মণ ভাইরাল হওয়ার পেছনে অবদান রাখা রাশেদুল ইসলাম রাশেদ ও জয়ন্ত সাহা জতন বলেন, আমার একটা ইউটিউব চ্যানেল আছে ‘আড্ডা মিডিয়া ৭১’ নামে। শখের বশে শ্যামল দার সহজ-সরল বক্তব্য ইউটিউবে আপ করি। আপ করার আট মাস পর আমার এক সহকর্মী জয়ন্ত সাহা জতন এক চায়ের আড্ডায় ভিডিওটি দেখে ডাউনলোড করে ফেসবুকে পোস্ট করে। মুহূর্তেই শেয়ার ও লাইক বাড়তে বাড়তে একসময় ভাইরাল হয়ে যায়।

এরপর থেকে এই শ্যামলকে নিয়ে অনেকেই নানা ধরণের কন্টেন্ট নির্মাণ শুরু করেন। এমনকি  হিরো আলমকে টেক্কা দিতে গান গাওয়াও শুরু করেন। তবে শেষ পর্যন্ত এই ভাইরাল হওয়াটাই কাল হয়ে দাঁড়ায় শ্যামলের জীবনে। 


নাম সিদ্দিক। ৫০০ টাকা চুরি করে ধরা পড়েছিলেন। জনতা ধরে গণধোলাই দেওয়ার সময় তিনি সকলের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘আমার ভুল হয়েছে ক্ষমা করে দ্যান। ’ গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার রহমতপুরের সিদ্দিক এখন ইউটিউবারদের কল্যাণে গোটা দেশের মানুষের কাছে পরিচিত। শুধু এই সংলাপটির কারণে সিদ্দিককে নিয়ে এখন পর্যন্ত বানানো হয়েছে হাজার হাজার ভিডিও। 

পেশায় একজন চোর হলেও ভাইরাল হওয়ার সুবাদে তিনি সম্প্রতি একটি ফুটবল ম্যাচে প্রধান অতিথি হিসেবেও উপস্থিত হয়েছিলেন। এমনকি তাকে নিয়ে এখন নিয়োমিত নির্মাণ হচ্ছে বিভিন্ন শর্টফিল্ম। যেগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন তো থেকেই যাচ্ছে। 

সম্প্রতি একটি ছোট ঘটনাকে কেন্দ্র করে আলোচনায় আছে অভিনেতা মীর সাব্বির ও পায়েল নামের এক উপস্থাপিকা। একটি অনুষ্ঠানে মজার ছলেই  অভিনেতা বরিশালের আঞ্চলিক ভাষায় পায়েলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এই মাতারি তুমি এইরহম উদলা গাইয়ে দাঁড়ায় আছো কিয়ের লাইগ্যা। এ সংলাপ শেষ হওয়ার পরপরই হাসতে থাকেন পায়েল। মঞ্চের সামনে বসা অতিথিরাও সমস্বরে হেসে উঠেন। 

কিন্তু বিপত্তি ঘটে পরের দিন এক ভিডিও বার্তায় পায়েল, অভিযোগ করেন  মীর সাব্বিরের এই  ‘কুরুচিপূর্ণ’ ভাবে এই মন্তব্য করেছেন এবং তাকে এরজন্য ক্ষ্মা চাইতে হবে। সব কিছু মিলিয়ে কয়েকদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষয়টি আলোচনায়। সাথে উপস্থাপিকা পায়েলও। অনেকেই বলছেন পায়েল নিজেকে পরিচিত করতে ভাইরাল হতে বা আলোচনায় রাখতেই এমনটি করছেন। এর আগেও এই উপস্থাপিকা তার একটি অনুষ্ঠানে এক অতিথিকে এমন একটি মন্তব্য করে ছিলেন না দিয়ে দিয়ে কয়েক দিন আলোচনায় ছিলেন। তাহলে কী তার এই অভিযোগের মূল উদ্দেশ্য ভাইরাল হওয়া।

বেশ অনেক দিন ধরেই দেখা যাচ্ছে শোবিজে অনেক নায়িকাই টিকটক, লাইকি বা সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন কিছু কর্মকান্ড করেন তা নেতিবাচক হলেও তিনি আলোচনায় চলে আসেন। পাশাপাশি দেখা যায় নিজেকে সুপরিচিত করতে ভালো  কাজে না থেকে বড় কোন তারকাদের নিয়ে এমন কিছু মন্তব্য করেন যা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া তাদের নিয়ে বেশ গরম থাকে। মাঝে দিয়ে তারা ভাইরাল হয়ে নিজেদের ফায়দা লুটে নেন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭