ক্লাব ইনসাইড

৮ মাস পেরোলেও শুরু হয়নি জাবির মসজিদ নির্মাণের কাজ


প্রকাশ: 18/11/2022


Thumbnail

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সালাম-বরকত হল ও আ ফ ম কামালউদ্দিন হল সংলগ্ন জরাজীর্ণ মসজিদ ভেঙে নতুন মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু হয় চলতি বছরের এপ্রিলে। শুরুতে নকশা জটিলতার কারণে কয়েকমাস কাজ বন্ধ রাখা হয়। অবশেষে নতুন নকশা প্রণয়ন করা হলেও বর্তমানে অর্থাভাবে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় গত শুক্রবার মসজিদে জুমার নামাজে দুই হলের কয়েকশ শিক্ষার্থীরা ছাড়াও সান্ধ্যকালীন কোর্সের শিক্ষার্থীরা এবং দর্শনার্থীরাও নামাজ পড়তে আসে। কিন্তু বর্তমানে ছাউনি দেয়া অস্থায়ী টিনশেড এ জায়গা না পাওয়ায় প্রায় তিন- চার শতাধিক মুসল্লী বাইরে বাগানে নামাজ আদায় করেন। আবার অনেকে বাইরেও নামাজের জায়গা না পেয়ে ফিরে যান। এদিকে অস্থায়ী টিনশেড মসজিদের তিনদিকে খোলা থাকায় মশা এবং শীতে নামাজ আদায় করতে সমস্যা হয় বলে জানা যায়। তাছাড়া খোঁজ নিয়ে জানা যায় গত মাসে মসজিদ থেকে দুইটি সিলিং ফ্যান চুরির ঘটনা ঘটেছে।

মসজিদের বিষয়ে শহীদ সালাম-বরকত হল এ যোগাযোগ করা হলে বলা হয় বলা হয়, কনসালট্যান্ট ফার্ম 'অ্যাকুমেন' কে একাধিকবার বলার পর গত আগষ্ট মাসের শুরুর দিকে ব্যাকডেটের মাধ্যমে বিস্তারিত নকশা প্রদান করে তারা। এতে দেখা যায় নকশাতে মসজিদের নিচতলায় ২৪৮ জন এবং দোতলায় ২৮৬ জন সহ মোট ৫৩৪ জনের নামাজের ব্যবস্থা থাকবে। তাছাড়া সেখানে মাত্র একটি টয়লেট ও অযুখানায় একসাথে আট জনের ওযু করার ব্যবস্থা রাখা হয়। তবে বাজেটে স্যানিটারী ও পয়ঃনিষ্কাষণ বাবদ তের লক্ষ ৯১ হাজার এবং বৈদ্যুতিক কাজ বাবদ তের লক্ষ ৪৪ হাজার টাকা উল্লেখ করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প অফিস সূত্রে জানা যায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১১টি আবাসিক হলে প্রায় ১২ কোটি টাকার সংস্কার কাজের বরাদ্দ দেয়া হয়। সংস্কার কাজের অংশ হিসেবে নতুন মসজিদ নির্মাণের জন্য দুই হলের সংস্কার বাবদ প্রাপ্ত অর্থ থেকে এক কোটি এবং কামালউদ্দিন হল থেকে বিশ লাখ সহ মোট এক কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নথিতে নতুন মসজিদ নির্মাণের উল্লেখ নেই বা মসজিদের কাজের জন্য আলাদা কোন বরাদ্দ নেই।

মসজিদ নির্মাণের কাজ কবে নাগাদ শুরু হবে এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ নুরুল আলম বলেন,‘ এই মসজিদ নিয়ে যখন নকশা প্রণয়ন করা হয় তখন কিভাবে প্ল্যান করা হয়েছে তা আমি জানি না। এমনিতেই আমাদের ঘাটতি বাজেট। মসজিদের জন্য আলাদা কোন বরাদ্দ ছিল না, এ বিষয়ে দুই হলের প্রভোস্টগণ বলতে পারবেন। হলের সংস্কার কাজ থেকে মসজিদের বাজেট দেয়া হয়েছে এক কোটি ২০ লাখ টাকা। কিন্তু আগের নকশার বদলে নতুন নকশায় পুরো মসজিদ তৈরি করতে তিন কোটি টাকার বেশি পরিমাণ অর্থ লাগবে। যা বর্তমানে আমাদের হাতে নেই। তারপরেও আমরা ট্রেজারার এবং প্রভোস্টদের সাথে বসে কিভাবে কি করা যায় দেখবো।

ছাত্রসংখ্যা বিবেচনা না করে অসামঞ্জস্যপূর্ণ নকশা প্রণয়ণের বিষয়ে সালাম বরকত হলের তৎকালীন প্রভোস্ট অধ্যাপক আলী আজম তালুকদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি যে কাগজে সাইন করেছিলাম সেখানে ধারণ ক্ষমতা ৭৫০ জন লেখা ছিল আমি যেটা জানতাম সেটাই আমি সবাইকে বলেছি। কিন্তু সালাম বরকত হল অফিসে মসজিদ নির্মাণ সংক্রান্ত নথি যাচাই করে দেখা যায় সেখানে গত বছরের ১০ ই এপ্রিল ৫৩৪ জন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন আলী আজম তালুকদারের স্বাক্ষরিত মসজিদের নকশা (ফ্লোর প্ল্যান) পাওয়া যায়। এ বিষয়ে পরবর্তীতে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,এটাতো হতেই পারে না। আমি পাঁচ-ছয়শ জনের কোন নকশায় সাইন করি নাই।

অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক নাসির উদ্দিনের নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইলে উনি বলেন অফিসে আমাদের প্রকৌশলী হাবিব সাহেব আছেন ওনার সাথে কথা বলে একটু জেনে নিয়েন এটুকুই আমার বলার ছিল। তবে প্রকৌশলী আহসান হাবীব এর সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার নাম্বার বন্ধ পাওয়া গেছে।

বিদ্যমান সম্যসার সমাধান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সালাম বরকত হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক সুকল্যান কুমার কুন্ডু বলেন, নতুন করে মসজিদের কাজে বাজেট বাড়াতে গেলে এস্টিমেট করতে হবে, এজন্য ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশনে প্রকল্প অফিস বলা হয়েছিল। প্রকল্প অফিস থেকে আর্কিটেকচারের জন্য পাঠানো হয়েছিল তারা নকশা করে দিয়েছে। গত দুইদিন আগে আমাদের প্রভোস্টদের সাথে একটা মিটিং হয়েছিল। সেখানেই নকশা নিয়ে আমাদেরকে বসতে হয়।

আ ফ ম কামালউদ্দিন হলের প্রভোস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, এ নিয়ে আমার কিছু বলার নেই, আমার কাছে এ নিয়ে কোন তথ্য নেই। এ বিষয়ে বাজেট বরাদ্দ আছে শহীদ সালাম বরকত হলের এক কোটি টাকা। এ বিষয়ে ঐ হলের প্রভোস্ট স্যার বলবেন, আর প্রকল্প অফিস এর সাথে যোগাযোগ কর।

মসজিদ নির্মাণে নিয়োজিত মেসার্স ফরমিলা আক্তার কনষ্ট্রাকশনের এমডি দাইয়ান বিন শাহজাহান আলাপকালে বলেন, কাজ করার ক্ষেত্রে আমাদের দিক থেকে কোন সমস্যা সেই। অথরিটি থেকে ওনারা আমাদেকে এপ্রুভড ড্রয়িং ডিজাইন সহ কাজের অনুমতি দিলে আমরা কাজ শুরু করতে পারি ।

মসজিদ নির্মাণ প্রসঙ্গে আ ফ ম কামালউদ্দিন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আবু নাইম বলেন, বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা বেড়েছে। তাই মসজিদ নির্মাণের ক্ষেত্রে আসন সংখ্যা খুবই গুরুত্বপর্ণ বিষয়। পাশাপাশি অন্যান্য সুবিধাও থাকতে হবে। রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় রোধে এবং এর যথেচ্ছ ব্যবহারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা প্রয়োজন। তাই বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তরিক হয়ে অতিসত্ত্বর কাজ শুরু করার দাবি জানাচ্ছি।

উল্লেখ্য ১৯৯০ সালে নির্মাণের কয়েকবছর পরই মসজিদের ছাদ ফেটে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা তৈরি হয়। এরপর ছোটখাট কিছু সংস্কার কাজ হলেও দীর্ঘদিন ঝুঁকি নিয়ে নামাজ আদায় করে আসছেন মুসল্লিরা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭