নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 03/02/2018
সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি নদী রক্ষা এবং পুনরুদ্ধারের জন্য একটি সমন্বিত কর্মসূচির আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করেন নদী রক্ষা দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত। নিজ কার্যালয়ে ‘যমুনা-পদ্মার স্থিথিশীলতার জন্য বিশদ প্রকল্প এবং জমি পুণরুদ্ধারের জন্য পদক্ষেপ’ এর মডেল উদ্বোধন কালে প্রধানমন্ত্রী এই সম্পর্কের কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, `বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ, যেখানে নদীগুলো কেবল আমাদের ঐতিহ্যই নয় বরং আমাদের জীবিকার সঙ্গেও সম্পৃক্ত।’ তিনি ঠিকই বলেছেন, আমাদের নদীগুলো মরে যাচ্ছে। সম্প্রতি বন্যায় দেশের ২৭ টি জেলা ও হাওর অঞ্চল বিধ্বস্ত হয়েছে। আসন্ন দিনগুলোতে বিধ্বংসী প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে এখনই মৃতপ্রায় নদীগুলো পুনরুদ্ধারে জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জন্য এই বন্যা এক সতর্কবার্তা। ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচন ও এরপর ক্ষমতায় দ্বিতীয়বার আসার পর শেখ হাসিনা নদী সম্পদের ব্যবস্থাপনা ও সুরক্ষার বিষয়ে জোর দিচ্ছেন।
বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের সংস্থা গঠন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বারবার নির্দেশনা এবং পরিবেশবাদীদের দাবির পরও ঢাকার আশেপাশের নদীসহ নদীগুলোকে বাঁচাতে ও নাব্যতা পুণরুদ্ধারে সামান্যই অগ্রগতি হয়েছে।
তবে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত স্বদিচ্ছা আছে। কিন্তু এটা যথেষ্ট নয়। নদী পুনরুদ্ধারের জন্য দেশের বিভিন্ন সংগঠন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সমন্বিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন। নদী পুনরুদ্ধারের জন্য অনেক কমিটি, আইন, নীতি ও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। তবে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
আমাদের নদীগুলো মরে যাচ্ছে। অনেক স্থানে পলি পড়ে বড় নদীগুলোর নাব্যতা হ্রাস পাচ্ছে। দেশের দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলের নদীগুলোর শুকিয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এর বাইরে বুড়িগঙ্গা এবং অন্যান্য অনেক নদীর দূষণ সমস্যার কথা তো সবারই জানা। আমাদের নদীগুলির ভবিষ্যৎ অন্ধকার বলেই মনে হয়।
এই অবনতি রুখতে প্রধানমন্ত্রীর ডাকে এই জরুরি সম্পদের যথাযথ ব্যবস্থাপনা অতি গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশবাদীরা দীর্ঘদিন ধরেই সক্রিয়। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি আমাদের প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান বিশাল জনসমর্থন পাবে। শুধুমাত্র একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক ডাক আমাদের নদীগুলোর জীবন ফিরিয়ে দিতে পারে।
নদী সংরক্ষণের প্রচারাভিযানের প্রথম ধাপ হতে পারে সফলভাবে নদী ও জলাভূমিগুলো দখল বন্ধ করা। আর দ্বিতীয় পদক্ষেপ হবে নদীর পাড়ে বৃক্ষ রোপণ করা। বনভূমি বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়ে স্থানীয়ভাবে বৃষ্টিপাত ঘটায়। বৃক্ষ ভূমিক্ষয় রোধ ও পানি যাওয়ার হার কমায়। তাই আকস্মিক বন্যার পরিবর্তে পানি ধীরে ধীরে বাড়ে, গরমের সময় পানি স্রোত রাখে। তাছাড়া গাছ পলল এবং দূষণকারী বর্জ্য ধরে রেখে নদীর পানির গুণগত মান বাড়ায়।
দেশের বিভিন্ন অংশে পানির প্রবাহ কমছে ভূগর্ভস্থ পানি অতি ব্যবহারের কারণে। পানির স্তর যখন নিচে নেমে যাওয়ার ফলে নদীতে পানি যাওয়ার বদলে পানি শুকিয়ে যায। তাই নদী বাঁচানোর আহ্বানের পাশপাশি ভূগর্ভস্থ পানি উত্তেলনের সংস্কৃতির বিষয়েও ভাবতে হবে।
নদী পুনরুদ্ধার একটি জটিল সমস্যা। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন নদী বাঁচানোর প্রধান বাধা, কারণ প্রধানমন্ত্রীর, মন্ত্রীদের এবং আদালতের নির্দেশকে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করে না। স্থানীয় রাজনীতিবিদরা নদী ও খাল দখলের প্রধান ক্রীড়ানক। যেকোনো মূল্যে নদী দখল ও দূষণ বন্ধ করতে স্থানীয় প্রশাসন এবং অন্যান্য কর্তৃপক্ষকে কেন্দ্রের মাধ্যমে শক্তিশালী বার্তা দেওয়া উচিৎ।
নদীগুলোকে রক্ষা করতে এখনই গুরুত্ব দিত হবে যেহেতু এখনো রক্ষা করা সম্ভব। ঢাকা চারপাশের নদী ও চট্টগ্রামের কর্ণফুলী রক্ষায় একটি উচ্চ স্তরের কমিটি গঠনে করে একটি ভাল কাজ করেছে সরকার। এটা অবশ্যই যথোপযুক্ত যে এমন সময়ে এই উদ্যোগ নেওয়া হলো। নদীতে হাজার হাজার টন শিল্প বর্জ্য, আবর্জনা এবং পয়োজলের ক্রমাগত নির্গমন বন্ধে এটি কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হয়। দূষিণকারীদের ক্ষমার কারণেই অতীতে শীতলক্ষ্যা নদী পরিষ্কারের প্রকল্প ব্যর্থ হয়েছে।
শিল্পাঞ্চল নদী থেকে দূরে স্থানান্তর করা প্রয়োজন। বুড়িগঙ্গা সংরক্ষণের জন্য হাজারীবাগ ট্যানারিকে সাভারে স্থানান্তর করা হয়েছে। দুর্ভাগ্যক্রমে এখন ধলেশ্বরী নদী দূষিত হচ্ছে।
এটা শুধু নদী ভরাট ও জমি দখলের সংস্কৃতি বন্ধ করারই উপযুক্ত সময় নয়, এছাড়া যেখানে সেখানে খনিজ আহরণ, নির্দিষ্ট অঞ্চলে বৃক্ষনিধনও বন্ধ হওয়া উচিত। আমদেরকে প্লাবন ভূমি বাস্তুসংস্থান পুনরুদ্ধার করতে হবে। শহরের বড় দুষণকারীদের আইনের আওতায় আনার সময় এটি এবং একই সঙ্গে পয়োনিষ্কাষণ ব্যবস্থা ও শহুরে এলাকার কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়ও বিনিয়োগ করতে হবে।
বাংলা ইনসাইডার/ডিজি/এমএইচ/জেডএ
সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
সাংবাদিক
ইমেইল: ishtiaquereza@gmail.com
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭