ইনসাইড গ্রাউন্ড

কেমন হতে পারে ব্রাজিল দল ও তাদের রণকৌশল


প্রকাশ: 18/11/2022


Thumbnail

ফুটবল মিশে আছে ব্রাজিলিয়ানদের রক্তে। মায়ের পেট থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরই সহজাত ফুটবল প্রতিভা পেয়ে যায় ব্রাজিলিয়ানরা। অলি-গলি থেকে মাঠ সবর্ত্রই দাপিয়ে বেড়ান ফুটবল নিয়ে। ফলে ফুটবল আর ব্রাজিল দুটো হয়ে উঠেছে সমার্থক শব্দ। ফুটবল বিশ্বকে ব্রাজিল উপহার দিয়েছে অসংখ্য প্রতিভার। যাদের পায়ের জাদুতে মোহনীয় হয়ে থাকতে হয়েছে সকলকেই। সেই লিওনিদাস ডি সিলভা থেকে পেলে, সক্রেটিস, কাফু, রোনালদো কিংবা হাল সময়ের নেইমার- সকলেই মাত করেছেন ফুটবল বিশ্ব। প্রতিটি বিশ্বকাপে তাই ব্রাজিল দল নিয়ে বাড়তি আগ্রহ থাকে সবার। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।

ফুটবল বিশ্বকাপের সফলতম দল ব্রাজিল। পাঁচবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কৃতিত্ব শুধু তাদেরই রয়েছে। তবে ২০ বছর ধরে কাঙ্খিত সেই শিরোপার দেখা পায়নি সেলেসাওরা। রাশিয়া বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর এবার শিরোপা জয়ের জন্যই কাতার বিশ্বকাপে যাচ্ছে দলটি। সে লক্ষ্য ভারসম্যপূর্ণ ও শক্তিশালী দল গড়েছে তারা। দেখে নেয়া যাক দলটির শক্তিমত্তার জায়গাগুলো।

গোলরক্ষক

গোলবারের নিচে ব্রাজিল কোচ তিতের প্রথম পছন্দ লিভারপুল তারকা আলিসন বেকার। বিশ্বকাপে বেকারের কাছে গোলবার সামলানোর দ্বায়িত্ব দেবে ব্রাজিল। তবে প্রিমিয়ার লীগের আরেক তারকা গোলকিপার এদেরসনও আছেন দুর্দান্ত ফর্মে। ম্যানসিটির হয়ে মৌসুমটা ভালই পার করছেন তিনি। তাদের সাথে রয়েছে পালমেইরাসের গোলরক্ষক ওয়েভেরটন।

রক্ষণভাগ

বেশ ভারসম্যপূর্ণ ও শক্তিশালী এক রক্ষণভাগ রয়েছে ব্রাজিলের। গত কয়েক বছর ধরে রক্ষণে নানা পরীক্ষা-নীরিক্ষা চালিয়েছেন ব্রাজিল কোচ তিতে। বলের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কাছে নিয়ে প্রতিপক্ষের উপর চাপ তৈরি করে ব্রাজিলের রক্ষণভাগ। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ১৭ ম্যাচে মাত্র ৫ গোল খেয়েছে দলটি। ডিফেন্সিভ ডুয়েল, এরিয়েল ডুয়েল এবং বল পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে সেলেসাওরা সাফল্য ঈর্ষণীয়। সেই সাথে প্রেসিং ফুটবল খেলে প্রতিপক্ষকে হতচকিত করে দেয়ার সামর্থ্যও রাখে দলটি। পাশাপাশি বলের দখল হারালে এই প্রক্রিয়ায় গিয়ে দ্রুত তা পুনরুদ্ধার করে তারা।

এবারের ব্রাজিল বিশ্বকাপ দলে রয়েছেন ৮ ডিফেন্ডার। অভিজ্ঞ থিয়াগো সিলভা ও দানি আলভেজের সাথে রয়েছেন তরুণ অ্যালেক্স সান্দ্রো-দানিলোর মত ফুটবলার। শুরুর একাদশে এদেরকে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। বিকল্প হিসেবে এদের মিলিতাও, মার্কিনিওস, অ্যালেক্স তেলেসরা তো রয়েছেনই। ফলে প্রতিপক্ষ দলগুলোকেই ভালই পরীক্ষায় ফেলবে ব্রাজিলের রক্ষণভাগ। 

মাঝমাঠ

ব্রাজিল দলের মাঝমাঠ বেশ বৈচিত্রময়। বলের দখল রেখে পজিশন প্লে তৈরিতে সিদ্ধহস্ত সেলেসাওদের মিডফিল্ড। এতে করে একদিকে যেমন ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ থাকে নিজেদের কাছে, অন্যদিকে আক্রমণভাগে বলের যোগান দিয়ে প্রতিপক্ষের ডি বক্সে একের পর এক আক্রমণ তৈরি করে তারা।

মিডফিল্ডে ব্রাজিলের অন্যতম কান্ডারি কাসেমিরো। গতি আর বুদ্ধিমত্তার জন্য তিতের মূল একাদশের নিয়মিত সদস্য তিনি। এছাড়াও লিভারপুল তারকা ফাবিনিও এবং ম্যানচেষ্টার ইউনাইটেডের ফ্রেদের উপর আস্থা রাখবেন তিনি। তাদের সাথে থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে লুকাস পাকেতার। বিকল্প হিসেবে থাকবেন ব্রুনো গিমারেস, এভারটন রিভেইরো।

আক্রমণভাগ

তারকার ছড়াছড়ি ব্রাজিলের আক্রমণভাগে। ফলে এবারের বিশ্বকাপে তারকা সমৃদ্ধ এক আক্রমণভাগ নিয়েই মাঠের লড়াইয়ে নামবে সেলেসাওরা। আক্রমণভাগের মূল নেতা ব্রাজিলের প্রাণভোমরা নেইমার। চলতি মৌসুমে গোল করা এবং করানো দুই ক্ষেত্রেই দারুণ সফলতা দেখিয়েছেন তিনি। সেই সাথে ছন্দে আছেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়রও। রদ্রিগো, রাফিনিয়া, রিচার্লিসন এবং গ্যাব্রিয়েল জেসুসরাও যেন উড়ছেন নিজ নিজ ক্লাবের হয়ে। গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লি, আন্তনি, পেদ্রোও রয়েছেন ফর্মে। ফলে আক্রমণভাগের কান্ডারিদের খুঁজে নিতে মধুর সমস্যায় পড়তে হতে পারে তিতেকে।

সাম্প্রতিক সময়ে ব্রাজিল দলের পারফরম্যান্সেও ফরোয়ার্ডদের অবদান স্পষ্ঠ করে দেয়। পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর থেকে ম্যাচপ্রতি ৯৬.৯ শতাংশ বেশি গোলের দেখা পেয়েছে ব্রাজিল। ডি–বক্সে ৭২.৭ শতাংশ বল নিজেদের দখলে রেখেছে দলটি। ২০২২ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ব্রাজিল প্রতি ৯০ মিনিটে গড়ে ৫২৪.১৩টি পাস খেলেছে, যার মাত্র ৫.৬১ শতাংশ হচ্ছে লং পাস। প্রতি ম্যাচে গড়ে ২১৫টি সাইড পাস এবং ফাইনাল থার্ডে পাসের ক্ষেত্রে সেটি ১৪২.৬৩।

নেইমারকে কেন্দ্র করে আক্রমণ পরিকল্পনা সাজাবে ব্রাজিল। দুই উইংয়ে ভিনিসিয়ুস এবং রাফিনিয়াকে রেখে মাঝে খেলবেন নেইমার। গোল করার ক্ষেত্রে রিচার্লিসনও হয়ে উঠতে পারেন ট্রাম্প কার্ড।

ফর্মেশন

৪-৪-৩ ফর্মেশনে খেলাটাই পছন্দ তিতের। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একটি নির্দিষ্ট ফর্মে না খেলিয়ে বিভিন্ন ছোট ছোট কৌশল নিতে দেখা গেছে তিতেকে। নির্দিষ্ট একটি কাঠামোয় ম্যাচ শুরু করলেও, দ্রুত তা বদলে নতুন ফর্মেশনে খেলান দলকে। পরিস্থিতি বিবেচনায় আবার পরিবর্তন করেন ফর্মেশনের। এতে যেমন বৈচিত্র্যের সমাবেশ ঘটে, তেমনি প্রতিপক্ষও তাদের রণকৌশল বুঝতে হিমশিম খায়। কাতার বিশ্বকাপ হয়তো এমন কিছুই করবেন তিনি। তবে মাঠে বেশির ভাগ সময় বলের ওপর নিয়ন্ত্রণ রেখে আধিপত্য বিস্তার করে সামনে এগোনোর চেষ্টা করবে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭