ইনসাইড গ্রাউন্ড

ম্যাজিক্যাল ম্যাগিয়ার্সদের হতাশার বিশ্বকাপ


প্রকাশ: 19/11/2022


Thumbnail

দক্ষিণ আমেরিকা ঘুরে আবার ইউরোপে ফেরে ফুটবল বিশ্বকাপের আসর। সুইজারল্যান্ডে ১৬ জুন থেকে ৪ জুলাই অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চম ফুটবল বিশ্বকাপ। নানা কারণে এই বিশ্বকাপ স্মরণীয় হয়ে আছে ইতিহাসে। অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে ধীরে ধীরে ঘুরে দাড়াতে শুরু করেছে ইউরোপ। আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বকাপ ফুটবল হয়ে উঠেছিল সব ভুলে একটু খানি হাফ ছেড়ে বাঁচার সুযোগ। এর আগেই বিশ্বকাপ উৎসবের উপলক্ষ্যে পরিণত হলেও, ততদিনে এর মাত্রা বেড়ে যায় বহুগুণে।

এটিই ইতিহাসের প্রথম বিশ্বকাপ, যেটা টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়। প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ দেখার সুযোগ পায় সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ। ১৬টি দল অংশ নেয় ১৯৫৪ বিশ্বকাপে। যাদের মধ্যে ৮টি বাছাই এবং ৮টি অবাছাই দল। প্রতিটি গ্রুপের বাছাই দল দুটি শুধু অন্য দুটি অবাছাই দলের সঙ্গে খেলবে। নির্ধারিত সময়ের খেলা ড্র হলে ৩০ মিনিট সময় অতিরিক্ত খেলা হবে। প্রতি গ্রুপের সেরা দুটি খেলবে কোয়ার্টার ফাইনালে। অংশ নেয়া দলগুলোর মধ্য ১২টি ইউরোপের। দক্ষিণ আমেরিকার দুটি। উত্তর আমেরিকা ও এশিয়া থেকে অংশ নেয় ১টি করে দল। এই আসর দিয়ে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপের মঞ্চে দেখা যায় স্কটল্যান্ড, তুরস্ক ও দক্ষিণ কোরিয়াকে। দলগুলোক ৪টি গ্রুপে ভাগ করা হয়।

এ বিশ্বকাপকে বলা হয় গোলের বিশ্বকাপ। প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই হয় গোলবন্যা। ২৬ ম্যাচে গোল হয় ১৪০টি। ম্যাচপ্রতি গোল গড় ৫.৩৮। যা এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের ইতিহাসের সর্বোচ্চ।

গ্রুপ-১ থেকে একটি করে জয় ও ড্রয়ে ৩ পয়েন্ট করে পায় ব্রাজিল ও যুগোস্লোভিয়া। তবে গোল ব্যবধানে এগিয়ে থেকে গ্রুপ সেরা হয় ব্রাজিল, রানার্সআপ যুগোস্লোভিয়া। বাদ পড়ে ফ্রান্স ও মেক্সিকো।

গ্রুপ-২ থেকে দুই জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ আটে উঠে টুর্নামেন্টের হট ফেভারিট হাঙ্গেরি। এক ম্যাচ করে জেতা পশ্চিম জার্মানি ও তুরস্কের মধ্যে হয় প্লে-অফ ম্যাচ। সেখানে ৭-২ গোলে জিতে কোয়ার্টার-ফাইনালের টিকিট পায় পশ্চিম জার্মানি। বাড়ির পথ ধরে তুরস্ক ও দক্ষিণ কোরিয়া। গ্রুপপর্বের খেলায় এই গ্রুপেই হয় সবচেয়ে বেশি গোল। ৫ ম্যাচের মধ্যেচারটিতেই হ্যাটট্রিক দেখে বিশ্ব।

গ্রুপ-৩ থেকে দুটি  করে জয় পায় উরুগুয়ে ও অস্ট্রিয়া। এখানেও গোল ব্যবধানে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় উরুগুয়ে। রানার্সআপ হয় অস্ট্রিয়া।গ্রুপ-৪ থেকে ৩ পয়েন্ট নিয়ে প্রথম দল হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনালে যায় ইংল্যান্ড। আর প্লে-অফ ম্যাচে ইতালিকে ৪-১ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয় দল হিসেবে শেষ আটে উঠে স্বাগতিক সুইজারল্যান্ড।

কোয়ার্টার-ফাইনালের প্রথম ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে গোল উৎসব করে অস্ট্রিয়া। সুইসদের ৭-৫ গোলে বিধ্বস্ত করে অস্ট্রিয়া। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এক ম্যাচে ১২ গোলের রেকর্ড হয়। যা এখন পর্যন্ত ভাঙতে পারেনি কোন দল। আরেক ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ৪-২ গোলে হারায় উরুগুয়ে। যুগোস্লোভিয়ার বিপক্ষে ২-০ গোলে পশ্চিম জার্মানি এবং ব্রাজিলকে ৪-২ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনালে চলে যায় হাঙ্গেরি।

৩০ জুন বাসেলে প্রথম সেমিতে মুখোমুখি হয় অস্ট্রিয়া ও পশ্চিম জার্মানি। সে ম্যাচে অস্ট্রিয়াকে ৬-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে জার্মানি। লুসানে দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে হাঙ্গেরি-উরুগুয়ের ম্যাচ নির্ধারিত সময়ে ২-২ সমতায় শেষ হয়। অতিরিক্ত সময়ে সান্দোর ককসিচের জোড়া গোলে ফাইনালে উঠে হাঙ্গেরি।

এরপরের গল্পটা এক দেশের জন্য চরম হতাশার। অন্য দেশের জন্য নতুন যুগের সূচনা। বার্নের ভাঙ্কডর্ফ স্টেডিয়ামে ফাইনালে মুখোমুখি হয় পুঁজিবাদী জার্মানি ও সমাজতান্ত্রিক হাঙ্গেরি। যারা গ্রুপ পর্বে ৮ গোল দিয়েছিল জার্মানিকে। ম্যাচের শুরুতেও সেই ধারা ফিরিয়ে এনেছিল হাঙ্গেরি। ৮ মিনিটের মধ্যেই পুসকাস আর চিবরের গোলে বড় লিডের স্বপ্ন দেখছিলো হাঙ্গেরি। তবে দারুণভাবে ঘুরে দাড়ায় জার্মানরা। ১৮ মিনিটের মধ্য মারলক এবং হেলমুট রাহনের গোলে সমতায় ফেরে জার্মানি। ৮৪ মিনিটে রাহনের দ্বিতীয় গোলে প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা জেতে পশ্চিম জার্মানি।

সেদিন ফাইনাল দেখতে স্টেডিয়ামে এসেছিলো প্রায় ৬৩ হাজার দর্শক। তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ একটি ম্যাচ দেখার পাশাপাশি তারা হয়ে গেলো ইতিহাসের সাক্ষী। সে ইতিহাস সেরা দলের শিরোপা না জেতার ইতিহাস। অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠা হাঙ্গেরির বেদনায় নীল হওয়ার ইতিহাস। ১৯৫০ থেকে ১৯৫৬ সালে হাঙ্গেরির গণ–আন্দোলন শুরুর আগপর্যন্ত ৫০ ম্যাচ খেলে দলটির একমাত্র হার জার্মানদের বিপক্ষে এই ফাইনালে। যা ম্যাজিক্যাল ম্যাগিয়ার্সদের বঞ্চিত করে আরাধ্য বিশ্বকাপ শিরোপা থেকে। আর ফুটবল ইতিহাসে ম্যাচটি অ্যাখা পায় "মিরাকল অব বার্ন" হিসেবে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭