ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

আয়োজক হিসেবে রাশিয়া-চীনের চেয়ে উপযুক্ত কাতার


প্রকাশ: 19/11/2022


Thumbnail

অভিবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে বৈরি আচরণ কিংবা গণতন্ত্রের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ নারী-পুরুষের অবাধে মেলামেশার স্বাধীনতা না থাকা, এই ধরনের নানারকম বাস্তবিকতার জন্য আলোচনয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার। এখানেই দু’দিন বাদে শুরু হতে যাচ্ছে মাসব্যাপী বিশ্বকাপ ফুটবলের মতো সবচেয়ে বড় আয়োজন। চার বছর পর ফুটবলপ্রেমিদের অপেক্ষার প্রহর গোনা শেষ হচ্ছে, রোববার, ২০ নভেম্বর।

গতবারের বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক দেশ ছিল রাশিয়া। এদিকে, সর্বশেষ শীতকালিন অলিম্পিকের আয়োজক দেশ ছিল চীন। তবে এই দুই দেশের তুলনায় খেলাধুলার উপযুক্ত দেশ হিসেবে নাম লেখিয়েছে কাতার।

সর্বোপরি, কাতারকে আয়োজক দেশ হিসেবে চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্তের সময় পশ্চিমাদের তুমুল সমালোচনা শুরু হয়। যদিও দেশটির বিদ্বেষপূর্ণ শাসনব্যবস্থা ও নিছক ত্রুটির মধ্যে পার্থক্য করতে ব্যর্থ হয়েছে অনেকে। তবে এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার যে অনেক সমালোচক শুধু মুসলামান বা ধনী ব্যক্তিদের পছন্দ করেন না বলেই এই সমালোচনা।

কাতার একটি গণতান্ত্রিক দেশ নাই হতে পারে। দেশটির পূর্ববর্তী আমির, কোনও প্রকার জনপ্রিয়তার চাপে নয়, বরং এক ধরণের নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন করে গেছেন। তিনি আল-জাজিরা নামে একটি সম্প্রচার মাধ্যমও স্থাপন করেছেন যেটি তার আরব প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে অনেক বেশি স্পষ্টভাষী, এমনকি নিজ দেশ কাতারেও।

যেখানে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের শাসনকালে সেখানে ইউক্রেন যুদ্ধকে যুদ্ধ হিসাবে বর্ণনা করার জন্য আপনাকে কারাগারে যেতে হতে পারে, নিন্দা করা তো দূরের কথা।

অন্যদিকে, চীন থেকেও ভিন্ন পার্থক্য রয়েছে কাতারের, যেখানে রাজনৈতিক ভিন্নমতের কোনও মূল্য নেই বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া, ১৯৭৮ সালে ১১তম ফিফা বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় আর্জেন্টিনায়। সামরিক শাসনে সন্ত্রস্ত আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ আয়োজনের অনুমতি দেওয়ায় ফিফাকেও কঠোর সমালোচনা সহ্য করতে হয় সে সময়। এমনকি আয়োজনকারী আর্জেন্টিনার জান্তা সমালোচকদের সেখানে নামতেও দেয়নি।

বিশ্বকাপের আয়োজন করতে গিয়ে অভিবাসী শ্রমিক ইস্যুতে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে কাতার। তবে এই একটি ব্যাপার, আমেরিকা বা ইউরোপের যে কোনও দেশের চেয়ে বিদেশি শ্রমিকদের জন্য কাতারের দরজা সব সময় খোলা। দেশটিতে মোট জনসংখ্যার মাত্র ১২ শতাংশ কাতারের নাগরিক, বাকীরা অন্য দেশের।

এই অভিবাসীদের সঙ্গে কখনও কখনও দুর্ব্যবহার করা হয়। তবে সর্বাধিক উপার্জনকারী দেশ হওয়ায় অভিবাসী শ্রমিকরা কাতারকেই বেছে নেন সবার আগে। কেননা এতে তাদের জীবনমান বদলে যায়।

যে বিষয়টি স্পষ্ট হচ্ছে তা হলো দু’বার অলিম্পিক আয়োজন চীনকে আরও গণতান্ত্রিক করে তোলেনি। অথচ বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ কাতারের শ্রম আইনকে উন্নীত করেছে।

কাতারকে হোমোফোবিয়ার (সমকামিতা বা সমকামিদের প্রতি নেতিবাচক ধারণা প্রকাশ কিংবা ভয় পাওয়া হলো হোমোফোবিয়া বা সমকামভীতি) আস্তানা বলে দাবি করাটাও বিভ্রান্তিকর ধারণা। সমকামী যৌনতা বেআইনি, এটা বাস্তব, কিন্তু বিয়ের বাইরে সব যৌনতাও তাই। এক্ষেত্রে এই আইন লঙ্ঘনের জন্য কয়েকটি মামলাও রয়েছে। এ ধরনের রক্ষণশীল কিন্তু কদাচিৎ প্রয়োগ করা আইনগুলো উন্নয়নশীল বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই, এমনকি প্রায় সব মুসলিম দেশেই প্রচলিত। যেখানে কাতারও এর বাইরে নয়।

কাতার বিশ্বকাপ আয়োজকের গৌরব অর্জনের জন্য ঘুষ দিয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এটি সত্য হতেও পারে, যদিও কোনও সুস্পষ্ট প্রমাণ জনসমক্ষে প্রকাশ পায়নি। তবে যদি তাই হয়, তাহলে এটি কাতারের চেয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবল পরিচালনাকারী সংস্থা ফিফাকে বেশি দায়ী করে।

বলা হচ্ছে, বিশ্বের ধনী দেশগুলোর কাছেই যাচ্ছে বড় বড় আয়োজন। যদিও খেলাকে প্রভাবমুক্ত করা কর্তৃপক্ষেরই দায়িত্ব।

আয়োজক হিসেবে কাতারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় যে অভিযোগ সেটি আবহাওয়া ও পরিবেশ নিয়ে। অতিমাত্রায় উষ্ণ আবহাওয়ার কারণে আয়োজনকে যেন প্রশ্নবিদ্ধ না করা হয় সেকারণে প্রতিটি স্টেডিয়াম শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এবং পরিবেশবান্ধব করে তৈরি করা হয়েছে। আয়োজকদের দাবি, ইভেন্টটি কার্বন-নিরপেক্ষ হবে, যদিও তা সন্দেহজনক মনে করছেন সমালোচকরা। তবে কিছু অসুবিধা তো রয়েছেই। কাতারের দক্ষ প্রকৌশলীদের ধন্যবাদ না দিলেই নয়, কারণ, স্টেডিয়ামগুলোকে শীতল করতে হলে খুব একটা দূষণ ঘটবে না যতটা আপনি কল্পনা করছেন। ফিফা বলছে, ৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড ব্যবহারে এ বছর বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণের তুলনায় নিঃসরণ ঘটবে মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য এক শতাংশ।

এই মুহূর্তে বিশ্বকাপ আয়োজনের ভাবনাটাই মূখ্য বিষয়। মধ্যপ্রাচ্যে বহু ফুটবলপ্রেমি রয়েছে, যদিও এর আগে সেখানে আয়োজন হয়নি ফুটবল বিশ্বকাপের। শুধু তাই নয় কোন মুসলিম দেশেও হয়নি এমন আয়োজন। সুতরাং, বলা চলে, বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য কাতার একটি উপযুক্ত দেশ।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭