আগামী তিন মাসের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। সিদ্ধান্তগুলো আগামী নির্বাচন, রাষ্ট্রপরিচালনা এবং দলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সিদ্ধান্তগুলো তুমি কিভাবে নেন তার ওপর দেশের রাজনৈতিক মেরুকরণ এবং ভবিষ্যতের অনেক কিছু নির্ভর করছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। যে পাঁচটি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতিকে নিতে হবে তার মধ্যে রয়েছে-
১. নতুন রাষ্ট্রপতি: বর্তমান রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে আগামী এপ্রিলে। সংবিধান অনুযায়ী আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হবে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হয় জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্যদের ভোটে। সে কারণে আওয়ামী লীগ যাকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে চূড়ান্ত করবে তিনি আগামী রাষ্ট্রপতি হবেন। এই রাষ্ট্রপতির অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচন অন্য যেকোন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্বাচনের চেয়ে ব্যাতিক্রম এবং স্পর্শকাতর। কাজেই ওই নির্বাচনের গুরুত্ব অনেক বেশি। আর তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাকে আগামী রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করবেন সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রহণ করবেন আগামী তিন মাসের মধ্যে।
২. আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক: আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আগামী ২৪ ডিসেম্বর। এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি হবে। নতুন কমিটিতে শেখ হাসিনা যে আবার সভাপতি হচ্ছেন এটা মোটামুটি নিশ্চিত। কিন্তু দলের সাধারণ সম্পাদক কে হবে এ নিয়ে নানামুখী আলাপ-আলোচনা চলছে। শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কে হবেন এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আগামী ২৪ ডিসেম্বরের মধ্যে তাকে দলের সাধারণ সম্পাদক কে হবে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। এবং এই সিদ্ধান্তের ওপর আওয়ামী লীগের আগামী দিনের পথ চলা অনেকখানি নির্ভর করবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
৩. মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান: জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান পদের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে গত ২২ সেপ্টেম্বর। এখন পর্যন্ত প্রায় দুই মাস অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু নতুন চেয়ারম্যান মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। স্পিকারের নেতৃত্বে একটি কমিটি নতুন মানবাধিকার মানবাধিকার কমিশন গঠনের কাজ করছে বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কে হবেন মানবাধিকার কমিশনের নতুন চেয়ারম্যান? এটা এই মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যখন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এবং এই অপপ্রচারের কারণে পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশের ওপর নানারকম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে, ঠিক সেইসময় মানবাধিকার কমিশনের স্বচ্ছতা এবং একটি দৃশ্যমান স্বাতন্ত্র্য মানবাধিকার কমিশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য এরকম একটি গ্রহণযোগ্য মানবাধিকার কমিশন গঠন করা দরকার বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। নতুন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কে হবেন সেটিও এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। কারণ এর আগে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট বাংলাদেশ সফরে গুমের বিষয়টি তদন্তের জন্য একটি নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করার কথা বলেছিল। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এম আব্দুল মোমেন বলেছেন, আমাদের যেহেতু জাতীয় মানবাধিকার কমিশন রয়েছে কাজেই মানবাধিকার কমিশনই এই বিষয়ে তদন্ত করার সক্ষমতা রাখে। কিন্তু এখন মানবাধিকার কমিশন না থাকার কারণে এটি নিয়ে সরকারকে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। যেকোন সময়ে মানবাধিকার কমিশন গঠন করা জরুরি এবং এটি হয়তো প্রধানমন্ত্রী খুব শিরগিরই করবেন বলে জানা গেছে।
৪. মন্ত্রিপরিষদ সচিব: প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদ হলো মন্ত্রিপরিষদ সচিব। মন্ত্রিপরিষদ সচিব কে হবেন এটিই এখন খুব বড় একটি প্রশ্ন। বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব দুবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন। আগামী ১৫ ডিসেম্বর তার চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। নতুন করে তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না এটা মোটামুটি নিশ্চিত। অনেকেই মনে করছেন যে, প্রধানমন্ত্রী হয়তো মন্ত্রিপরিষদ সচিব কে হবে তা চূড়ান্ত করে ফেলেছেন। এবং সেক্ষেত্রে পানিসম্পদ সচিব কবির বিন আনোয়ারের কথা শোনা যাচ্ছে। কিন্তু এটির চূড়ান্ত ঘোষণা আসেনি। এটি এখন সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকা একটি বিষয়। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানা গেছে।
৫. নতুন পুলিশ প্রধান: বর্তমান পুলিশ প্রধানের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে আগামী জানুয়ারি মাসে। তিনি কি আবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাবেন নাকি নির্বাচনের আগে সরকার নতুন পুলিশ প্রধান (আইজিপি) নিয়োগ করবেন। এটি এখন একটি বড় কৌতূহল এবং প্রশ্ন। এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই নিতে হবে।
এই পাঁচটি সিদ্ধান্তের ওপর সরকার এবং রাজনীতির গতি-প্রকৃতি অনেকখানি নির্ভর করছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।