ইনসাইড পলিটিক্স

আওয়ামী লীগের কাউন্সিল কি হবে কেবল আনুষ্ঠানিকতা?


প্রকাশ: 21/11/2022


Thumbnail

আগামী ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এবার কাউন্সিল নানাদিক থেকে ভিন্নতর। অন্যান্য বারের মতো এবার দুই দিনব্যাপী কাউন্সিল হবেনা, কাউন্সিল হবে মাত্র এক দিনে। আওয়ামী লীগের মতো একটি সর্ববৃহৎ দলের কাউন্সিল একদিনে হওয়াটা যথাযথ কিনা সেই প্রশ্ন উঠেছে। কারণ অনেকগুলো বিষয়, সাধারণ সম্পাদকের বিপোর্ট এবং তার ওপর আলোচনা, কাউন্সিলরদের বিভিন্ন বিষয়ে মতামত ইত্যাদি সবকিছু একসঙ্গে একদিনে করা কিভাবে সম্ভব তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের কাউন্সিল সাধারণত তিনদিন, কখনো কখনো দুইদিন হয়ে থাকে। কিন্তু একদিনে এত বড় রাজনৈতিক দলের একটি কাউন্সিলে কিভাবে সব আলোচনা হবে তা একটি বড় রাজনৈতিক প্রশ্ন বটে। আর এ কারণেই মনে করা হচ্ছে এবার আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হচ্ছে কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। আর এই আনুষ্ঠানিকতা হওয়ার কারণেই এবার কাউন্সিলের খুব বড় ধরনের রদবদল হবে না বলেই অনেকেই মনে করছেন এবং সে রকম আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের আগে সাধারণত প্রথা অনুযায়ী বিভিন্ন জেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই ধারাবাহিকতায় গাজীপুর, কুমিল্লা সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জেলার সম্মেলনগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব সম্মেলনে দেখা যাচ্ছে যে, পুরনো নেতৃত্বই মোটামুটি বহাল থেকেছে, খুব কম ক্ষেত্রেই নেতৃত্বে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে। স্থানীয় পর্যায়ের সম্মেলনগুলো সুস্পষ্টভাবে একটি বার্তা দিয়েছে। আর তাহলো আওয়ামী লীগ এখনই নেতৃত্বের বড় কোনো পরিবর্তনের পক্ষে নয় বা এরকম পরিবর্তন এখন করছে না। এর পিছনে কিছু যুক্তিও রয়েছে। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা বলছেন যে, সামনে নির্বাচন এবং বিরোধী দলের আন্দোলন এরকম পরিস্থিতিতে এক বছরের মধ্যে একটি সম্পূর্ণ নতুন কমিটি যদি গঠন করা হয় সেই কমিটি কতটুকু গুছিয়ে উঠতে পারবে এবং আন্দোলন মোকাবেলা করতে পারবে তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিভিন্ন রকম প্রশ্ন রয়েছে। আর এ কারণেই হয়তো আওয়ামী লীগ ঝুঁকি নিতে চাইবে না বা ঝুঁকি নেয়ার পক্ষপাতীও নয়। আর সে কারণেই আওয়ামী লীগের এবারের কাউন্সিল সেফ আনুষ্ঠানিকতা হতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। ছোটখাট কিছু পরিবর্তনের বাইরে বড় ধরনের পরিবর্তন না হতে পারে এমন আশঙ্কা আওয়ামী লীগের ছড়িয়ে পড়ছে। আর সে কারণেই কাউন্সেলি শুরুতেই যে ধরনের আশাবাদ, উৎসাহ-উদ্দীপনা এবং চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছিল তা ক্রমশ আস্তে আস্তে ঝিমিয়ে পড়তে শুরু করেছে। 

অনেকে মনে করছেন যে, অন্যান্য জেলাগুলোর ধারায় যদি কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে নেতৃত্বে বড় পরিবর্তন না ঘটে তাহলে এই কাউন্সিলটি হবে কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। এই কথা ঠিক আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে সভাপতি পদে কোন পরিবর্তন হবে না। এবং এটি আওয়ামী লীগের নির্ধারিত একটি বিষয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে বর্তমান সভাপতি শেখ হাসিনাই থাকবেন। কিন্তু সাধারণ সম্পাদক নিয়ে অনেকের অনেক রকম প্রত্যাশা ছিল। অনেকে মনে করেছিলেন যে, সামনে যে আন্দোলন-সংগ্রাম, নির্বাচন সবকিছু মিলিয়ে এমন একজনকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক করা উচিত যিনি মাঠের পরিস্থিতি বুঝেন, রাজপথে আন্দোলন করতে পারেন। পাশাপাশি কর্মীদেরকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারেন। 

ওবায়দুল কাদের দ্বিতীয় দফায় সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর অসুস্থ ছিলেন। এরপর দীর্ঘদিন তিনি দলীয় কার্যক্রম থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে করোনার প্রকোপ শুরু হলে তিনি ঘরে থেকেই বক্তব্য দিতেন। কিন্তু গত কিছুদিন ধরে তার মধ্যে একটা চাঞ্চল্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তিনি কঠিন পরিশ্রম করছেন, সব জায়গায় তিনি উপস্থিত হয়ে ‘খেলা হবে স্লোগান’ কে জনপ্রিয় করে তুলছেন। এর মধ্যে অনেকেই মনে করছেন যে, তিনি হয়তো বা আরেকবার দলের সাধারণ সম্পাদক পদে থেকে যাবেন। অন্যান্য নেতৃত্বও খুব একটা বড় ধরনের পরিবর্তন হবে না। এই ঘটনাই যদি সত্যি হয় তাহলে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল নেতাকর্মীদের জন্য এক ধরনের হতাশার বার্তাই বয়ে নিয়ে আসবে। কারণ কর্মীরা প্রত্যাশা করে যে, দলের কাউন্সিলে নেতৃত্বের একটা বড় পরিবর্তন আসবে। এবং তরুণ উদীয়মান বিরোধী দলের আন্দোলনকে মোকাবিলা করতে সক্ষম এমন পরীক্ষিত ত্যাগী নেতাদেরকে সামনে নিয়ে আসা হবে। সেটি যদি না হয় তাহলে পরে আওয়ামী লীগের এই কাউন্সিল আনুষ্ঠানিকতা কর্মীদের মধ্যে হতাশাকে আরেকটু খানি বাড়িয়ে দিবে হয়তো।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭