ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

আন্তর্জাতিক ইভেন্টে বেড়েছে স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত


প্রকাশ: 23/11/2022


Thumbnail

বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক মানের খেলার আয়োজনে, আয়োজকদের জন্য গণতান্ত্রিক কোনও লিটমাস পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। নাৎসি অলিম্পিক, ১৯৩৬ সালের গ্রীষ্মকালিন একটি অলিম্পিক যা জার্মানির বার্লিনে অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৩১ সালে বার্সেলোনায় অনুষ্ঠিত আইওসির ২৯তম সেশনে স্বাগতিক শহর হিসেবে বার্লিনের নাম উঠে আসে। এই অনুমোদন নানা বিতর্কের জন্ম দিলেও বার্লিন অলিম্পিক ছিল নাৎসি শাসকগোষ্ঠীর জন্য প্রচারণা চালানোর এক সুবর্ণ সুযোগ। শুধু তাই নয় ১৯৭৮ সালে ১১তম ফিফা বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় আর্জেন্টিনায়। সামরিক শাসনে সন্ত্রস্ত আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ আয়োজনের অনুমতি দেওয়ায় ফিফাকেও কঠোর সমালোচনা সহ্য করতে হয় সে সময়।

কিন্তু ৩০ বছর আগে, বেশিরভাগ টুর্নামেন্ট গণতন্ত্রের ওপর ভিত্তি করেই সংঘটিত হয়েছিল বলে ধরা হয়। গত এক দশকের মধ্যে ২০২২ সালে পুরুষদের ফুটবল বিশ্বকাপের মতো আন্তর্জাতিক খেলার ইভেন্ট এবার হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে। এবারও কি সেই স্বৈরাচারী সিদ্ধান্তের প্রভাব লক্ষণীয়?

কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডাম স্কার্ফ তার দুই সহকর্মীর সংকলিত তথ্য বলছে, ফুটবল খেলার আয়োজনেস্বৈরাচারীসিদ্ধান্তের প্রভাব ১৯৪৫ থেকে ১৯৮৮ সালের ৩৬ শতাংশ থেকে ১৯৮৯ থেকে ২০১২ সালে ১৫ শতাংশে নেমে আসে। যদিও বিশ্বে গণতান্ত্রিক দেশের সংখ্যাও শীতল যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে হ্রাস পেয়েছে। এখন আবার সেই প্রভাব বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭ শতাংশ। তবে সম্প্রতি সেই প্রভাব গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তকে হার মানিয়েছে বলে ধারণা করছেন কেউ কেউ।

এই প্রভাব যদি লক্ষ্য করা যায় তাহলে দেখা যাবে, ২০০৮ সালের পর চীন দুটি অলিম্পিক বড় ইভেন্টের আয়োজক ছিল। অন্যদিকে, রাশিয়া একটি অলিম্পিক এবং একটি বিশ্বকাপসহ বেশ কয়েকটি ইভেন্টের আয়োজক ছিল।

উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপ শুধু ১৯৮৩ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত গণতান্ত্রিক দেশে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তারপর থেকে, নির্বাচিত ছয়টি আয়োজকদের মধ্যে চারটিইস্বৈরাচারী

হাস্যকরভাবে, এই প্রবণতা মূলত গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকেই উদ্ভূত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, বড় খেলার ইভেন্টগুলো আয়োজক দেশগুলোর সঙ্গে একধরনের অস্বাভাবিক চুক্তির মাধ্যমে হয়। খেলার আয়োজক দেশগুলো শহরকে কেন্দ্র করে ব্যয়বহুল স্টেডিয়াম নির্মাণ করে, যেগুলো পরবর্তীতে খুব কমই ব্যবহার করা হয় এবং যা আশেপাশের অঞ্চলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ওপর তেমন কোনও প্রভাব ফেলে না। ফলস্বরূপ, করদাতাদের কাছে দায়বদ্ধ সরকারগুলো আয়োজক হওয়ার বিষয়ে কম উত্সাহী হয়। চলতি বছর চারটি গণতান্ত্রিক শহর বাদ পড়ায় বেইজিংয়ে শীতকালিন অলিম্পিক আয়োজনের সুযোগ তৈরি হয়। তবে একমাত্র বিকল্প ছিল কাজাখস্তানের আলমাতি।

বিপরীত দিক থেকে দেখলে, ‘স্বৈরাচারীরাজনসাধারণের তহবিল নষ্ট করতে স্বাধীন। তবে আয়োজকদের বিরুদ্ধে যেসব প্রধান হুমকি থাকে তা হলো বিক্ষোভকারী বা সংবাদমাধ্যগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ধরে। কিন্তু সংস্কারকে উৎসাহিত করার পরিবর্তে, আন্তর্জাতিক দৃষ্টি এই ধরনের শাসককে ক্রীড়া ইভেন্টের দৌড়ে আরও বেশি দমনমূলক আচরণে প্রলুব্ধ করে।

নিপীড়ন স্কোরযদি পরিমাপ করা হয় তবে কি ঘটে তা স্কার্ফ দেখিয়েছেন এভাবে, রাজ্যগুলো তাদের নাগরিকদের ওপর কতটা সহিংস আচরণ করে। যেমন অলিম্পিক ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজকরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দুই বছর আগে থেকে দমনপীড়ন চালিয়েছে এমন অভিযোগ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, মানবাধিকার পর্যবেক্ষকদের মতে, ২০০৮ সালের অলিম্পিকের আগে চীন এমন ব্যক্তিদের গ্রেফতার করেছে যারা অসন্তোষ প্রকাশ করতে পারে। ফলস্বরূপ, ইভেন্ট চলাকালীনবিক্ষোভ প্রদর্শন অঞ্চলওখালি ছিল।

কাতারও কি এই রীতি অনুসরণ করেছে। সম্প্রতি কয়েক সপ্তাহ ধরে হাজার হাজার বিদেশি কর্মীকে স্থানান্তরিত করেছে দেশটি। যাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। তবে সেই সমালোচনা যেন না মুখ্য হয়ে উঠে সেকারণে সিদ্ধান্ত হতে পারে। যদিও বড় ক্রীড়া ইভেন্টের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো এই ধরনের নীতি উত্সাহিত করতে চায় না। তবে গণতন্ত্রের স্বার্থে আয়োজনকে কীভাবে আরও আকর্ষণীয় করা যায় সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭