ইনসাইড গ্রাউন্ড

নাটকীয় জয় জাপানের, হার দিয়ে শুরু জার্মানির


প্রকাশ: 23/11/2022


Thumbnail

২৮ বছর আগের স্মৃতি ফিরিয়ে আনলো জার্মানি। ১৯৯৪ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল। সেখানে জার্মানদের প্রতিপক্ষ ছিলো  বুলগেরিয়া। প্রথমে গোল করে এগিয়ে যাওয়া জার্মানরা পরে ম্যাচটি হেরে যায় ২-১ গোলে। সেই ম্যাচের চিত্রনাট্যের পুনরাবৃত্তি দেখা দিলো কাতারের খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে। এগিয়ে থেকে ইউরোপের পাওয়ার হাউসরা জাপানের কাছে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচ হেরে গেলো একই ব্যবধানে। আর অসাধারণ প্রত্যাবর্তনে রূপকথার মতো এক জয় তুলে নিলো এশিয়ার দল জাপান।

আল রাইয়ানের স্টেডিয়ামে আগের বিশ্বকাপের দুঃসহ স্মৃতি ভুলে জয় দিয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরুর লক্ষ্য ছিলো জার্মানদের। তবে ম্যাচের শুরু থেকে জার্মানদের উপর বেশ চাপ সৃষ্টি করে খেলতে থাকে জাপান। আক্রমণাত্নক ফুটবল খেলছে জার্মানিও।

তবে ম্যাচের ৮ মিনিটেই জার্মানদের চমকে দিয়েছিলো জাপান। ম্যানুয়েল নয়্যারকে ফাঁকি দিয়ে জার্মানদের জালে বল পাঠান জাপান ফরোয়ার্ড দাইজেন মায়েদা। তবে অফসাইডের কারণে তা বাতিল করা হয়। পিছিয়ে পড়ার হাত থেকে বেঁচে যায় জার্মানি। ১৭ মিনিটে কর্ণার থেকে দারুণ এক সুযোগ সৃষ্টি করেছিলো জার্মানিও। রুডিগারের হেড বার ঘেষে বাইরে চলে যায়। ২০ মিনিটে জশুয়া কিমিচের জোরালো শট ডানে ঝাঁপিয়ে রুখে দেন জাপান গোলরক্ষক সুইচি গন্ধা।

২০ মিনিটে আবারো সুযোগ তৈরি করেন কিমিচ। একের পর এক জাপানের রক্ষণে আক্রমণ চালাতে থাকে জার্মানি। ২৮ মিনিটে গুন্দোয়ানের শট গ্লাভসে জমা করেন গোলরক্ষক গন্ধা। পরের মিনিটেও দলের ত্রাতা হন তিনি। ফিরতি শট ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে ক্লিয়ার হলে বিপদ বাড়েনি জাপানের।

তবে গ্লাভস হাতে গন্ধা দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর ভুল করে বসেন সুইচি গন্ধা। ডি-বক্সে তার ফাউলের কারণে পেনাল্টি উপহার পায় জার্মানি। ৩৩ মিনিটে সেখান থেকে গোল করে দলকে প্রথম সাফল্য এনে দেন ইলকায় গুন্ডোগান। ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় জার্মানি।

একের পর এক আক্রমণে এশিয়ার দলটিকে দিশেহারা করে ফেলে জার্মানরা। ম্যাচে শুরুর সেই উদ্দ্যম আর ধরে রাখতে পারে নি দলটি। ৩৮ মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন মুসিয়ালা ও জিনাব্রি। প্রথমার্ধ্বের শেষ মিনিটে মুসিয়ালার আরেকটি চেষ্টা আলোর মুখ দেখেনি।

অতিরিক্ত সময়ের শেষ মিনিটে কাই হাভার্টজ গোল করেন। তবে তিনি অফসাইডে থাকায় ব্যবধান বাড়াতে পারে নি জার্মানি। সমতায় ফেরার সুযোগ পেয়েছিলো জাপান। তবে মায়েদার হেড লক্ষ্যে না থাকে নি। ফলে এক গোলে পিছিয়ে থেকেই বিরতিতে যেতে হয় দলটিকে।

বিরতির পর ৪৭ মিনিটে প্রথম আক্রমণ চালায় জার্মানি। ৫০ মিনিটে জাপানের কামাদাও চেষ্টা করেছিলেন গোলের। তবে আশার আলো দেখেনি। ৫১ মিনিটে পেনাল্টি বক্সে একক প্রচেষ্টায় কয়েক জনকে পরাস্ত করলেও ব্যবধান বাড়াতে পারেনি জার্মানি। গোলের আশায় মরিয়া হয়ে ৫৭ মিনিটে দলে জোড়া পরিবর্তন আনেন জাপান কোচ। নাগামাতো ও মায়েদার পরিবর্তে মাঠে নামেন মিতোমা ও আসানো। মাঠে নামার পরই বেশ কয়েকটি গোলের সুযোগ তৈরির চেষ্টা করে আসানো। ৬০ মিনিটে গুনদোগানের শট পোষ্টে লেগে বাইরে দিয়ে চলে যায়।

৬৭ মিনিটে থামস মুলার ও ইকায় গুন্ডোগানকে উঠয়ে নেন জার্মান কোচ হান্স ফ্লিক। তাদের বদলে নামেন হফম্যান ও লিওন। তবে এসময় জার্মানদের কাছে থেকে ম্যাচের আধিপত্য নিজেদের দিকে নেয়ার চেষ্টা করতে থাকে এশিয়ার দলটি। বারবার আক্রমণ শাণিয়ে চাপ তৈরি করে জার্মানদের রক্ষণভাগে।

৭০ মিনিটে হফম্যান ও জিনাব্রির নিশ্চিত গোল ঠেকিয়ে আরো একবার জাপানকে রক্ষা করেন গন্ধা। ৭১ মিনিটে তানাকার জায়গায় বদলি হিসেবে নামেন রিতসু দোয়ান। মাঠে নামার ৪ মিনিটের মধ্যে গোল করে জাপানকে সমতায় ফেরান দোয়ান। পাল্টা গোলের চেষ্টা করে জার্মানিও। উল্টো দুর্দান্ত এক গোলে ৮৩ মিনিটে জাপানকে দ্বিতীয় গোল উপহার দেন দারুণ খেলা আসানো। প্রথমার্ধ্বে পিছিয়ে থাকলেও ২-১ গোলের লিড নেয় জাপান।

ম্যাচের বাকি সময়ে মরিয়া হয়ে আক্রমণে উঠতে থাকে জার্মানি। তবে জাপানের জমাট রক্ষণের কাছে সুবিধা করে উঠতে পারেনি। আর গোলবারের নিচে সুইচি গন্ধা ছিলেন জাপানের নির্ভরতা দেয়াল হয়ে। ম্যাচে জার্মানদের অনেকগুলো নিশ্চিত গোলের সুযোগ নষ্ট করে দেন দক্ষ হাতে।

নির্ধারিত সময়ের পর যোগ করা সময়েও আর কোন গোল হয়নি। উল্টো ডি বক্স ছেড়ে ম্যানুয়েল নয়্যার উপরে উঠে আসায় ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ ছিলো জাপানের সামনে। তবে তার দরকার পড়েনি। নিজেদের রক্ষণভাগ সামলে বিশ্বকাপে নিজেদের অন্যতম স্মরণীয় জয়ের উল্লাসে মেতে উঠে জাপান। চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে বিশ্বকাপে এশিয়ার দলটির প্রথম জয়। উল্লাস তো তাই বাঁধভাঙা হবেই।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭