ইনসাইড বাংলাদেশ

নির্বাচন বানচাল করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার নীলনকশা


প্রকাশ: 24/11/2022


Thumbnail

বিরোধীদলের আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্য হলো আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে না দেয়া। আর বিরোধী দলের আন্দোলনে মদদ দিচ্ছে সুশীল সমাজের একটি অংশ এবং পশ্চিমা কয়েকটি দেশের কূটনীতিকরা। তারা মনে করছে যে, যদি শেষ পর্যন্ত সহিংসতা, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে নির্বাচন বানচাল করা যায় তাহলে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার সুযোগ হবে। এবং যেহেতু এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো সীমারেখা থাকবে না কাজেই সুশীল নিয়ন্ত্রিত সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার পাঁচ থেকে দশ বছর পর্যন্ত দেশ পরিচালনা করার সুযোগ পাবে। এটি ঠিক এক-এগার যে মাস্টার প্ল্যান তার একটি বর্ধিত সংস্করণ। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, এই নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক হচ্ছে। বাংলাদেশের কয়েকজন আইনজীবী এ বিষয়গুলোর সাংবিধানিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছেন এবং বিএনপি যেন কোনো অবস্থাতেই আন্দোলন থেকে সরে না আসে এবং তারা যেন সহিংসতা সৃষ্টির চেষ্টা করে সে ব্যাপারে তাদেরকে উৎসাহ যোগানো হচ্ছে।

বাংলাদেশে আবার একটি অনির্বাচিত সরকার আনার জন্য এই নীলনকশার নীরব বাস্তবায়ন চলছে। উল্লেখ্য যে, এক-এগারতে যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল সেটি কতদিন ক্ষমতায় থাকবে এই নিয়ে এক সাংবিধানিক জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল। এই সময়ে সুপ্রিমকোর্টে ড. কামাল হোসেন বলেছিলেন যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ যেহেতু উত্তীর্ণ হয়ে গেছে কাজেই তারা কতদিন থাকবে এ নিয়ে সংবিধানে কোন ব্যাখ্যা নেই। কাজেই তারা অনেক দিন ইচ্ছা থাকতে পারে যতক্ষণ পর্যন্ত একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকায় সাংবিধানিক কোনো বাধা নেই। এখন ড. কামাল হোসেন ওই তত্ত্ব নিয়ে আবার হাজির হচ্ছেন। বিএনপি থেকে বলা হচ্ছে যে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা কোনো নির্বাচনে যাবে না। আর বিএনপির এই বক্তব্যের পাল্টা হিসেবে আওয়ামী লীগ বলছে যে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো সাংবিধানিক বিধি-বিধান নাই। সংবিধানের বাইরে কোনো কিছু করা যাবে না। আর এ কারণেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেন না হয় সেটি এখন বিএনপিসহ কিছু বিরোধী দল, সুশীল সমাজ এবং কয়েকটি পশ্চিমা দেশের প্রধান লক্ষ্য, এ লক্ষ্যে তারা কাজ করছে। আর এ কারণেই পশ্চিমা দেশের কয়েকজন কূটনীতিক বাংলাদেশের সুশাসন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ইত্যাদি বিষয়গুলোকে সামনে নিয়ে আসছেন। এই নীল নকশার পাঁচটি ধাপ রয়েছে- 

প্রথম ধাপে বিএনপি সরকার বিরোধী আন্দোলন করবে এবং এই আন্দোলনকে আস্তে আস্তে উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে নিয়ে যাওয়া হবে। এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করা হবে যেন দেশে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা এবং সহিংসতা সৃষ্টি হয়। দ্বিতীয় ধাপটি হলো, সুশীল সমাজ দেশের অর্থনৈতিক সংকট ও সুশাসনের অভাব সহ নানা ইস্যু গুলোকে সামনে নিয়ে আসবে এবং সুশীল নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমে সেটি ব্যাপকভাবে প্রচার প্রচারণা করা হবে। ফলে জনগণের মধ্যে এক ধরনের ভীতি অনাস্থা তৈরি হবে। উদাহরণ হিসেবে দেখা যায় যে, প্রথমে ব্যাংকের রিজার্ভ নেই বলে গুজব ছড়ানো হলো, তারপর দেশের শীর্ষস্থানীয় সুশীল নিয়ন্ত্রিত একটি দৈনিক পত্রিকা প্রতিদিন ব্যাংকিং খাতের নানা দুর্বলতা নিয়ে প্রতিবেদন করছে। অর্থাৎ জনগণের মধ্যে ব্যাংকিং খাত সম্পর্কে অনাস্থা সৃষ্টির জন্যই এটি করা হচ্ছে। এভাবে আস্তে আস্তে সরকারকে অজনপ্রিয় করার একটি নীরব পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, যেন অসাংবিধানিক কোন শক্তি ক্ষমতা গ্রহণ করলেও জনগণ খুব একটা অসুখি না হয়।

তৃতীয় ধাপে, আন্তর্জাতিক মহল সরকারের ওপর নানারকম চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আগামী ডিসেম্বরে আরও নিষেধাজ্ঞা আসছে এমন খবর শোনা যাচ্ছে। এই সমস্ত নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সরকারকে কোণঠাসা করার একটা প্রচেষ্টা চলছে। চতুর্থ ধাপে, গণমাধ্যমগুলোকে আস্তে আস্তে সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে। আর সর্বশেষ পঞ্চম ধাপে আওয়ামী লীগের যে সমস্ত জোটগুলো আছে সেগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে আওয়ামী লীগকে একা করা হচ্ছে, যেন সব রাজনৈতিক দলই আগামী নির্বাচন বয়কটের দিকে যায়। কারণ নির্বাচন বয়কট করলে রাজনীতিতে একটি সহিংসতা সৃষ্টি হবে এবং অধিকাংশ রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করলেই অসাংবিধানিক শক্তি ক্ষমতায় আসার পথ তৈরি হবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭