ইনসাইড ইকোনমি

আবারও কমলো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ


প্রকাশ: 25/11/2022


Thumbnail

চলমান ডলার সংকটের মাঝেই অর্থনীতির অন্যতম সূচক রেমিট্যান্সের গতি নিচে নেমে যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের শুরুর দুই মাস জুলাই ও আগস্টে দুই বিলিয়ন ডলার করে রেমিট্যান্স আসলেও পরের দুই মাস (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) সেই সূচক দেড় বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে আসে। চলতি মাসেও এই সূচক দুই বিলিয়ন ডলারের ঘরে পৌঁছানোর সম্ভাবনা নেই।

নভেম্বর মাসে প্রতিদিন গড়ে ৫ দশমিক ৮ কোটি ডলার করে রেমিট্যান্স আসছে। বৈধপথে রেমিট্যান্স বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকার।

চলমান ডলার সংকট মোকাবিলায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে প্রতিনিয়ত ডলার সরবরাহ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি মাসের শুরুতে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ছিল ৩৫ দশমিক ৭২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সবশেষ গত বুধবার (২৩ নভেম্বর) রিজার্ভ থেকে ১১৫ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ৩৪ দশমিক ০৭ বিলিয়ন ডলারে। মজুতের এ রিজার্ভ দিয়ে চার মাসের (প্রতি মাসে ৮ বিলিয়ন হিসাবে) আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। 

তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হিসাব করলে দেশের এ রিজার্ভ থেকে আরও ৮ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার বাদ যাবে। সেক্ষেত্রে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হবে ২৫ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে রেমিট্যান্স আসার গতিও শ্লথ হয়েছে। চলতি মাস নভেম্বরে প্রতিদিন গড়ে রেমিট্যান্স আসছে ৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম দিন দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মজুত ছিলো ৩৫ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার। ৭ নভেম্বর সেটা আরও কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারে। তবে একই দিন (৭ নভেম্বর) রিজার্ভ থেকে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১৩৫ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়। পাশাপাশি আমদানি দায় মেটাতে ১৩ কোটি ১০ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়। ফলে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে হয় প্রায় ৩৪ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার। 

গত ৯ নভেম্বরে রিজার্ভ ছিল ৩৪ দশমিক ২৫ বিলিয়ন, ১৪ নভেম্বর বেড়ে দাঁড়ায় ৩৪ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলারে, ১৫ নভেম্বর রিজার্ভ থেকে ১১৫ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করায় তা নেমে আসে ৩৪ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলারে। ১৬ নভেম্বর ৬৯ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হলে রিজার্ভ দাঁড়ায় ৩৪ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার, ১৭ নভেম্বর আবারও বেড়ে ৩৪ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার হয়।

তবে গত সোমবার (২১ নভেম্বর) তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৪ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলারে। গত ২২ নভেম্বর ৩৫ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করায় রিজার্ভ দাঁড়ায় ৩৪ দশমিক ০৯ বিলিয়ন ডলারে আর সবশেষ ২৩ নভেম্বর রিজার্ভ মজুত আরও কমে ৩৪ দশমিক ০৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলছে, রিজার্ভ থেকে অর্থ নিয়ে আলাদাভাবে বিভিন্ন তহবিল গঠন ও সেখান থেকে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। আবার সেসব অর্থ রিজার্ভে দেখানো হচ্ছে। এতে বাংলাদেশের রিজার্ভ বেশি দেখানো হচ্ছে। যা বিভ্রান্তি তৈরি করছে।

রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) সরবরাহ করা ৭ বিলিয়ন এবং শ্রীলঙ্কাকে দেওয়া ২০ কোটি ডলার দেশের রিজার্ভে দেখানো হচ্ছে। তাছাড়া গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড (জিটিএফ) ২০ কোটি ডলার, লং টার্ম ফিন্যান্সিং ফ্যাসিলিটি (এলটিএফএফ) তহবিলে ৩ কোটি ৮৫ লাখ ডলার, সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিমানকে ৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার এবং ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইটিএফসি) আমানতও রিজার্ভে দেখাচ্ছে।

আইএমএফের মতে, সব মিলিয়ে বর্তমানে রিজার্ভে যে অর্থ দেখানো হচ্ছে, সেখান থেকে ৮ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার বাদ যাবে। সে হিসাবে ২৩ নভেম্বর নাগাদ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের মজুত দাঁড়ায় ২৫ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রতিনিয়ত উঠানামা করে। এখান থেকে সরকারি ক্রয়ে ডলার ছাড় করা হয়। আবার প্রবাসী বাংলাদেশিরা প্রতিনিয়ত রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। এক্ষেত্রে বলা যায় প্রতিদিনই রিজার্ভ কম-বেশি হয়। তবে আমাদের যে রিজার্ভ পজিশন সেটিতে ভয়ের কিছু নেই।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭