ইনসাইড পলিটিক্স

১০ ডিসেম্বর: ঢাকা কার দখলে যাবে?


প্রকাশ: 25/11/2022


Thumbnail

আগামী ১০ ডিসেম্বর নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে উত্তাপ-উত্তেজনা বাড়ছে। ইতিমধ্যেই নয়াপল্টনে সমাবেশ করার জন্য অনুমতি চেয়েছে বিএনপি। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল জানিয়ে দিয়েছেন যে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিভিন্ন শর্ত সাপেক্ষে বিএনপিকে জনসভা করার অনুমতি দিতে হবে। তবে বিএনপি নেতারা পাল্টা জবাবে বলেছেন যে, তারা নয়াপল্টনে সমাবেশ করবেন এবং অনুমতি না দিলেও সমাবেশ করবেন। বিএনপির এই আক্রমণাত্মক ভূমিকা থেকে সুস্পষ্ট ভাবে বোঝা যায় যে, একটি শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ তাদের লক্ষ্য নয় বরং এইসব মহাসমাবেশকে ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপ সৃষ্টির পরিকল্পনা রয়েছে। বিএনপি বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে প্রতি সপ্তাহে একটি করে সমাবেশ করছে। এই ধরায় আগামীকাল কুমিল্লায় বিএনপির সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা, তারপর রাজশাহীতে বিএনপির সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এরপরই ঢাকায় বিএনপি সমাবেশটি করতে চায়। এই সমাবেশের মাধ্যমে বিএনপি কি অর্জন করতে চায় তা নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গনে ধোঁয়াশা রয়েছে।

বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে পরস্পর বিরোধিতা রয়েছে। বিএনপির কোনো কোনো নেতা এই সমাবেশের মাধ্যমে সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনের ঘোষণা কথা বলছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, ওই দিন থেকেই সরকারের কথায় দেশ চলবে না, বেগম খালেদা জিয়ার কথায় দেশ চলবে। তবে বিএনপির তৃণমূলের মধ্যে ১০ ডিসেম্বরকে ঘিরে এক ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে। সেই পরিকল্পনায় কেন্দ্রীয় অনেক নেতার সমর্থন আছে বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ১০ ডিসেম্বর তারা ঢাকার রাজপথ দখল করে নিতে চায় এবং হেফাজতের মত রাজপথ দখল করে সরকারকে আল্টিমেটাম দিতে চায়। মূলত, ১৩ মে হেফাজত মতিঝিলে যে কাণ্ডটি করেছিল এরকম কাণ্ড ঢাকার পাঁচটি মহাসড়কে বিএনপি করে সরকারকে চাপে ফেলতে চায়। আর এ কারণেই নয়াপল্টনের বাইরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মত বিচ্ছিন্ন মাঠে বিএনপি সমাবেশ করতে আগ্রহী নয়। বিএনপির নেতারা আকার-ইঙ্গিতে এটা স্পষ্ট করছেন যে, ১০ ডিসেম্বর রাজপথ তাদের দখলে থাকবে।

তবে আওয়ামী লীগও পাল্টা চ্যালেঞ্জ দিয়েছে। আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর উত্তর আগামী ৯ ডিসেম্বর বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ ডেকেছে। এছাড়া ঢাকা মহানগরীতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ১০ ডিসেম্বরকে ঘিরে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। আওয়ামী লীগের জন্য ১০ ডিসেম্বর একটি দ্বিমুখী সমস্যা তৈরি করেছে। প্রথমত, তারা যদি বিএনপিকে ছাড় দেয় এবং শেষ পর্যন্ত বিএনপি যদি রাস্তাঘাট বন্ধ করে কোনোরকম অনভিপ্রেত ঘটনার সৃষ্টি করে তাহলে প্রথমবারের মতো ঢাকা মহানগরীতে আওয়ামী লীগ কোণঠাসা হয়ে পড়তে পারে। আবার অন্যদিক থেকে যদি রাজপথে আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি দেয় তাহলে সহিংসতা হতে পারে এবং সেই সহিংসতায় যদি কোনো অঘটন ঘটে বা কেউ মারা যায় সেক্ষেত্রে তার দায়-দায়িত্ব সরকারের ওপর বা আওয়ামী লীগের ওপর বর্তাবে এবং বিএনপি সেটাই চাইছে।

বিএনপি মনে করছে আন্দোলনকে যদি তীব্র করতে হয়, আন্দোলনকে যদি গতিশীল করতে হয় তাহলে অবশ্যই দুই একটি লাশ প্রয়োজন। আর সেই লাশের খুঁজেই ১০ ডিসেম্বর বিএনপি মাঠে নামবে বলে মনে করা হচ্ছে। কাজেই, এই উভয় সংকট থেকে আওয়ামী লীগ কিভাবে একটি ইতিবাচক রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি করবে, সেটি তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। অনেক আওয়ামী লীগের নেতা বলছেন, পরিস্থিতি ঠাণ্ডা মাথায় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বিএনপিকে যেমন সুযোগ রাজপথ দখলের সুযোগ দেওয়া যাবে না, আবার তেমনি সহিংসতায় জড়ানো যাবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও ১০ ডিসেম্বরকে ঘিরে একটি পরিকল্পনা তৈরি করছে। বিজয় দিবসের মাত্র ৬ দিন আগে এই সমাবেশ রাজনীতিতে একটি উত্তেজনার আবহ তৈরি করেছে। আর সেকারণেই বড় প্রশ্ন উঠেছে, ১০ ডিসেম্বর রাজপথ কার দখলে যাবে -বিএনপির, আওয়ামী লীগের নাকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর?


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭