ইনসাইড গ্রাউন্ড

মাদকের স্বর্গরাজ্যে জন্ম ব্রাজিলের গোলদাতা রিচার্লিসনের!


প্রকাশ: 25/11/2022


Thumbnail

সার্বিয়ার বিপক্ষে ব্রাজিলের জয়ের পেছনে যা অবদান সেই বিস্ময়কর গোলদাতা রিচার্লিসনের বাবা ছিলেন দৈনিক মজুরির বিনিময়ে কাজ করা একজন রাজমিস্ত্রি। মা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বিক্রি করতেন আইসক্রিম। তাঁর জন্মস্থান ব্রাজিলের এসপিরিতো সান্তো প্রদেশের নোভা ভেনিসিয়া শহরে।

নোভা ভেনিসিয়ার খুব নিরাপদ শহর হিসেবে পরিচিতি নেই। এটি মাদক ব্যবসায়ীদের স্বর্গরাজ্য হিসেবেই পরিচিত। এই শহরের আকাশে–বাতাসে উড়ে বেড়ায় কালো টাকা। অবৈধ যা কিছু আছে, এই শহরের শিশু–কিশোররা সেগুলোর সঙ্গে পরিচিত হয়ে ওঠে ছোটবেলা থেকেই। রিচার্লিসন হচ্ছেন তাঁর মা–বাবার পাঁচ সন্তানের মধ্যে সবার ছোট। 

তিনি ছোটবেলায় এমন দিন দেখেছেন, যখন তাঁর মা–বাবা সন্তানদের মুখে তিন বেলা খাবার তুলে দিতেই হিমশিম খেতেন। আধপেটা খেয়ে রিচার্লিসন রাতে ঘুমাতে গেছেন, এমন দিন এসেছে তাঁর জীবনে অনেকবারই।

টাইমস–এর সঙ্গে আলাপচারিতায় রিচার্লিসন নিজেই বলেছিলেন সেই অন্ধকার অতীতের গল্প, ‘আমার অনেক বন্ধুরা রাস্তায় মাদক বিক্রি করত। সহজে অর্থ আয়ের সেটিই ছিল দারুণ সুযোগ। ঠিকঠাক মাদকদ্রব্য বিক্রি করতে পারলে বেশ ভালো অর্থ পাওয়া যেত। কিন্তু আমার মা–বাবা আমাকে শিখিয়েছিলেন, এভাবে অর্থ আয় করা ঠিক নয়, সেটি অন্ধকার উপায়।

আমি তখন আমার মায়ের সঙ্গে চকলেট, আইসক্রিম বিক্রি করতাম। বাড়তি কিছু উপার্জনের জন্য বেছে নিতাম বড়লোকদের গাড়ি ধোয়ার কাজ। এই কাজগুলোকেই আমি টাকা আয়ের সঠিক উপায় হিসেবে জানতাম, বিশ্বাস করতাম। আমি আমার মাকে সাহায্য করতাম, যতটা পারতাম।’

কিন্তু যে শহর মাদক ব্যবসায়ীদের অভয়ারণ্য, যে শহরে অপরাধটাই চল, সেখানে রিচার্লিসন নিরাপদে থাকেন কীভাবে! তাঁকেও অপরাধের মুখোমুখি হতে হয়েছে। একবার এমন একটা ঘটনায় প্রাণ নিয়ে সংশয়ে পড়েছিলেন। এক মাদক ব্যবসায়ী নিজের দলের এক ছেলের সঙ্গে রিচার্লিসনকে গুলিয়ে ফেলেছিলেন।

তিনি মনে করেছিলেন, রিচার্লিসন হয়তো তাঁর দল ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন, ‘একদিন আমরা ছোটরা রাস্তায় খেলছি। হঠাৎ এক মাদক ব্যবসায়ী সন্ত্রাসী খেলা থামিয়ে আমার মাথায় বন্দুক তাক করল। সে ভেবেছিল, আমি হয়তো তার দলেরই ছেলে, পালিয়েছি। সে আমাদের হুমকি দেয়, আবার যদি তার মুখোমুখি আমি হই, তাহলে বন্দুকের ট্রিগার টিপে দিতে তার এতটুকু সময় লাগবে না। কী মনে করে, সে সেদিন আমাকে ছেড়ে দিয়েছিল।’ রিচার্লিসনের বয়স ছিল তখন মাত্র ১৪।

রিচার্লিসনের ফুটবলার হওয়াটা বাবার উৎসাহেই, ‘একদিন বাবা হঠাৎ করেই আমার জন্য কয়েকটি ফুটবল কিনে নিয়ে আসলেন। তিনি সব সময়ই চাইতেন, আমি ভালো ফুটবলার হই। আমরা রাস্তায় ফুটবল খেলতাম। স্যান্ডেল দিয়ে গোল বানাতাম।’

বাবা চাইলেও রিচার্লিসনের ফুটবলার হওয়ার সুযোগ প্রথম তৈরি হয় এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে দেখা হওয়ার পর। রাস্তায় তাঁর খেলার দক্ষতা দেখে সেই ব্যবসায়ীর খুব পছন্দ হয়। তিনি তাঁকে একজোড়া নতুন বুট কিনে দেন। আমেরিকা মিনেইরো নামের একটি দ্বিতীয় বিভাগের ক্লাবেও নিয়ে যান। 

তাদের প্রতিভা অন্বেষণকারীদের বলেন, রিচার্লিসনের প্রতিভার কথা। এক বছরের মাথায় মিনেইরো থেকে ফ্লুমিনেসে ডাক পান। সেখান থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দল ওয়াটফোর্ডে চলে যান, সেখান থেকে এভারটন। ৬০ মিলিয়ন পাউন্ডে এই মৌসুমের শুরুতে নাম লেখান টটেনহামে। এভারটনেই তিনি ছিলেন দলটির সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়।

কাল রাতে সার্বিয়ার বিপক্ষে জোড়া গোলে ব্রাজিলকে জিতিয়েছেন সেই রিচার্লিসন। দ্বিতীয় গোলটা তো বিস্ময়জাগানিয়াই। বাইসাইকেল কিকে করা গোলটি কাঁপিয়ে দিয়েছে গোটা বিশ্ব। কাতার বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সেরা গোল এটিই। হৃদয়ে রোমাঞ্চজাগানো, মন–প্রাণ উন্মাতাল করে দেওয়া এই গোল নিয়ে বড় একটা আক্ষেপও আছে রিচার্লিসনের। তাঁর এলাকার মানুষ নাকি গোলটি টিভিতে সরাসরি দেখতে পাননি। কারণ, সেখানে দুই সপ্তাহ ধরে বিদ্যুৎ নেই।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭