ইনসাইড পলিটিক্স

রাজনীতিকে নির্বাচনমুখী করার চেষ্টায় আওয়ামী লীগ


প্রকাশ: 25/11/2022


Thumbnail

আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যশোরে নির্বাচনী জনসভা করলেন। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচনের এক বছর এক মাস আগে থেকেই তিনি একটি নির্বাচনী আমেজ তৈরি করার চেষ্টা শুরু করলেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন। যশোরের বিশাল জনসভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছেন এবং দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি অব্যাহত রাখার জন্য আবার আওয়ামী লীগের পক্ষে রায় দেওয়ার জন্য জনগণের কাছে অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেছেন, ভোট দিন, যা চাইবেন তার চেয়ে বেশি দেব। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে নির্বাচনী আবহ তৈরি হলো। এবং আওয়ামী লীগ দেশের রাজনীতিকে নির্বাচনমুখী করার সুস্পষ্ট একটি পরিকল্পনা জাতির সামনে প্রকাশ করলো। আগামী ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে পলো গ্রাউন্ড মাঠে আওয়ামী লীগ সভাপতির আরেকটি জনসভা অনুষ্ঠিত হবার কথা। ওই জনসভায় তিনি নির্বাচনী আমেজ আরও উস্কে দিলেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে। এভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জেলাগুলোতে পর্যায়ক্রমে জনসভা করে একদিকে যেমন সংগঠনকে চাঙ্গা করবেন অন্যদিকে নির্বাচনী সড়কের যাত্রা শুরু করবেন এবং আওয়ামী লীগ আশা করছে এই কৌশলের মাধ্যমে বাংলাদেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনমুখী হবে। 

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা স্বীকার করেছেন আগামী কয়েক মাসের রাজনীতির মূল ধারা হবে নির্বাচন করা না করা নিয়ে বিরোধ। বিরোধী দল বিএনপি বলেছে যে, তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনে যাবে না। এটুকু বলেই তারা ক্ষান্ত হয়নি। তারা এ ব্যাপারে হুশিয়ারি দিয়েছে যে, বিএনপিকে ছাড়া বাংলাদেশে কোন নির্বাচন তারা হতে দেবে না। যদিও ২০১৪ সালেও বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছিল। কিন্তু সেই নির্বাচন বিএনপির বর্জন সত্ত্বেও হয়েছে এবং ওই নির্বাচনের পরে গঠিত সরকার পূর্ণ মেয়াদ অতিক্রম করেছে। তাই ২০১৪ এর মতো নির্বাচন বিএনপি প্রতিরোধ করতে পারবে কি পারবে না সেটা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানামুখী আলাপ-আলোচনা আছে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এবার বিএনপি একা নয়, বিএনপির সাথে দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যমান নানা শক্তি রয়েছে। যারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে দিতে চায়না। বিএনপি ইতোমধ্যে ২২টি রাজনৈতিক দলকে তাদের প্লাটফর্মে এনেছে। জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনে যাবে কি যাবে না বিষয়টি এখনও নিশ্চিত নয়। বিএনপির সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে ঘনিষ্ঠ কিন্তু আড়ালে থাকা জামায়াতসহ কয়টি রাজনৈতিক দল আগামী নির্বাচন বয়কট করতে পারে এমন শঙ্কার কথা শোনা যাচ্ছে।

বিএনপি মনে করছে, যদি দেশের সিংহভাগ গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলকে নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখা যায় তাহলে এই নির্বাচন অগ্রহণযোগ্য হবে। এবার নির্বাচনের ব্যাপারে পশ্চিমা দেশগুলো অনেক আগে থেকেই কথা বলতে শুরু করেছে। এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ভাবে বলে দিয়েছে যে, আগামী নির্বাচন হতে হবে অংশগ্রহণমূলক এবং জনগণের রায়ের প্রতিফলন ঘটতে হবে নির্বাচনে। অংশগ্রহণ মূলক বলতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগামী নির্বাচনে বিএনপিসহ প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার কথা বলেছে। যদি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবে বলা হচ্ছে যে, নির্বাচনে কোন দল অংশগ্রহণ করবে, কোন দল করবে না সেটা সেই দলের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। কাউকে জোর করে নির্বাচনে আনার কাজ সরকারের নয়, কমিশনের নয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তাহলে সেই নির্বাচনকে এবার পশ্চিমা দেশগুলো স্বীকৃতি দেবে কিনা সেটাই এখন বড় প্রশ্ন হিসেবে সামনে উঠে এসেছে। 

এবার নির্বাচন বানচালের জন্য আরেকটি গ্রুপ সক্রিয় হয়ে কাজ করছে। তারা হলো দেশের সুশীল সমাজ। ইতোমধ্যে দেশের  সুশীলসমাজ নির্বাচন ব্যবস্থাপনা, নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা এবং দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যে সীমাবদ্ধতাগুলো আছে, সেই সীমাবদ্ধতাগুলো নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছে। তাদের মূল লক্ষ্য হলো আগামী নির্বাচন যেন না হয় সেটি নিশ্চিত করা। অর্থাৎ বাংলাদেশের রাজনীতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে একটি মেরুকরণ হচ্ছে। সেই মেরুকরণে একটি ধারা হলো নির্বাচন না হতে দিয়ে, একটি অসাংবিধানিক প্রক্রিয়া চালু করা। অন্য একটি ধারা হচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নির্বাচন করা। সেই ধারাকে শক্তিশালী করার জন্যই আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা মাঠে নেমেছেন এবং তিনি দেশকে নির্বাচনমুখী এবং দেশে একটি নির্বাচনী আমেজ তৈরির কাজ শুরু করেছেন। এখন দেখার বিষয় এই চেষ্টায় শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ কতটুকু সফল হয়। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭