ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

জেনারেল আসিম মুনিরের নিয়োগ কিভাবে দেখছে পশ্চিমা গণমাধ্যম?


প্রকাশ: 26/11/2022


Thumbnail

টানা ছয় বছর ধরে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর ২৯শে নভেম্বর অবসরে যাচ্ছেন জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া। এরই মধ্যে দেশটির নতুন সেনাপ্রধান হিসেবে অনুমোদন পেয়েছেন জেনারেল আসিম মুনির।

সেনাপ্রধান হিসেবে আলোচনায় আসার পর পত্রপত্রিকার শিরোনাম হচ্ছেন আসিম মুনির। পশ্চিমা, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমগুলোও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। এমনই আলোচিত কিছু গণমাধ্যমে আসিম মুনিরের নিয়োগকে কীভাবে দেখা হচ্ছে, তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যম ডন।

গত এপ্রিলে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটের মুখে পতন হয় পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) নেতা ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের। প্রধানমন্ত্রীর পদ হারান ইমরান। টাইমসের ভাষ্যমতে, এরপরই পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর এই হস্তক্ষেপ নিয়ে বিতর্ক চরম আকার ধারণ করে। ইমরানের দাবি ছিল, তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার পেছনে তাঁর রাজনৈতিক বিরোধী দল, পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের হাত ছিল।

সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর আসিম মুনিরের সামনে গুরুত্বপূর্ণ দুটি কাজ থাকবে বলে মনে করছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস। সেগুলোর একটি হলো পাকিস্তানের রুগ্‌ণ অর্থনীতিকে টেনে তোলা। অপরটি জনসাধারণের মধ্যে পাকিস্তান সেনাবাহিনী নিয়ে আস্থার জায়গা ফিরিয়ে আনা।

টেলিভিশন চ্যানেলসহ অন্যান্য গণমাধ্যমগুলোও পাকিস্তানের নতুন সেনাপ্রধানকে নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। নিয়মিত হালনাগাদ করছে এ-সংক্রান্ত খবরাখবর। বিষয়টি কিন্তু ব্যতিক্রম। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমগুলো সচরাচর অন্য দেশের সেনাপ্রধান নিয়োগের বিষয়ে খুব কম সংবাদ প্রকাশ করে। এমনকি মার্কিন কোনো বাহিনীর প্রধানের নিয়োগ নিয়েও তেমন আগ্রহ দেখায় না তারা।

দ্য টাইমসের খবরে বলা হচ্ছে, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান পদে এই রদবদলকে অনেকে পাকিস্তানের রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে মনে করছেন। এটি এমন সময়ে হচ্ছে, যখন দেশটির রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ নিয়ে তুমুল সমালোচনা চলছে। সংবাদমাধ্যমটির খবরে তুলে ধরা হয়েছে, পাকিস্তানের ৭৫ বছরের ইতিহাসে অর্ধেকের বেশি সময় সেনাশাসন থাকার বিষয়টি। বলা হয়েছে, দেশটিতে যখন বেসামরিক সরকার ছিল, তখনো রাজনৈতিক নেতাদের ওপর ছড়ি ঘুরিয়েছেন সেনা কর্মকর্তারা।

টাইমসের খবরে দাবি করা হয়েছে, সেনাবাহিনী নিয়ে ইমরান খানের একের পর এক সমালোচনা পাকিস্তানের সাধারণ জনগণের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ফলে দেশটিতে সেনাবাহিনীর সুনাম মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সেনাবাহিনীর মধ্যেও বিভেদ সৃষ্টি করেছে। বাহিনীটির অনেক শীর্ষ কর্মকর্তা ইমরানের সমালোচনায় ত্যক্ত-বিরক্ত হলেও, তুলনামূলক নিম্নপদের অনেক কর্মকর্তা নীরবে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন দিচ্ছেন।

এদিকে প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি কেন নতুন সেনাপ্রধানের নিয়োগকে অনুমোদন দিয়েছেন, তার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে। এ ক্ষেত্রে গতকাল দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহর দেওয়া একটি বক্তব্য তুলে ধরেছে সংবাদমাধ্যমটি। সেদিন তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ চার তারকা জেনারেল হিসেবে আসিম মুনিরকে পদোন্নতি দিয়েছেন। তবে প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি তাঁকে সেনাপ্রধান হিসেবে অনুমোদন না দিলেও তিনি পদত্যাগ করতেন না।

 টাইমসের খবরে দাবি করা হয়েছে, সেনাবাহিনী নিয়ে ইমরান খানের একের পর এক সমালোচনা পাকিস্তানের সাধারণ জনগণের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ফলে দেশটিতে সেনাবাহিনীর সুনামের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সেনাবাহিনীর মধ্যেও বিভেদ সৃষ্টি করেছে। বাহিনীটির অনেক শীর্ষ কর্মকর্তা ইমরানের সমালোচনায় ত্যক্ত-বিরক্ত হলেও, তুলনামূলক নিম্ন পদের অনেক কর্মকর্তা নীরবে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন দিচ্ছেন।

পাকিস্তানের নতুন সেনাপ্রধান নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম বিবিসিও। তাদের খবরে বলা হয়েছে, আসিম মুনিরকে যেমন একদিকে পারমাণবিক শক্তিধর ভারতের সঙ্গে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে কাজ করতে হবে, তেমনি তালেবানের অধীনে থাকা আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের গতিপ্রকৃতি নিয়েও ভাবতে হবে।

পাকিস্তানের নতুন সেনাপ্রধান নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করলেও, একটি বিষয় সবাই বেশ ফলাও করে প্রচার করেছে। সেটি হলো গত বুধবার বাজওয়ার দেওয়া একটি স্বীকারোক্তি। সেখানে তিনি ৭০ বছর ধরে পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর নাকগলানোর বিষয়টি নিজ মুখে স্বীকার করেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ গত বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এরপর সামরিক বাহিনী পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে এবং রাজনীতি থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭