ইনসাইড পলিটিক্স

স্বাচিপের নতুন নেতৃত্ব: কি বার্তা দিলেন শেখ হাসিনা?


প্রকাশ: 26/11/2022


Thumbnail

গতকাল স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সম্মেলন হয়েছে। আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন হিসেবে পরিচিত চিকিৎসকদের এই ফোরামটির সম্মেলন নানা কারণেই গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ। স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বিশেষ করে এক-এগারোর সংকটের সময়ে এই প্রতিষ্ঠানটি আওয়ামী লীগ সভাপতির মুক্তি, তার চিকিৎসাসহ বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এবার স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে বড় ধরনের চমক দেখা গেছে। কারণ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের শুরু থেকেই যারা নেতৃত্বে থাকতেন তার সবাইকে স্বনামধন্য চিকিৎসক অথবা আওয়ামী রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হতেন। কিন্তু এবার জামাল উদ্দিন চৌধুরীকে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি এবং কামরুল হাসানকে মহাসচিব করার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি নতুন একটি বার্তা দিয়েছেন। এই ধরনের কমিটির জন্য স্বাচিপের কোনো নেতাকর্মী প্রস্তুত ছিলেন। এমনকি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও এ কমিটিতে বিস্মিত হয়েছে।

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সঙ্গে যারা সক্রিয় রাজনীতি করেন এবং যারা মোটামুটি নেতৃত্বে আছেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন- ইকবাল আর্সলান এবং মহাসচিব এম এ আজিজ। এছাড়াও বেশ কয়েকজনের নাম আলোচনায় ছিল। এমনকি বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া, কামরুল হাসানসহ বেশ কয়েকজন সভাপতি পদের জন্য বিভিন্ন জায়গায় কথাবার্তা বলেছেন, চেষ্টা-তদবির করেছেন। কিন্তু তাদের সবাইকে বাদ দিয়ে আচমকাভাবে জামাল উদ্দিন চৌধুরীকে সভাপতি করা এবং কামরুল হাসানকে মহাসচিব করার ঘটনাটি সকলকে বিস্মিত করেছে। একাধিক সূত্র বলছে যে, এই কমিটি গঠন করা হয়েছে শেখ হাসিনার অভিপ্রায়ে। তিনি বিভিন্ন ব্যক্তিদের সঙ্গে পরামর্শ করে এই কমিটি গঠন করেছেন। কিন্তু এই কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে একটি সুস্পষ্ট বার্তা দিলেন শেখ হাসিনা। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের আগে এই বার্তাটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং গুরুত্বপূর্ণ বলেই অনেকে মনে করছেন।

যেখানে আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের সম্মেলন গুলোতে পুরনো নেতৃত্বকেই বহাল রাখা হয়েছিল, সেখানে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি পুরো ইউটার্ন নিয়েছেন, সম্পূর্ণ আনকোরা নতুনদেরকে বেছে নিয়ে এসেছেন সামনের দিকে। এর মাধ্যমে তিনি কয়েকটি বার্তা দিয়েছেন। প্রথমত, যেকোনো সম্মেলনে একেবারে চমকে দেওয়ার মতো নতুন নেতৃত্ব আনার মতো বহু ব্যক্তি তার দৃষ্টিসীমার মধ্যে আছেন এবং তিনি চাইলেই যেকোনো ব্যক্তিকে নেতৃত্বে আনতে পারেন। দ্বিতীয়ত, পুরনো নেতৃত্ব থেকে তিনি একটি নতুন স্বাদ দিতে চাচ্ছেন অঙ্গ সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন গুলোকে। তৃতীয়ত, প্রচলিত ধারণা আছে যে, নতুনরা পারবেনা, যারা পরিচিত নেতা তাদেরকেই রাখতে হবে। সেই ধারনাটাও তিনি ভেঙে দিলেন। শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময় প্রচলিত ধারণা ভেঙে দেওয়ার ক্ষেত্রে আলোচিত। এবার সেই কাজটি করলেন। সর্বশেষ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের মত পেশাভিত্তিক সংগঠনগুলোর অতি রাজনীতিকরণ এবং রাজনীতির সঙ্গে সংগঠনগুলো বেশি জড়িয়ে থাকুক, এমনটি তিনি চান না এরকম একটি প্রচ্ছন্ন বার্তা দিয়ে একেবারে নেতৃত্বে নতুন মুখ নিয়ে আসলেন। এর নানা রকম প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, এর ফলে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ দুর্বল হয়ে পড়বে, সামনে সরকারবিরোধী আন্দোলনে চিকিৎসকরা আগের মত ভূমিকা রাখতে পারবেন না ইত্যাদি। কিন্তু একটি বিষয় পরিষ্কার যে, স্বাচিপের চমকে দেওয়া নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা আগামী কাউন্সিলে বা আগামীতে যেকোনো অঙ্গ সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনে চমকে দেওয়ার মতো নতুন নেতৃত্ব আনতে পারেন, এমন একটি বার্তা সুস্পষ্টভাবে সবার কাছে দিয়ে রাখলেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭