ইনসাইড পলিটিক্স

এবার ভারত মিশনে যাচ্ছেন বিএনপির ৩ নেতা


প্রকাশ: 26/11/2022


Thumbnail

দেশে আন্দোলন করা, কূটনীতিকপাড়ায় ধরনা দেওয়ার পর এবার ভারত মিশনে যাচ্ছেন বিএনপির তিন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। তাদের ভিসা হয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে তারা ভারত সফরে যেতে পারেন বলে জানা গেছে। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এর সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎ করার কথাও রয়েছে। তবে এই সাক্ষাৎকারের সময়সূচি এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি। আগামী নির্বাচন বানচালের লক্ষ্যে বিএনপি এখন কাজ করছে। বিএনপির পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা কোনো নির্বাচনে যাবে না এবং এই নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে তারা সরকার পতনের আন্দোলন করছে, সেই আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করছে। আজ কুমিল্লায় সমাবেশ হয়েছে। আগামী শনিবার রাজশাহীতে এবং সর্বশেষ ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচি শেষ হবে। এই কর্মসূচির পর বিএনপি সরকার পতনের লক্ষ্যে এক দফা কর্মসূচি ঘোষণা করবে বলে বিভিন্ন বিএনপির নেতা ঘোষণা দিয়েছিলেন।

তবে বিএনপির অন্য নেতারা বলছেন, একদফা নয় তারা একাধিক দাবি-দাওয়া দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করবেন এবং আগামী মার্চের মধ্যে সরকারের পতনের লক্ষ্যে চূড়ান্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। বিএনপি নেতারা ভালো করেই জানেন যে, শুধুমাত্র সমাবেশ করে সরকারকে চাপে ফেলা সম্ভব হবে না। আর এ কারণেই তারা কূটনীতিকপাড়ায় নিয়মিত যোগাযোগ করছেন। ইতিমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশকে তারা বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে বর্তমান সরকারের অধীনে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। আর এ কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিক সময়ে একাধিকবার আগামী নির্বাচন সম্পর্কে তাদের অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে যে, আগামী নির্বাচন হতে হবে অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ। সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ যেন নিশ্চিত হয় সেই ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়াও জনগণের রায়ের প্রতিফলন যেন ঘটে সে ব্যাপারেও তারা তাদের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নও প্রায় অভিন্ন মতামত দিয়েছে। জাপানের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের ২০১৮ সালের নির্বাচন সম্পর্কে বিস্ফোরক মন্তব্য করে আলোচনায় এসেছেন।

কিন্তু এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে ভারত কোনো মন্তব্য করেনি। বরং ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত বিক্রম দোরাইস্বামী বলেছেন, বাংলাদেশের নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এই ব্যাপারে ভারত হস্তক্ষেপ করতে চায় না। তিনি এটিও বলেছিলেন যে, ভারত কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না। এটি ভারতের পররাষ্ট্রনীতির একটি বড় বৈশিষ্ট্য। তবে ভারতের নতুন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশে আসার পর এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কোনো ধরনের কথা বলেননি। এমনকি দিল্লিতে বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের অবস্থান কি, আগামী নির্বাচন নিয়ে ভারতের ভূমিকা কী হবে সে সম্পর্কেও কিছু জানা যায়নি। আর এরকম প্রেক্ষাপটেই বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ তিন নেতা ভারত সফরে যাচ্ছেন। যে কোনো সময় তাদের ভারত সফর শুরু হতে পারে বলে জানা গেছে। যে তিনজন নেতা ভারত সফরে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, স্থায়ী কমিটির আরেকজন সদস্য ইকবাল মাহমুদ টুকু এবং বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। তাদের তিনজনেরই ভিসা হয়েছে, এ তথ্য নিশ্চিত করা গেছে। তবে তারা কবে যাচ্ছেন সে সম্পর্কে এখন পর্যন্ত কোনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।

বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে যে, ভারতে তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং ভারতের বিভিন্ন থিংক ট্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে চান। এই সফর যদি সফল হয় তাহলে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত আন্দোলন করবে। তারা ভারতের মনোভাব আসলে জানতে চাইছে বলে জানা গেছে। অবশ্য এর আগে, নির্বাচনের আগেও বিএনপির কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ভারত সফর করেছিলেন এবং সেখানে গিয়ে তারা ভারতের প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু ভারত সেই সময় তিনটি শর্ত দিয়েছিলো যে শর্তগুলো পূরণ হলেই কেবল বিএনপির ব্যাপারে তারা ভাববে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু সেই তিনটি শর্তের একটিও পূরণ করেনি বিএনপি। তখন যে তিনটি শর্ত ভারত দিয়েছিল তার মধ্যে রয়েছে- প্রথমত, তারেক রহমানকে আপাতত বিএনপির নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। বিএনপিতে ক্রিয়াশীল কোনো সক্রিয় রাজনীতিবিদকে নেতৃত্বে আনতে হবে। দ্বিতীয়ত, জামাতের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ভাবে সম্পর্ক ত্যাগ করতে হবে। তৃতীয়ত, জঙ্গিবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদীদেরকে কোনোরকম আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। কিন্তু বিএনপি ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে তারেককে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয়নি। এমনকি জামাতের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করেনি। বরং জামাতের ২০ জন নেতাকে ধানের শীষ প্রতীক দিয়েছে এবং বিএনপির ভেতর থেকেই অনেক জঙ্গিবাদী নেতা গত নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েছিলো। এবার বিএনপি ভারতের সঙ্গে কোন বিষয় নিয়ে দরকষাকষি করবে বা কি বার্তা নিয়ে যাবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭