ইনসাইড বাংলাদেশ

ডা. মিলন: স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করেছিলেন যিনি


প্রকাশ: 27/11/2022


Thumbnail

আজ ২৭ নভেম্বর ‘শহীদ ডা. মিলন দিবস’। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন ডা. শামসুল আলম খান মিলন। ১৯৯০ সালের আজকের এই দিনে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলন চলাকালে তিনি শহীদ হয়েছিলেন। স্বৈরাচারি সরকারের পতনে তার আত্মদান ছিল একটি উল্লেখযোগ্য অবদান। তাই প্রতি বছর এই দিনটিকে ডা. মিলন দিবস হিসেবে পালন করে থাকেন গণতন্ত্রকামী মানুষ। ডা. মিলনের ৩২ তম শাহাদাত বার্ষিকী আজ। প্রতি বছরের ন্যায় এইবার ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ডা. মিলনের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করবে। 

কে ছিলেন ডা. মিলন?

শামসুল আলম খান, ডাকনাম মিলন, তিনি ছিলেন চিকিৎসকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এছাড়াও তিনি জাসদ ছাত্রলীগ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ শাখার সভাপতি ছিলেন। ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছিলেন ডা. শামসুল আলম খান মিলন। ৯০'র আন্দোলনের সেই উত্তাল দিনে মিলনের আত্মদান যে শক্তি যুগিয়েছিলো তা স্বৈরাচার এরশাদের পতনকেই ত্বরান্বিত করেছিলো। তাঁর আত্মদানের মাধ্যমে ছাত্রদের গণঅভ্যুত্থান সফলতা পায়। এছাড়াও ১৯৮২ সালে জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা দখলের পর যতগুলো রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছিল, তার প্রতিটিতেই মিলনের অংশগ্রহণ ছিল অবধারিত। ১৯৮২ সালে মজিদ খান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলন, ১৯৮৪ সালে সামরিক শাসনের অবসান ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে গণ-আন্দোলন, ১৯৮৬ ও ৮৭-র আন্দোলন সবকিছুতেই ছিলো তাঁর অবাধ অংশগ্রহণ। তবে এগুলোর মধ্যে স্বৈরাচারী এরশাদ ঘোষিত গণবিরোধী স্বাস্থ্যনীতি আন্দোলনের মধ্যমনি হিসেবে তাঁর পরিচয় ছিলো স্মরনীয়। আজকের এই দিনে ডা. মিলনকে আমরা স্মরণ করি সংগ্রামী মানুষদের পথিকৃৎ হিসেবে। তাঁর রক্তদানের মধ্য দিয়েই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে নতুন গতিবেগ সঞ্চারিত হয়ে পরবর্তীতে ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এরশাদ সরকারের পতন ঘটে এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।

নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থান ও শহীদ ডা. শামসুল আলম খান মিলন সামরিক শাসনবিরোধী গণ-আন্দোলন ও গণ-অভ্যুত্থানে মিলনের জীবন বাজি রেখে লড়াই করার প্রেরণা এসেছে মূলত ছাত্ররাজনীতিতে তাঁর সম্পৃক্ততা থেকে। ১৯৮০ সালে ছাত্রলীগ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ শাখার বার্ষিক সম্মেলনে নতুন কার্যকরী পরিষদে মিলনকে সাহিত্য সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরের বছর ১৯৮১ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে মিলন ছাত্রলীগ প্রার্থী হিসেবে ক্রীড়া সম্পাদক পদে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। এর পরের বছর ডামেকসু নির্বাচনে মিলনকে ছাত্রলীগ পক্ষ থেকে সহসভাপতি পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২৪ মার্চ তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল এরশাদ অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করায় সামরিক শাসনের বাধার কারণে সে নির্বাচন ভণ্ডুল হয়ে যায়। তখন ডাঃ মিলন ছাত্রলীগ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ শাখার সভাপতি ছিলেন।

১৯৯০ সালের প্রথম দিকে এরশাদের সামরিক সরকার চিকিৎসকদের, বিশেষ করে মেডিক্যাল শিক্ষকদের শায়েস্তা করার বাসনা থেকে চিকিৎসকদের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ একটা স্বাস্থ্যনীতি ঘোষণা করে। ডাক্তারদের বিরুদ্ধে নানা মুখরোচক কথা রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে (তখন বেসরকারি টেলিভিশন ছিল না) প্রচার করে। যে স্বাস্থ্যনীতি এরশাদ সরকার দিয়েছিল তা ছিল স্বাস্থ্য খাতকে এনজিও এবং বেসরকারি খাতের ওপর নির্ভরশীল করে ফেলা। সব নাগরিকের সেবা দেওয়ার সাংবিধানিক দায়িত্ব থেকে সরে এসে স্বাস্থ্যসেবার বাণিজ্যিকীকরণের সেটি ছিল প্রথম উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা। মিলন তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও ছাত্ররাজনীতিলব্ধ জ্ঞান থেকে স্বাস্থ্যনীতির আবরণ সরিয়ে ভেতরের চেহারাটি খুলে ধরেন দেশবাসীর সামনে। ফলে এরশাদের স্বাস্থ্যনীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনে জনগণের সমর্থন পেতে কোনো সমস্যা হয়নি। ডাক্তারদের সঙ্গে জনগণের দূরত্ব সৃষ্টির জন্য এরশাদ ও তাঁর দোসরদের প্রচেষ্টা এভাবে ব্যর্থ করে দেন মিলন। বরং এরশাদের গণবিরোধী স্বাস্থ্যনীতি জনগণ ও চিকিৎসকদের আরো একাত্ম করে। তখন থেকেই এরশাদ ও তাঁর গুপ্তঘাতক বাহিনী ফন্দি আঁটতে থাকে মিলনকে আঘাত করার জন্য। চিকিৎসকদের আন্দোলন ব্যর্থ করে দেওয়ার জন্য এরশাদের হুমকি ও হয়রানির পাশাপাশি নানা রকম প্রলোভনের ফাঁদও পাতা হয়েছিল। কোনো কিছুই মিলনকে বিরত রাখতে পারেনি সেই সময়। শেষ পর্যন্ত জীবন দিয়ে ডাঃ মিলন তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে গেছেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭