ইনসাইড পলিটিক্স

কাদেরের প্রশংসা: ফেয়ারওয়েল নাকি পুনর্বহালের বার্তা?


প্রকাশ: 27/11/2022


Thumbnail

প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন। গতকাল কর্ণফুলী টানেলের একাংশের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ভূয়সী প্রশংসা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার (ওবায়দুল কাদের) মতো কর্মঠ লোক কম আছে। তাকে দলের সাধারণ সম্পাদক করার পর আমার চাপ অনেক কমে গেছে। তিনি দলের দায়িত্বের পাশাপাশি সব সড়ক-সেতুর উন্নয়নকাজ দেখেন, সারা দেশে যান। দলের দায়িত্বে এসে তার কাজের গতি আরও বেড়েছে। আসলে দেশপ্রেম আছে বলেই এভাবে কাজ করা সম্ভব। আমি তাকে এবং সেতু বিভাগের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। গতকাল এই অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদেরের এই প্রশংসার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে বিশেষ করে আওয়ামী লীগের মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। প্রধানমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের প্রশংসার মধ্যে দিয়ে কি বার্তা দিলেন? তিনি কী এর মধ্যে দিয়ে কাদেরকে সুস্পষ্ট সংকেত দিলেন যে, তিনি আবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হতে যাচ্ছেন? আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে হ্যাট্রিক করতে যাচ্ছেন নাকি তাকে বিদায় দেওয়ার আগে প্রশংসা করলেন? বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে একটা রীতি হলো, যখন কাউকে বিদায় দেওয়া হয় তখন তার দোষগুলো দেখা হয়না, তার প্রশংসা দিয়েই তাকে বিদায় বার্তা দেওয়া হয়। সেরকমটি কি হলো ওবায়দুল কাদেরের ক্ষেত্রে? এনিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তিনি যখন কাউকে বিদায় দেন তখন তিনি তার ব্যাপারে প্রশংসাই করেন। এর আগে যখন সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থেকে বিদায় দেওয়া হলো এবং ওবায়দুল কাদেরকে সাধারণ সম্পাদক করা হলো তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৈয়দ আশরাফের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছিলেন। তিনি সৈয়দ আশরাফের সততা, নিষ্ঠা এবং কঠিন সময়ে রুখে দাঁড়ানোর সাহসের তীব্র সাহসের প্রশংসা করেছিলেন। তারপরে কাউন্সিলে দেখা গেলো যে, সৈয়দ আশরাফ আর সাধারণ সম্পাদক নেই, ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক হয়েছে। আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনের একমাস আগে ওবায়দুল কাদেরের সম্পর্কে এই মন্তব্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী কি তেমন একটি বার্তা দিলেন? ওবায়দুল কাদেরকে কি এর মাধ্যমে তিনি বুঝিয়ে দিলেন যে, তার দায়িত্ব আপাতত শেষ হয়ে গেছে এবং পরবর্তী সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব তুলে দিতে হবে? নাকি এই বার্তার মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদেরের প্রতি পূর্ণ আস্থা ব্যক্ত করলেন। কারণ, কাউন্সিলের আগে ওবায়দুল কাদেরকে তিনি যেভাবে এবং যে মাত্রায় প্রশংসা করলেন তাতে এটা মনে হতে পারে যে এই মুহূর্তে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদেরের কোনো বিকল্প নেই।

শেখ হাসিনা কোন বার্তা দিলেন সেটি এখনো দুর্বোধ্য। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্রমশ দুর্বোধ্য হয়ে পড়ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা এবং প্রজ্ঞা এমন মাত্রায় চলে গেছে যে, তিনি যা চিন্তা করেন তার চেয়ে যোজন-যোজন পিছিয়ে থাকে তার দল এবং অন্যান্য রাজনৈতিক মিত্ররা। তিনি কোন সংকটে কি কৌশল অবলম্বন করবেন, সেটিও এখনো কেউ বুঝতে পারে না। এই কারণেই রাজনীতি অনন্য হয়ে উঠেছেন। ওবায়দুল কাদেরের এই ঘটনার মধ্য দিয়ে তার একটি প্রমাণ হলো। আওয়ামী লীগের কাউন্সিল উপলক্ষে এখন আওয়ামী লীগের যেমন জেলা পর্যায়ের সম্মেলন হচ্ছে ঠিক তেমনি আওয়ামী লীগের অঙ্গ সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এইসব সম্মেলনে তিনি সম্পূর্ণ ভিন্নমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। জেলা পর্যায়ের সম্মেলন গুলোতে আগের কমিটির বহাল রাখার প্রবণতা লক্ষণীয়। আবার অঙ্গ ও সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোতে দেন তিনি চমক দেওয়া কমিটি করছেন। কাজেই, তার কমিটি গঠনের প্রবণতাটাও যে কেউ বুঝবে তার উপায় নাই। সাম্প্রতিক সময়ে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ এবং মহিলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির মধ্য দিয়ে তিনি সবাইকে চমকে দিয়েছেন। ওবায়দুল কাদেরের সম্পর্কে এই প্রশংসা বাক্যের অর্থ কি? তা বুঝতে গেলে আমাদের কাউন্সিল পর্যন্তই অপেক্ষা করতে হবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭