ইনসাইড পলিটিক্স

বেগম জিয়া কি বিএনপিকে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিবেন?


প্রকাশ: 27/11/2022


Thumbnail

বিএনপি এখন সরকারবিরোধী আন্দোলন করছে। আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ নিয়ে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। এই উত্তেজনার মধ্যেই বিএনপি ঘোষণা করেছে, তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না। ১০ ডিসেম্বর ঢাকার মহাসমাবেশ থেকে একদফা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে, এমন কথাও বলা হচ্ছে। এই সময় সরকারকে চূড়ান্ত আল্টিমেটাম দিয়ে সরকার পতনের লক্ষ্যে চূড়ান্ত আন্দোলন করবে বিএনপি, এরকম কথা বিএনপির নেতারাই বলছেন। কিন্তু বিএনপির একদফা আন্দোলন বা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনের আগুনে জল ঢালতে যাচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া, এমন গুঞ্জন বিএনপির মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা আশঙ্কা করছেন, ১০ ডিসেম্বরের আগে বা পরে সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনের যেকোনো এক পর্যায়ে বেগম খালেদা জিয়া গণমাধ্যমে আসতে পারেন এবং গণমাধ্যমে এসে বিএনপির নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিতে পারেন। সরকারের সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের এ নিয়ে দরকষাকষি হচ্ছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে বিএনপির কোনো নেতাই এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক এবং প্রকাশ্য বক্তব্য দিতে রাজি নন।

বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে চায় তার পরিবার। এজন্য সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক আবেদন করা হয়েছে। এই আবেদনের ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয় থেকে সুস্পষ্ট মতামত দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হচ্ছে যে, বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার জন্য আবেদন করতে গেলে তাকে আগে কারাগারে যেতে হবে এবং কারাগারে যেয়ে তাকে নতুন করে আবেদন করতে হবে। ফৌজদারি কার্যবিধি ৪০১ ধারা অনুযায়ী তাকে যে জামিন দেওয়া হয়েছে সেই জামিন পরিত্যক্ত বা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত নতুন কোনো আবেদন বিবেচ্য হবে না বলেই আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যেই বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে বৈঠকের পর বৈঠক করছেন। বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা সরকারের কাছে বলেছেন যে, তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার বিকল্প নেই। আগের চেয়ে সরকার এখন এ ব্যাপারে নমনীয়। তবে সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে বাইরে পাঠানোর আগে তার কাছ থেকে সুস্পষ্ট একটি বার্তা চাইছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেন বিএনপি অংশগ্রহণ করে, সে ব্যাপারে বেগম খালেদা জিয়ার যেন দলকে নির্দেশনা দেন। এরকম একটি অনুরোধ আছে সরকারের পক্ষ থেকে। অবশ্য এই অনুরোধে ব্যাপারে এখন পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়ার আনুষ্ঠানিক সম্মতি পাওয়া যায়নি।

তবে বিভিন্ন সূত্র মনে করছে, শেষ পর্যন্ত হয়তো বেগম খালেদা জিয়া এরকম একটি শর্তে রাজি হবেন। তার পরিবার এখন এ ব্যাপারে অনেকটাই নমনীয় হয়েছেন। এখন পর্যন্ত বিএনপিতে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াই। নেতাকর্মীদের কাছ থেকে ২০১৮ সাল থেকে তিনি দূরে থাকলেও নেতাকর্মীদের সবচেয়ে বিশ্বস্ত, আস্থাভাজন এবং জনপ্রিয় নেতা হিসেবে বেগম খালেদা জিয়া বিবেচিত। যদিও দল চালাচ্ছেন এখন তারেক জিয়া। কিন্তু তারপরও তারেক জিয়ার প্রতি নেতাকর্মীদের আস্থার অভাব লক্ষ্য করা যায় এবং তারেক জিয়া জিয়া দলের মধ্যেই বেগম খালেদা জিয়ার মতো জনপ্রিয় নন। জনপ্রিয়তায় তারেক জিয়া বেগম খালেদা জিয়াকে অতিক্রান্ত করতে পারেননি বরং ধারেকাছেও যেতে পারেনি বলেই বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা মনে করেন। এরকম পরিস্থিতিতে বেগম খালেদা জিয়া দলের নেতাকর্মীদেরকে যে নির্দেশনা দিবেন সেটি শিরোধার্য হবে বলে অনেকেই মনে করছেন। আর এই প্রেক্ষিতেই সরকারের একটি অংশ বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করছেন এবং তারা বলছেন যে, বেগম জিয়া যদি বিদেশ যেতে চান তাহলে দলকে এরকম একটি নির্দেশনা দিতে হবে। এরকম একটি নির্দেশনার ব্যাপারে প্রথমদিকে বেগম জিয়ার পরিবারের কিছুটা আপত্তি ছিল। কিন্তু এখন পরিবারের সদস্যরা ইতিবাচক হয়েছেন। নির্বাচনের আগে আগে বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে তিনি একটি আহ্বান জানাতে পারেন যে আহ্বানে আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপি যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং ২০১৮ সালের মতই দলীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে। সেই বার্তাটি দিতে পারেন। এরকম একটি বার্তা দিলে বিএনপির আন্দোলনে একটা নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি হবে এবং সেক্ষেত্রে বিএনপি কিভাবে নির্বাচন থেকে দূরে থাকবে, সেটিই হলো একটি বড় বিষয়। তবে সরকারের সূত্রগুলো বলছে যে, বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি আগামী নির্বাচনের আগে বিবেচিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭