ইনসাইড বাংলাদেশ

কূটনীতিকদের পাল্টা চাপে রাখার কৌশলে সরকার


প্রকাশ: 27/11/2022


Thumbnail

আওয়ামী লীগ সরকার এখন কূটনৈতিক চাপের মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেন অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হয় তা নিয়ে বিভিন্ন পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকরা অবিরত কথা বলছে। বাংলাদেশের মানবাধিকার, সুশাসন ইত্যাদি নিয়েও কথাবার্তা বলা হচ্ছে। কিন্তু সরকার কূটনীতিকদের এ সমস্ত হুঁশিয়ারী বা সাবধান উচ্চারণে মোটেও আতঙ্কিত নয়, উদ্বিগ্ন নয়। কূটনীতিকদের এই সমস্ত হুমকি-ধামকিতে আওয়ামী লীগ সরকার নতজানু হবার মত কোনো অবস্থানে নেই। বরং কূটনীতিকদের পাল্টা চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে। আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, সরকার মনে করছে যে কূটনীতিকরা শিষ্টাচারবহির্ভূত কাজ করছেন এবং তাদের সীমালঙ্ঘন করছেন। গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেছেন যে, কূটনৈতিক শিষ্টাচার না মানা বিদেশী কূটনীতিকদের বিরুদ্ধে সময় হলে একশনে যাবে বাংলাদেশ। গত শনিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি আফগানিস্তান, ইরান, চিলির উদাহরণ দিয়ে বলেন, বিদেশী হস্তক্ষেপের কারণে অনেক দেশ ধ্বংস হয়ে গেছে। বিদেশীরা সবসময় নিজেদের স্বার্থে কাজ করে। উন্নত দেশগুলোতে বিদেশি কূটনীতিকদের এক পয়সা পাত্তা দেওয়া হয়না। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্য যে স্ব-প্রণোদিত নয় বরং আওয়ামী লীগ সরকারের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকদের মনোভাবই তিনি প্রকাশ করেছেন, এটি আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা বলেছেন। এর মাধ্যমে কূটনীতিকদের পাল্টা চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে সরকার।

আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেছেন যে, বাংলাদেশ এখন আগের অবস্থায় নেই। বিদেশি সাহায্যের ওপর বাংলাদেশ নির্ভর করে না। বরং বাংলাদেশ এখন আত্মমর্যাদাশীল এক দেশ হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। কাজেই, কথায় কথায় বিদেশীদের ধমক-হুমকিতে আমরা নতজানু হব না। আওয়ামী লীগ সরকার কূটনীতিকদের উপেক্ষা করার পেছনে কতগুলো যুক্তিসংগত কারণ খুঁজে পেয়েছে। এই কারণগুলোর কারণেই তারা মনে করছেন যে, পশ্চিমা কূটনীতিকরা চাপ দিলে শেষ পর্যন্ত তারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি সাধন করবে। কারণ, বাংলাদেশের অধিকাংশ পশ্চিমা কূটনীতিক মনে করে যে, আফগানিস্তানে তালেবান বিপ্লব, পাকিস্তানে জঙ্গিদের উত্থান ইত্যাদি বাস্তবতা বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থানের একটা সম্ভাবনা তৈরি করেছে। একমাত্র বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতায় থাকে তাহলে জঙ্গিবাদকে দমন করতে পারে। উগ্র মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগই কঠোরভাবে কাজ করে, অন্য কোনো রাজনৈতিক দল নয়। বরং বিএনপি-জামাত জোট যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে বাংলাদেশ আরেকটি আফগানিস্তান হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এ কারণে পশ্চিমা কূটনীতিকরা সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করলেও শেষ পর্যন্ত এই চাপ বেশি দূর এগোতে পারবে না বলে তারা মনে করছে।

দ্বিতীয়ত, পশ্চিমা কূটনীতিকরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার নির্বাচন বা গণতন্ত্র, সুশাসন ইত্যাদি নিয়ে কথা বললেও তারা শেষ পর্যন্ত জানে যে, বাংলাদেশ যদি শান্তি স্থিতিশীলতা নষ্ট হয় তাহলে সন্ত্রাসবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে এবং এর অনিবার্য পরিণতি হবে বাংলাদেশে বিদেশি যে বিনিয়োগ গুলো আছে সেই বিনিয়োগ গুলো ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। এটাই তারা চায়না। তৃতীয়ত, বাংলাদেশে যে বিপুল বাজার রয়েছে এই বাজার যদি শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা এবং স্থিতিশীলতা না থাকে তাহলে নষ্ট হয়ে যাবে। এই বাস্তবতা থেকেই পশ্চিমা দেশগুলো সরকারের ওপর এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করলেও সরকারকে উপড়ে ফেলা বা সরকারের বিকল্প খোঁজার পথে যাবে না। এটি তাদের জন্যই বুমেরাং হয়ে যেতে পারে। এ কারণেই বাংলাদেশ কূটনীতিকদের বিরুদ্ধে পাল্টা হুমকি দেওয়া শুরু করেছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭