ইনসাইড পলিটিক্স

ঘরের ছেলেরা ঘরে ফিরতে চায়: আওয়ামী লীগ নেবে কি?


প্রকাশ: 27/11/2022


Thumbnail

আগামী ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কাউন্সিলের আগে আওয়ামী লীগে গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন এরকম বেশ কয়েকজন নেতা আবার ঘরে ফিরতে চান। ঘরে ফেরার জন্য তারা বিভিন্ন আওয়ামী লীগের নেতার সঙ্গে যোগাযোগও করছেন। কিন্তু কোনো নেতাই কোনো সবুজ সংকেত তাদের দিতে পারেননি। সব নেতারাই প্রাক্তন আওয়ামী লীগারদের প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না তারা। ঘরের ছেলেরা ঘরে ফিরতে চান, আওয়ামী লীগ কি তাদের নেবে? যে সমস্ত নেতা একসময় আওয়ামী লীগের ডাকসাইটে নেতা ছিলেন কিন্তু এখন আওয়ামী লীগে ফিরতে চান তাদের মধ্যে রয়েছেন-

১. আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী: আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আসার পর মন্ত্রী হয়েছিলেন। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণে তাকে মন্ত্রিত্ব থেকে বাদ দেওয়া হয়। এরপর দলের প্রাথমিক সদস্যপদও তিনি হারান। এর আগে তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। তিনি কঠিন সময় বিশেষ এক-এগারোর সময় আওয়ামী লীগ সভাপতির পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। কিন্তু ধর্মবিরোধী স্পর্শকাতর বিষয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিলো। আবদুল লতিফ সিদ্দিকী দীর্ঘদিন কারান্তরীণ ছিলেন। এখন তিনি আবার আওয়ামী লীগের ফিরে আসতে চান। এজন্য তিনি যোগাযোগ করছেন। এখন তিনি আওয়ামী লীগের ফিরতে পারবেন কিনা, এ প্রশ্নের উত্তর নেই কারো কাছে।

২. বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী: বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী আওয়ামী লীগ ছেড়েছিলেন ১৯৯৬ সালের পর যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিল এবং তিনি আওয়ামী লীগ থেকে সরে গিয়ে নিজেই একটি রাজনৈতিক দল করেছিলেন। এই রাজনৈতিক দলটি খুব একটা দাঁড়াতে পারেনি। বরং তিনি এখন আবার আওয়ামী লীগে ফিরে আসার জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছেন। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাদের সঙ্গেও তিনি দেখা করেছেন, যোগাযোগ করছেন। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তিনি একজন আওয়ামী লীগার হয়েই মৃত্যুবরণ করতে চান, এমন কথা বিভিন্ন মহলে বলেছেন। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর ঐতিহাসিক ভূমিকা রয়েছে। একমাত্র বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধা যিনি বীর উত্তম খেতাব পেয়েছিলেন। পঁচাত্তরের পর তিনি আরেকটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতার হত্যার বিচারের দাবিতে তিনি আরেকটি ঐতিহাসিক প্রতিবাদ সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ থেকে দূরে চলে যাওয়ার পর তিনি এখন ক্লান্ত-শ্রান্ত। আওয়ামী লীগ তাকে ফিরিয়ে নেবে কি?

৩. মোস্তফা মোহসীন মন্টু: মোস্তফা মোহসীন মন্টু একসময় আওয়ামী লীগের ডাকসাইটে নেতা ছিলেন। বিশেষ করে পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ পুনর্গঠন মন্টুর ভূমিকা ছিলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ১৯৯১ সালে মোস্তফা মোহসীন মন্টু আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হন এবং তারপর তিনি দীর্ঘদিন গণফোরাম করেছেন। এখন ড. কামাল হোসেনের সঙ্গেও তার দূরত্ব তৈরি হয়েছে এবং নতুন একটি পৃথক গণফোরাম গঠন করে তিনি না আলাদা অবস্থানে রয়েছেন। সেই অবস্থান থেকে তাকে আওয়ামী লীগ নেবে কিনা, সেটি এখন একটি বড় প্রশ্ন।

৪. অধ্যাপক আবু সাইয়িদ: অধ্যাপক আবু সাইয়িদ আওয়ামী লীগের অন্যতম তাত্ত্বিক নেতা ছিলেন। ১৯৯৬ সালে তাকে তথ্য প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০০৭ সালে তিনি সংস্কারপন্থী হয়ে যান। এই সংস্কারপন্থী হওয়ার কারণেই ২০০৮ সালের নির্বাচনে তাকে মনোনয়ন দেয়নি। সেই বার মনোনয়ন না পর ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন এবং বিপুল ভোটে পরাজিত হন। গণফোরামেও তিনি টিকতে পারেননি। এখন মোস্তফা মোহসীন মন্টুর গণফোরামের তিনি আছেন। এই তাত্ত্বিক নেতাও এখন আওয়ামী লীগে ফেরার জন্য বিভিন্ন জায়গায় দেন-দরবার করছেন। শেষ পর্যন্ত তিনিও ফিরতে পারবেন কিনা, সেটিও একটু বড় প্রশ্ন।

৫. সুলতান মোহাম্মদ মনসুর: সাবেক ডাকসুর ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর শেখ হাসিনার হাতে গড়া একজন রাজনীতিবিদ যিনি ছাত্রনেতা থেকে শেখ হাসিনার অপত্যস্নেহ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছিলেন। কিন্তু এক-এগারোর সময় তিনি মাইনাস ফর্মুলার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধাচরণ করেছিলেন। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পাননি, আওয়ামী লীগ থেকে তিনি নিজেই সরে যান। কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দেননি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং ওই নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হয়ে এখন সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সংসদেও তিনি বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে কথা বলছেন। আওয়ামী লীগের অনেকেরই সমালোচনা করছেন কিন্তু শেখ হাসিনার পক্ষে তাদের অবস্থান জাতীয় সংসদে সবসময় দেখা যায়।সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আওয়ামী লীগে ফিরবেন, এমন গুঞ্জন অনেকদিন ধরেই রয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগে ফিরতে পারবেন কিনা, সে নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন রয়েছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭