রপ্তানি আয়, রেমিট্যান্স, বিদেশি বিনিয়োগ, বিভিন্ন দেশ বা সংস্থা থেকে পাওয়া ঋণ- এভাবে পাওয়া ডলার নিয়ে একটি দেশের রিজার্ভ তৈরি হয়। আবার আমদানি, ঋণের সুদ বা কিস্তি, বিদেশি কর্মীদের বেতন-ভাতা, পর্যটক বা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ইত্যাদি খাতে আবার বিদেশি মুদ্রা চলে যায়। মূলত এভাবেই একটি দেশের রিজার্ভের কমে-বাড়ে। মহামারি করোনাভাইরাস, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, স্যাংশন, বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেল, গম ইত্যাদির মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদির প্রভাব পড়েছে সারা বিশ্বে। চীন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলোও সঙ্কটে পড়েছে। আর এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। তবে বাংলাদেশের জন্য এটি মোটেও উদ্বেগজনক নয়। কিন্তু এই সঙ্কটকে ত্বরান্বিত করতে প্রতিনিয়ত বিভ্রান্তি ও গুজব ছড়াচ্ছে একটি মহল।
বাংলাদেশে ২০২১ সালের অগাস্ট মাসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিলো প্রায় ৪৮ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, তাদের হিসাবের মোট গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ ৩৪ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার। যদিও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলছে, বাংলাদেশের বর্তমান রিজার্ভ প্রায় ২৬ বিলিয়ন ডলার, যা নেট রিজার্ভ। এখানে এসে প্রশ্ন ওঠেছে যে, রিজার্ভ থেকে এই ৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার আসলে কোথায়? এই রিজার্ভ কি আছে নাকি নেই?
কিন্তু উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে একটি মহল এটি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। মূলত, এই ৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের সবটাই আছে। প্রথমে দেখে নেই যে এই ডলারগুলো কোথায় আছে। এই ৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার যেখান আছে তা হলো- রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) ৭ বিলিয়ন ডলার, গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ডের ২০০ মিলিয়ন ডলার, দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের ৩৮৫ মিলিয়ন ডলার, গ্যারান্টিসহ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের নেওয়া ঋণের ৪৮০ মিলিয়ন ডলার, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইটিএফসি) কাছে জমা থাকা অর্থ, শ্রীলঙ্কাকে দেওয়া ২০০ মিলিয়ন ডলারের কারেন্সি সোয়াপ, ৫২৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন ইউরো ঋণের বিপরীতে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষকে দেওয়া ৭৭ মিলিয়ন ইউরো।
যে খাতগুলোতে বাংলাদেশের রিজার্ভের এই ৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার দেয়া হয়েছে সেগুলো মূলত রিজার্ভেরই অংশ। যেমন- শ্রীলঙ্কা, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে দেওয়া ঋণের অর্থ ফেরত পাওয়া, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইটিএফসি) কাছে জমা থাকা অর্থ ইত্যাদি যেগুলো মূলত খরচ হয়েছে বলে প্রচারণা করা হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই অর্থগুলো খরচ করা হয়নি বরং বাংলাদেশের রিজার্ভেরই অংশ। যেমন- সম্প্রতি ব্যাংকে তারল্য সংকটের গুজব ছড়িয়ে সঙ্কটকে ত্বরান্বিত করার অপচেষ্টা, ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যাবে ইত্যাদি গুজব ছড়িয়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমিয়ে এনে রিজার্ভের ওপর প্রকৃতপক্ষে প্রভাব ফেলতেই বিএনপি-জামায়াতসহ একটি কুচক্রী মহল রিজার্ভ কমে যাচ্ছে কিংবা খরচ হয়ে গেছে বলে বিভ্রান্তি ও গুজব ছড়াচ্ছে।