ইনসাইড বাংলাদেশ

মানবাধিকার ইস্যুতে নতুন ষড়যন্ত্র: সরকার উপেক্ষা করছে?


প্রকাশ: 29/11/2022


Thumbnail

গত বছর ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ব্যাপারে আচমকা এক নিষেধাজ্ঞা আসে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাস কেউ কিছু জানতো না। আকস্মিকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করে, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এলিট ফোর্স র‍্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা এবং র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এই ঘটনায় গোটা দেশ স্তম্ভিত হয়ে যায়। কিভাবে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলো এবং কেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং দূতাবাস এ ব্যাপারে কিছুই জানলো না, সে নিয়ে নানামুখী আলাপ-আলোচনা এবং আত্মসমালোচনা হতে থাকে। তারপর বাংলাদেশের ওপর মানবাধিকার দিয়ে উপর্যুপরি চাপ আসতে থাকে। বাংলাদেশে গুম, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ইত্যাদি ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিমা দেশগুলো কথা বলতে থাকে।

বাংলাদেশ যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলো তখন থেকেই কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন যাদের মধ্যে অন্যতম হলো হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, যারা যুদ্ধাপরাধীদের কাছ থেকে নানা রকম সুযোগ-সুবিধার বিনিময়ে তাদের পক্ষ অবলম্বন করা শুরু করেছিলো। সেখান থেকে বাংলাদেশের মানবাধিকার ইস্যু নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো মাতামাতি করছে। আর সর্বশেষ ২০১৯ সাল থেকে গুম এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে বাংলাদেশের মানবাধিকার ইস্যু হিসেবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো যে, এই বিষয়গুলোকে মোকাবেলা করার জন্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের যে কৌশল অবলম্বন করা উচিত ছিলো, যেভাবে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরার দরকার ছিলো সেটি আমরা করতে পারেনি। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন একটি অকার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিণত হয়েছিলো গত কয়েক বছরে। সম্প্রতি মানবাধিকার কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে ২২ সেপ্টেম্বর। এখন পর্যন্ত সরকার নতুন মানবাধিকার কমিশন গঠন করেনি। দীর্ঘ দুই মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পরও মানবাধিকার কমিশন গঠন না হওয়াটা একটি বিস্ময়কর ঘটনা। অনেকে মনে করছেন যে, যখন বাংলাদেশের মানবাধিকার ইস্যু নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপে রয়েছে সেই সময়ে কমিশন দুই মাস ধরে গঠন না করাটা এক ধরনের পাগলামি ছাড়া আর কিছুই নয়। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এই মানবাধিকার ইস্যু নিয়ে যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে সেটিকেই উপেক্ষা করছে। কিন্তু উপেক্ষার কৌশলে নয় বরং এটিকে মোকাবেলা করার কৌশলেই সরকারের কাজ করা উচিত ছিলো বলে অনেকে মনে করছেন।

আগামী ১০ ডিসেম্বর আবার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস এবং এই দিবসে বাংলাদেশে কি হবে, তা নিয়েও চলছে নানামুখী আলাপ-আলোচনা। কোনো কোনো মহল বলছে, এবার ১০ ডিসেম্বরেও বাংলাদেশের ওপর একটি নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজবে সয়লাব হয়ে গেছে। বাংলাদেশে এখন দেখা যাচ্ছে, অনেক বিষয় নিয়ে প্রথমে গুজব ছড়ানো হয়, তারপরে এই গুজবটাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়। এই গুজব কারা ছড়াচ্ছে এবং এক ধরনের ভীতির সংস্কৃতি তৈরি করা হচ্ছে কেন, এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। ১০ ডিসেম্বর বিএনপি ঢাকায় মহাসমাবেশ ডেকেছে এবং ওইদিনই মানবাধিকার দিবস। ওই দিন বাংলাদেশের কতিপয় ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের ওপর আবার নিষেধাজ্ঞা হতে পারে, এরকম গুঞ্জন ছড়িয়ে আসলে সরকারকে দুর্বল করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন মহল মনে করে। কিন্তু মানবাধিকার ইস্যুটির ব্যাপারে সরকার কেন অপেক্ষা করছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কি করছে, সেটি এখন বড় প্রশ্ন। মিশেল ব্যাচেলেটের সফরের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছিলো, তারা মানবাধিকার ইস্যুটিকে গুরুত্ব দিবে, আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করবে এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় করে যেন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সঠিক তথ্য তুলে ধরা হয় সেটি নিশ্চিত করবে। কিন্তু সেই কাজটিও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত করতে পারেনি। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে যে, মানবাধিকার নিয়ে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার চলছে সেই অপপ্রচারের পাল্টা জবাব দেওয়ার মতো কোনো কৌশল সরকার এখন পর্যন্ত গ্রহণ করেনি। সরকার যদি এই ইস্যুটিকে উপেক্ষা করে, তাহলে তার জন্য সরকারকে বড় ধরনের মাশুল দিতে হবে বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭