প্রকাশ: 01/12/2022
আমদানি কমার
পরও বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ কমে ৩৪ বিলিয়ন (৩ হাজার ৪০০ কোটি)
ডলারের নিচে নেমে এসেছে। গতকাল বুধবার রিজার্ভ থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংকের কাছে
৭ কোটি ১০ লাখ ডলার বিক্রির ফলে দিন শেষে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর এই সূচক
৩৩ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন (৩ হাজার ৩৮৬ কোটি) ডলারে দাঁড়িয়েছে। এ রিজার্ভ দিয়ে চার মাসের
(প্রতি মাসে ৮ বিলিয়ন হিসাবে) আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে।
এর আগে মঙ্গলবার
১০ কোটি ৯০ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়েছিল। সোমবার বিক্রি করা হয় ১৫ কোটি ২০ লাখ ডলার।
সব মিলিয়ে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) রিজার্ভ থেকে ৬০৫ কোটি
(৬ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করা হয়েছে। বাজার স্বাভাবিক রাখতে রিজার্ভ থেকে
অব্যাহতভাবে ডলার বিক্রির ফলেই রিজার্ভ কমছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা
ও অর্থনীতিবিদরা।
এছাড়া অর্থনীতির
অন্যতম সূচক রেমিট্যান্সের গতি নেতিবাচক ধারায় এসেছে। চলতি অর্থবছরের শুরুর মাস জুলাই
ও এর পরের মাস আগস্টে দুই বিলিয়ন ডলার করে রেমিট্যান্স আসলেও পরের দুই মাস দেড় বিলিয়ন
ডলারের ঘরে নেমে আসে রেমিট্যান্স। চলতি মাসে প্রতিদিন গড়ে ৫ দশমিক ৮ কোটি ডলার করে
রেমিট্যান্স এসেছে। যদিও বৈধপথে রেমিট্যান্স বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
ও সরকার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক
সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের (নভেম্বর) ১ তারিখ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মজুত
ছিল ৩৫ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার। গত ৭ নভেম্বর আরও কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন
ডলারে। এরপর নভেম্বরের ৭ তারিখে রিজার্ভ থেকে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১৩৫
কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়। পাশাপাশি আমদানি দায় মেটাতে ১৩ কোটি ১০ লাখ ডলার বিক্রি করা
হয় রিজার্ভ থেকে। ফলে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে প্রায় ৩৪ দশমিক ২৮ বিলিয়নের
নেমে আসে।
গত ৯ নভেম্বর
রিজার্ভ ছিল ৩৪ দশমিক ২৫ বিলিয়ন, ১৪ নভেম্বর বেড়ে দাঁড়ায় ৩৪ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলারে।
এরপর ১৫ নভেম্বর রিজার্ভ থেকে ১১৫ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করায় তা নেমে আসে ৩৪ দশমিক ৩৩
বিলিয়ন ডলারে। ১৬ নভেম্বর ৬৯ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হলে রিজার্ভ দাঁড়ায় ৩৪ দশমিক ২৪
বিলিয়ন ডলার। পরে ১৭ নভেম্বর আবারও বেড়ে ৩৪ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার হয়।
এরপর তা কমে
২১ নভেম্বর রিজার্ভ দাঁড়ায় ৩৪ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলারে। গত ২২ নভেম্বর ৩৫ মিলিয়ন ডলার
বিক্রি করায় রিজার্ভ দাঁড়ায় ৩৪ দশমিক শূন্য ৯ বিলিয়ন ডলারে। সবশেষ ২৩ নভেম্বর রিজার্ভ
মজুত আরও কমে দাঁড়ায় ৩৪ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন ডলারে। এরপর বুধবার (৩০ নভেম্বর) সরকারি
ক্রয়বাবদ ৭৭ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয় রিজার্ভ থেকে। এতে বৈদেশিক মজুত আরও কমে তা
দাঁড়িয়েছে ৩৩ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলারে।
আন্তর্জাতিক
মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলে আসছে, রিজার্ভ থেকে অর্থ নিয়ে আলাদাভাবে বিভিন্ন তহবিল গঠন
ও সেখান থেকে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। আবার সেসব অর্থ রিজার্ভে দেখানো হচ্ছে। এতে রিজার্ভ বেশি
দেখানো হচ্ছে বাংলাদেশর, যা বিভ্রান্তি তৈরি করছে। রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ)
সরবরাহ করা ৭ বিলিয়ন এবং শ্রীলঙ্কাকে দেওয়া ২০ কোটি ডলার দেশের রিজার্ভে দেখাচ্ছে।
তাছাড়া গ্রিন
ট্রান্সফরমেশন ফান্ড (জিটিএফ) ২০ কোটি, লং টার্ম ফিন্যান্সিং ফ্যাসিলিটি (এলটিএফএফ)
তহবিলে ৩ কোটি ৮৫ লাখ, সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিমানকে ৪ কোটি ৮০ লাখ এবং
ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইটিএফসি) আমানত রিজার্ভে দেখাচ্ছে।
আইএমএফ’র মতে, সবমিলিয়ে বর্তমানে রিজার্ভে যে অর্থ দেখানো হচ্ছে, সেখান থেকে ৮ দশমিক
৪০ বিলিয়ন ডলার বাদ যাবে। সে হিসাবে এখন দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়ায় ২৫ দশমিক
৪৬ বিলিয়ন ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের
এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রতিনিয়ত ওঠা-নামা করে।
এখান থেকে সরকারি ক্রয়ে ডলার ছাড় করা হয়। আবার প্রবাসী বাংলাদেশিরা প্রতিনিয়ত রেমিট্যান্স
পাঠাচ্ছেন। এক্ষেত্রে বলা যায় প্রতিদিনই রিজার্ভ কম-বেশি হয়। তবে আমাদের যে রিজার্ভ
পজিশন সেটিতে ভয়ের কিছু নেই।
অন্যদিকে বৈধ
উপায়ে ওয়েজ আর্নার্স রেমিট্যান্সের বিপরীতে আড়াই শতাংশ নগদ প্রণোদনা, রেমিট্যান্স
প্রেরণকারীদের সিআইপি সম্মাননা, অনাবাসি বাংলাদেশিদের জন্য বিনিয়োগ ও গৃহায়ণ অর্থায়ন
সুবিধা দেওয়াসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। তাছাড়া রিজার্ভ ও রেমিট্যান্স বাড়াতে হুন্ডি
প্রতিরোধের নতুন কৌশলে নিয়েছে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স
ইউনিট বা বিএফআইইউ। হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোয় জড়িতের অভিযোগে ২৩০ জন বেনিফিশিয়ারির
হিসাব সাময়িকভাবে উত্তোলন স্থগিত করে আর্থিক খাতের এ সংস্থাটি। পরে বৈধপথের প্রতিশ্রুতিতে
এসব হিসাব পুনরায় খুলে দেওয়ার কথা জানানো হয়।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭