বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কানদার এবার বিএনপি নেতাদের হুঁশিয়ার করে দিলেন। বিএনপি নেতাদেরকে বললেন, ‘বেগম জিয়াকে নিয়ে খেলবেন না। আপনারা রাজনীতি করছেন করুন, আপনারা আন্দোলন করছেন করুন। সেই আন্দোলনে বা রাজনীতিতে আমার বোনকে জড়াবেন না।’ স্পষ্টভাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ তিনজন নেতাকে সাফ এই বার্তা জানিয়ে দেন তিনি। শামীম এস্কানদার গতরাতে বিএনপির তিন নেতার সাথে টেলিফোনে আলাপ করেন।
জানা গেছে, বিএনপির একটি পরিকল্পনা আছে যে, ১০ ডিসেম্বর বিএনপির একটি ঝটিকা মিছিল গুলশানে যাবে এবং সেখানে ফিরোজা থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে বের করে নিয়ে আসবে। এই মিছিলে বিভিন্ন কর্মীরা যুক্ত হবেন। আস্তে আস্তে গাড়ীকে বিএনপির কর্মীরা ঘিরে রাখবেন এবং এই গাড়িকে নিয়ে যাওয়া হবে পল্টনে। সেখানে বেগম খালেদা জিয়ার জন্য সংরক্ষিত চেয়ারে তাকে বসানো হবে। তিনি বক্তৃতা দিন না দিন সেখানে বসে থাকবেন। এই বিষয়টি বিএনপির একাধিক পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। আর এটি জানাজানি হবার পর শামীম এস্কানদার বিএনপি নেতাদের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ করেন। ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, যদি গুলশান থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে বের করে আনার চেষ্টা করা হয় কিংবা যদি তাকে নয়াপল্টনের জনসভায় উপস্থিত করা হয় তবে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। উল্লেখ্য যে, ২০২০ সালের ২৫ মার্চ দু’টি শর্তে বেগম খালেদা জিয়া জামিনে মুক্তিলাভ করেন। এটি প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী আদেশে ফৌজদারির ৪০১ ধারা প্রয়োগ করে বেগম জিয়াকে জামিন দেয়া হয়। আর এই জামিনে শর্ত দুটি ছিলো উনি বাসায় থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করবেন এবং অন্য কোনো তৎপরতায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। দফায় দফায় এই জামিনের মেয়াদ৬ মাস অন্তর অন্তর বাড়ানো হচ্ছে। এখন বেগম জিয়ার রাজনীতি করার কোনো আইনগত অধিকার নেই। এরকম পরিস্থিতিতে বেগম জিয়াকে ১০ ডিসেম্বরের কর্মসূচিতে ট্রাম্প কার্ড হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে বিএনপি।
বিএনপির কোনো কোনো নেতা মনে করছেন যে, কর্মীরা যদি ঝটিকা মিছিল নিয়ে ফিরোজায় যায় এবং বেগম খালেদা জিয়াকে বের করে নিয়ে আসা হয় তাহলে পরে আন্দোলনের মোড় ঘুরে যাবে। কিন্তু শামীম এস্কানদার সাফ জানিয়ে দিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে কোনরকম পরিকল্পনা না করার জন্য। তার মতে, বেগম জিয়া শারীরিকভাবে অসুস্থ, তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন। বেগম জিয়া এখনও পর্যন্ত ভালোমত হাটাচলা করতে পারেন না, ঠিকমতো কথাও বলতে পারেন না। তাছাড়া এরকম হটকারি সিদ্ধান্ত বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে প্রভাব ফেলতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত সরকার কঠোর অবস্থানে যেতে পারে। একারণেই শামীম এস্কানদার বিএনপি নেতাদের কঠোর বার্তা দিয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। উল্লখ্য যে, বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের জন্য শামীম এস্কানদার নিজেই ছোটাছুটি করেছিলেন। তিনি এবং তার বোন সেলিনা ইসলাম দুইজন গণভবনে গিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তাকে অনুরোধ করেন বেগম খালেদা জিয়াকে অন্তত বাসায় থেকে চিকিৎসা নেয়ার জন্য। তাদের এই আবেদনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুকম্পা দেখান এবং তাকে নির্বাহী আদেশে জামিন দেন। এখন যদি জামিনের শর্ত ভঙ্গ করা হয় তবে আপনা-আপনি বেগম জিয়ার জামিনের আবেদন বাতিল হইয়ে যাবে বলে আইণ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে। আর এই বিষয়টি শামীম এস্কানদার বিএনপি নেতাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তাদের আন্দোলনের জন্য যদি বেগম জিয়ার কোনো ক্ষতি হয় তবে তাদেরকে ছাড়া হবেনা।