ইনসাইড ইকোনমি

ঋণ নিয়ে ফের জানুয়ারিতে আইএমএফের সঙ্গে বৈঠক


প্রকাশ: 02/12/2022


Thumbnail

বাংলাদেশকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে প্রাথমিকভাবে কর্মকর্তা পর্যায়ে সমঝোতায় পৌঁছানোর পর এখন শর্তসহ বাকি খুঁটিনাটি চূড়ান্ত করতে আগামী জানুয়ারিতে ফের বৈঠক করতে চায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহিবল-আইএমএফ ঋণ।

এবারের বাংলাদেশ সফরে আইএমএফ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন সংস্থার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আন্তোনেত্তে মনসিও সাইয়া। বৈঠকের সম্ভাব্য তারিখ জানিয়ে আইএমএফ ঢাকা কার্যালয় থেকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংককে।

১৪ থেকে ১৮ জানুয়ারি চার দিনের ওই সফরের সম্ভাব্য সূচি নিয়ে আলোচনা চলছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইএমএফ এর মধ্যে। উচ্চ পর্যায়ের এ সফরের প্রটোকল নিশ্চিত রতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছে আইএমএফ এর পক্ষ থেকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, “ঋণ সম্পর্কিত বিষয়ে ফলোআপ করতে জানুয়ারির ১৪ তারিখে আইএমএফ প্রতিনিধি দল বৈঠকের আগ্রহ জানিয়েছে।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরিকল্পনার কথা ওই চিঠিতে জানিয়েছে আইএমএফ।

কোভিড মহামারীর ধাক্কা সামলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলেও ইউক্রেইন যুদ্ধের জেরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বড় ধরনের চাপে পড়েছে; ডলারের বিপরীতে মান হারিয়ে চলছে টাকা, মূল্যস্ফীতিও পৌঁছেছে উদ্বেগজনক পর্যায়ে।

রিজার্ভ ধরে রাখতে আমদানিতে লাগাম টানায় অর্থনীতি সঙ্কুচিত হয়েছে; জ্বালানি সংকটের মুখে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উৎপাদন। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের মত দীর্ঘমেয়াদী ঝুঁকিও বাংলাদেশের সামনে রয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতেই গত জুলাই মাসে আইএমএফ এর কাছে ঋণ চেয়েছিল বাংলাদেশ। আইএমএফ  এর এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল অক্টোবরের শেষে ঢাকায় আসেন। দুই সপ্তাহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তর, নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং অংশীজনদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকের পর ঋণের বিষয়ে প্রাথমিক সমঝোতার কথা জানানো হয় সরকারের তরফ থেকে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত ৯ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আইএমএফ সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে রাজি। এই অর্থ বাংলাদেশ পাবে সাত কিস্তিতে। সব ঠিক থাকলে ফেব্রুয়ারিতেই প্রথম কিস্তির ৩৫২ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন ডলার তারা ছাড়তে পারে।

ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী শেষ কিস্তি বাংলাদেশ হাতে পাবে ২০২৬ সালে। সুদের হার হবে ২.২ শতাংশ।

আইএমএফ কর্মকর্তা রাহুল আনন্দ বলেছিলেন, তারা একটি প্রতিবেদন তৈরি করে আইএমএফের নির্বাহী পরিষদে উপস্থাপন করবেন। সকল আনুষ্ঠানিকতা সেরে দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে আইএমএফ বোর্ড এ ঋণ প্রস্তাবে চূড়ান্ত অনুমোদন দিতে পারে।

৪২ মাসের চুক্তিতে সরকারের নেওয়া ‘অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচিতে’ সহায়তা হিসেবে আইএমএফের এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি ( ইসিএফ) এবং এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি থেকে ৩২০ কোটি ডলার ঋণ পাবে বাংলাদেশ। আর রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনিবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) আওতায় পাবে বাকি ১৩০ কোটি ডলার।

এ ঋণের অর্থ দিয়ে যেসব প্রকল্প বাংলাদেশ সরকার হাতে নেবে, তার উদ্দেশ্য হবে সামষ্টিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখা এবং দুর্দশায় পড়া জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিয়ে দৃঢ়, অর্ন্তভুক্তিমূলক এবং পরিবেশবান্ধব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এগিয়ে নেওয়া। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সামষ্টিক অর্থনীতির ঝুঁকি কমিয়ে আনতেও এই ঋণের অর্থ ব্যয় করা হবে।

তবে ঋণের শর্ত নিয়ে কোনো পক্ষই তখন স্পষ্ট কিছু জানায়নি।সাংবাদিকদের প্রশ্নে রাহুল আনন্দ বলেছিলেন, আইএমএফ এর ঋণ পেলে অন্যান্য বৈশ্বিক উৎস থেকে ঋণ পাওয়া বাংলাদেশের জন্য সহজ হবে।

তার পরামর্শ ছিল, প্রবৃদ্ধির চাকাকে আরও গতিশীল করার জন্য কাঠামোগত সমস্যাগুলোতে নজর দিতে হবে, সেই সঙ্গে বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণ, উৎপাদন সুসংহত করা এবং জলবায়ু সহিষ্ণুতা গড়ে তুলতে হবে।

বিদেশি মুদ্রার সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে রাহুল আনন্দ বলেছিলেন, মহামারীর সময়ে শুধু ব্যাংকিং চ্যানেল খোলা থাকায় বাংলাদেশে রেমিটেন্স বেশি এসেছিল। সেই গতি ধরে রাখতে হলে সরকারি উদ্যোগ বাড়াতে হবে।

রেমিটেন্স বাড়াতে সরকারও ইতোমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে, যার মধ্যে হুন্ডি বন্ধের কিছু উদ্যোগও রয়েছে। অবৈধ ‘হুন্ডি’র মাধ্যমে অর্থ লেনদেনে জড়িত থাকার অভিযোগে মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবার কয়েকশ এজেন্টের হিসাব সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।

পাশাপাশি মোবাইল হিসাব বিদেশে বসে পরিচালনা ও মোবাইলেই সরাসরি রেমিটেন্স পাঠানোর সুযোগ চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আইএমএফ প্রতিনিধি দলের ওই সফরের সময় দেশে আর্থিক খাতের সংস্কারের বিষয়টি বিভিন্ন অঙ্গনে আলোচনায় গুরুত্ব পায়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংস্কার, আইন বাস্তবায়ন ও ডিজিটালাইজেশন, ব্যাংক খাতেরর সংস্কার ও খেলাপি ঋণ এবং সরকারের বিভিন্ন খাতের ভর্তুকির বিষয়গুলো সেই আলোচনায় ঘুরে ফিরে আসে।

বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যেভাবে হিসাব করা হয়, সেই পদ্ধতি নিয়েও তখন কথা হয়।

রাহুল আনন্দ ৯ নভেম্বরের সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, আইএমএফ যে কোনো দেশের রিজার্ভ হিসাবের বেলায় বিপিএম ৬ (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন) পদ্ধতি অনুসরণ করে।

এ পদ্ধতিতে রিজার্ভের প্রকৃত ব্যবহারযোগ্য তহবিলই প্রকাশ করার কথা। অন্যদিকে অর্থমন্ত্রী সেদিন তার সংবাদ সম্মেলনে রিজার্ভের হিসাবে মোট ও নিট– দুই ধরনের তথ্যই প্রকাশ করার কথা বলেছিলেন।

আর্থিক খাতের সংস্কারের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার সেদিন বলেছিলেন, “অতীতে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংসদ ও প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে দেওয়া বক্তব্যে সেই সংস্কারের বিষয়গুলো আগেই আলোচিত হয়েছে। সেগুলো একটি প্যাকেজ আকারে এক জায়গায় করা হয়েছে। সেই সংস্কারে তারা (আইএমএফ) সহায়তা করবে।”



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭